ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৯ জনের নামে মামলা

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগ  নেতাসহ ৯ জনের  নামে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, ৩১ আগস্ট ॥ গফরগাঁওয়ে চোর সন্দেহে রিয়াদ (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্রকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গফরগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রশিদকে (৫৫) প্রধান আসামি করে ৯ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত রিয়াদের ফুফা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে গফরগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আঃ রশিদ ছাড়াও উথুরী-ঘাগড়া টাওয়ার মোড় বাজারের ব্যবসায়ী সাঈদ (৩৭), সিরাজ (৫৫), আঃ আহাদ (৩৮), আশরাফুল (৩৫), মীর রাসেল (৩৫), মীর মনির (৩৪), কামরুল (৪৬), সোহেলকে (২৩) নামীয় এবং আরও ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে জানাজা শেষে রিয়াদের লাশ উথুরী গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। শুক্রবার সকালে উথুরী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ‘চোর’ সন্দেহে ১৪ বছরের কিশোর রিয়াদকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রশিদের নেতৃত্বে নির্মম ও পৈশাচিকভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী স্তম্ভিত। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। রিয়াদের বাবা সাইদুর রহমান শাহীন গত ১১ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী, মা মাবিয়া আক্তার বাক প্রতিবন্ধী। রিয়াদের কলেজ পড়ুয়া বোন নীলফুল নাহার শান্তা জানায়, রিয়াদেরও কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিল। সে মাঝে মধ্যে ভোর বেলায় কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত আবার ফিরে আসত। শান্তা কান্না করতে করতে বলে, এরা আমার শিশু ভাইটিকে এত নির্যাতন করে, নির্মমভাবে মেরে ফেলল। আমি এদের ফাঁসি চাই। প্রত্যক্ষদর্শী নাছিমা আক্তার (৫২), আহাদ মিয়া (৫২) ও বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী জাকির (৪০) জানান, বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে আশরাফুল ও রশিদের নেতৃত্বে ৩/৪ জন রিয়াদকে বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে ধরে উথুরী-ঘাগড়া টাওয়ার মোড় বাজারে নিয়ে যায়। বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুলের মনিহারী দোকানের ‘তালা ভাঙার চেষ্টার অপরাধে’ রশিদের দোকানের সামনে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে রিয়াদকে বেঁধে রাখে। সেখানে ১৪/১৫ জন দুই/আড়াই ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে, নির্মমভাবে নির্যাতন করে রিয়াদকে হত্যা করে। পাষ-রা প্রথমেই লোহার রড, শাবল দিয়ে পিটিয়ে রিয়াদের হাত-পা ভেঙ্গে ফেলে। পায়ের মধ্যে লোহার রড ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। রিয়াদ যখন চিৎকার করে জান ভিক্ষা চাইছিল, তখন এলাকাবাসী শিশু রিয়াদকে বাঁচাতে গেলে রামদা ও লাঠিসোটা দিয়ে রশিদ ও তার লোকজন এলাকাবাসীকে ধাওয়া দেয়। মৃত্যু পথযাত্রী শিশু রিয়াদ পানির জন্য যখন চিৎকার করে কাঁদছিল, তখন এলাকার মীর হিমেল নামে এক তরুণ জগ দিয়ে পানি নিয়ে এলে পাষণ্ডরা হিমেলকে লাঞ্ছিত করে পানির জগ কেড়ে নেয়। রিয়াদকে পানি খেতে দেয়নি। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রিয়াদের মৃত্যু হলে পাষ-রা একটি চৌকির মধ্যে তুলে নিয়ে বাজারের পাশে একটি খালি জায়গায় লাশ ফেলে রাখে। এ ব্যাপারে গফরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম খোকন বলেন, সকাল সাতটার দিকে আমাকে ঘটনা জানানো হয়। আমি জানার পরপরই ঘটনাস্থলে গ্রাম পুলিশ পাঠাই। গ্রাম পুলিশ যাওয়ার আগেই ছেলেটিকে এরা মেরে ফেলে। ঘটনার পর রিয়াদের বাড়িতে চলতে থাকে শোকের মাতম। রিয়াদের মা, বোন বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। রিয়াদের স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠছে। এদিকে ঘটনার দুদিন পরও এ কোন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, ঘটনার পরও অনেক আসামি ঘটনাস্থলে ও এলাকায় ছিল। পুলিশ তৎপর হলে এদের ধরতে পারত। ঘটনার পরপরই গফরগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টাওয়ার মোড় বাজারের ব্যবসায়ী কাজিম উদ্দিন (৫৫), রফিকুল ইসলামকে (৩০) আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। গফরগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ খান বলেন, এ মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×