ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি জরুরী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  বেশি জরুরী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ॥ কাদের

রাজন ভট্টাচার্য, সালাম মশরুর, সিলেট থেকে ॥ বিশ্বাসঘাতক নেতাকর্মীদের বিষয়ে সতর্ক থাকা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবাইকে এক হয়ে দলের পক্ষে কাজ করতে সিলেটের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট সার্কেট হাউসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়, নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা, আগামী নির্বাচনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। শুক্রবার সকালে সার্কিট হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আগের রাতের বৈঠকের বিষয়ে সরাসরি কোন কথা বলতে রাজি হননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রতিবন্ধকতা করছে না। যদি প্রতিবন্ধকতা নাই করে থাকে তাহলে সেই অপবাদ আমাদের ওপর চাপাবেন কেন?’ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে এ নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারে না তারা বিভিন্ন রকম শর্ত দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আস্থা ছিল জনগণের ওপর। তাই আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিল। এখন বিএনপি জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে চায়। বিএনপি কঠিন কোন বাধার মুখে পড়েছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের চেয়ে বেশি জরুরী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নিতে ভয় কোথায় এক্ষেত্রে শর্তেরও কোন প্রয়োজন হয় না। অন্য গণতান্ত্রিক দেশে কোন দল নির্বাচনে অংশ নিল না নিল এ নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই একথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কারণ নেই। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির ইভিএম ব্যবহার নিয়ে এত ভয় কেন। জনগণ যাকে ভোট দেয় সেই জিতবে। যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হোক না কেন, সেটা বড় বিষয় নয় নিরপেক্ষ নির্বাচনই বড় বিষয়। তিনি বলেন, ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচনের জন্য ইভিএম করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে টেম্পারিং করার অভিযোগের প্রমাণ বিশ্বের কোথাও নেই। তিনি বলেন, ভোট কারচুপি, জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখল করার জন্য বিএনপি ইভিএম চায় না। বিএনপি হেরে গেলে কারচুপি, জালিয়াতির অভিযোগ করে। আর জিতলে কোন কিছু বলে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি নির্বাচনেও ইভিএমএ তারা জয়লাভ করেছে। তাহলে ইভিএম নিয়ে এত আপত্তি কোথায়? অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, জানি এখানে সঙ্কট ছিল। তবে চারটি সিটি নির্বাচন একদিনে অনুষ্ঠিত হলেও কোথাও হতাহতের ঘটনা নেই। তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে খারাপ নির্বাচন কিভাবে বলবেন। বিএনপির রূপকল্প ২০৩০ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, রূপকল্প ঘোষণার পর দলটির নেতাদের কারও বক্তব্যে আর এ নিয়ে কথা নেই। এসব স্ট্যান্ডবাজি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভিশন ২০৪১ ঘোষণার পর এ নিয়ে দলীয় প্রধানসহ সব নেতারাই বারবার কথা বলেই যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদারের নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার বিষয়ে কোন জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনারের ভিন্নমত থাকতে পারে। এটাও গণতন্ত্রের নিয়ম। এজন্য কোন জটিলতা তৈরি হবে না। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা ২০১৮ সালে এসে ২০০১ সালের নির্বাচন চায়। মোটিভেটের নির্বাচনকালীন সরকার চায় বিএনপি। গণতন্ত্রের নিয়ম জলাঞ্জলি দিয়ে বারবার তত্ত্বাবধায়কে কেন যাব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অনেক উন্নত দেশের এখন হিংসে হয়। উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিক বিবেচনায় বাংলাদেশকে ‘ইকোনমিক টাইগার’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, বাংলাদেশ দিন দিন আরও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে ভুলের মাসুল দিচ্ছে। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করে পাস করতে চায়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকবে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া না নেয়া তাদের ব্যাপার। কোন গণতান্ত্রিক দেশে সরকার অন্য দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ বিতরণ করে না’। বিএনপি প্রয়োজন ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করার দাবি জানাচ্ছে একথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিস্থিতি বলবে সেনা মোতায়েন করার প্রয়োজন আছে কিনা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সিলেট মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
×