ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাহিদা নেই, ফেরত গেল ৮ ইউনিয়নের ১১ হাজার ভিজিএফ কার্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 চাহিদা নেই, ফেরত গেল ৮ ইউনিয়নের ১১ হাজার ভিজিএফ কার্ড

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ ফকিরহাট উপজেলার ৮ ইউনিয়ন পরিষদে চাহিদা না থাকায় এবার ১০ হাজার ৭১৯টি ভিজিএফ কার্ড ফেরত পাঠানো হয়েছে। দুস্থ বা অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য গত ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে খাদ্যশস্য সহায়তা বাবদ ২০ কেজি হারে (মোট ৫৮৪.৪০০ মেঃ টন চাল) ২৯ হাজার ২২০টি ভিজিএফ কার্ড এখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে স্বশাসিত ইউনিয়ন পরিষদ এ্যাডভোকেসী গ্রুপ অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট একাধিকবার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ফকিরহাটের বেতাগা ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, তৃণমূলে মানুষের অপেক্ষাকৃত স্বাবলম্ভিতা বা সচ্ছলতার কারণে ভিজিএফ কার্ডের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া তাদের সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার কাঠামোর ইউপিতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির ফলে ব্যতিক্রম এ ঘটনা ঘটছে।’ সংশ্লিষ্ট সকল ইউপি চেয়ারম্যনগণ প্রায় একই মত দেন। ফকিরহাট ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ অমিতরায় চৌধুরী বলেন, ফকিরহাট উপজেলার ৮ ইউনিয়ন হতে প্রায় ১১ হাজার ভিজিডি কার্ড ফেরত দেয়ার ঘটনা দেশের আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধির পথে এক অনন্য বাঁক। অতিদরিদ্রদের সংখ্যা হ্রাস ও তৃণমূল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা স্থাপনের সক্ষমতা আমাদের অবশ্যই আশাবাদী করছে।’ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন ‘এটি অত্যন্ত পজেটিভ এবং তৃণমূলে দিন বদলের সুফল। যা দ্রুত সময়ে এসডিজি অর্জনে সহায়ক সূচক।’ গত এক আগস্ট ফকিরহাট উপজেলায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২০ কেজি হারে ২৯ হাজার ২২০টি কার্ডের জন্য ৫৮৪.৪০০ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ লিখিতভাবে জানান যে, বরাদ্দকৃত কার্ডের সমপরিমাণ হতদরিদ্র পরিবার তাদের ইউনিয়নে বর্তমানে না থাকায় প্রকৃত দুস্থ বা অতিদরিদ্রদের মাধ্যে সচ্ছতার সঙ্গে সকল কার্ড বিতরণ করা যাচ্ছে না। যে কারণে বরাদ্দকৃত অনেক কার্ড ফেরত দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বেতাগা থেকে ১৮৫১টি, লখপুর থেকে ২৩২৯টি, পিলজংগ থেকে ৫০০টি, ফকিরহাট সদর থেকে ২৩১৮টি, বাহিরদিয়া-মানসা থেকে ১০৫৭টি, নলধা-মৌভোগ থেকে এক হাজারটি, মূলঘর থেকে ১১৬৪টি, শুভদিয়া ইউনিয়ন থেকে ৫০০টি কার্ডসহ এ উপজেলা থেকে ১০ হাজার ৭১৯টি কার্ড ফেরত গেছে। উপজেলা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে ফকিরহাট নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহানাজ পারভীন জানান, সরকার গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম, সরকারের অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম এবং কর্মসংস্থার সৃষ্টির মাধ্যমে উপজেলার দুস্থ, অতিদরিদ্র ও অসহায় জনগণের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে এবং দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফকিরহাট উপজেলার সকল ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ডধারীদের মধ্যে অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং সামাজিক মর্যাদার বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ভিজিএফ কার্ডের খাদ্যশষ্য গ্রহণ করতে আসেন না। এমতবস্থায় গত ঈদ-উল-ফিতরে বেতাগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চাহিদার অতিরিক্ত ভিজিএফ কার্ড ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এরপর ঈদ-উল-আজহার পূর্বে এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ অতিরিক্ত কার্ড ফেরত প্রদান করায় অত্র উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতার প্রতিফলন ঘটেছে। ভিজিএফ কার্ড বিতরণের শর্তাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করলে প্রায় সকল ইউনিয়নে এখন থেকে ‘ব্যতিক্রমী’ এ ঘটনা ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।
×