ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ নজরুল বাজেয়াফত কাব্যগ্রন্থ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৩১ আগস্ট ২০১৮

নিষিদ্ধ নজরুল বাজেয়াফত কাব্যগ্রন্থ

বাঙালীর মুক্তি সাধকের হাতে নয়, বিদ্বানের হাতেও নয়, বাঙালীর মুক্তি কবির হাতে। বিশ শতকের গোড়ায় যখন বাঙালী স্বদেশ মুক্তির আন্দোলনে নামে, স্বপ্ন ছিল বাঙালীর স্বাধীনতা। তবে সেই স্বাধীনতার আহ্বান রাজনৈতিক নেতা নয়, এসেছিল কবির কাছ থেকে। তিনি বিদ্রোহী কবি, সাম্যবাদের কবি, গণজাগরণের কবি, রেনেসাঁসের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালী মুসলমান সমাজে বিশ শতকের গোড়ায় মুক্তির পথ, স্বাধীনতার, পথে আগলে ছিল অনেক রকম বাধা। সেখানে জাগরণের চেয়ে পুনর্জাগরণবাদের শক্তি ছিল বেশি। তাই এই সমাজ থেকে আগত কবিকে হতে হয়েছে বজ্রশক্তিসম্পন্ন। কাজী নজরুল হলেন সঙ্কট মুক্তির সেই কবি, যার জন্য মুসলমান সমাজ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিল। এটা তো স্পষ্ট যে, কাজী নজরুল নন যে কোন কবি। নজরুল পালন করে গেছেন সমস্যা বিজড়িত একটি সমাজের সঙ্কট মুক্তির ঐতিহাসিক দায়। তার কবিতায় যে পৌরুষপূর্ণ বিদ্রোহের কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছে, তাও কোন আকস্মিক বা সঙ্গতিহীন বিচ্ছিন্ন ব্যাপার বলে এই একুশ শতকেও মনে হয় না। যুগসঞ্চিত বিপত্তির নানা রকম চাপ ভেঙ্গে যাঁকে মুক্তির গান গাইতে হয়, তাঁকে তো বিদ্রোহী কবি হতেই হয়। কিন্তু বিদ্রোহী কবি নজরুলের মূল পরিচয় নয়। জাগরণ বা মুক্তির প্রয়োজনে তিনি বিদ্রোহী। আসলে নজরুল ছিলেন জাগরণের কবি। বাঙালী মুসলমানের রেনেসাঁসের কবি। সে সময়ের দুর্বলতর মুসলিম সমাজের জাগরণের কবি হয়ে নজরুল কোথাও স্খলনের চিহ্ন তৈরি করেননি। হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি অক্ষুণœœ রাখার জন্য ছিলেন প্রাণান্তকর পরিশ্রমী সর্বার্থে। নজরুল বিশেষজ্ঞরাও এমত প্রকাশ করেন যে, সমগ্র আধুনিক বাংলা কাব্যের ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামই একমাত্র কবি যিনি সমান দক্ষতার সঙ্গে হিন্দু-মুসলমান উভয় ঐতিহ্যকে আপন কাব্যে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়েছেন। নজরুল বুঝেছিলেন দুই সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ হলে উপনিবেশ ব্রিটিশ শাসকের পতন অনিবার্য। শাসকগোষ্ঠী যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে ফায়দা নিচ্ছে, এটা নজরুল স্পষ্টভাবে তুলেও ধরেছেন। পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজকে তিনি নাড়া দিতে চেয়েছেন। যাতে তারা তাদের দুর্দিন ঘুচিয়ে নিজস্ব মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে। বাঙালী মুসলমানের জাতীয় জীবনে নজরুল ছিলেন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ যেন। নজরুল পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সপক্ষে শৃঙ্খল মুক্তির গৌরবপূর্ণ জেহাদ দেখিয়েছেন তার কবিতা, গানসহ সাহিত্যে এবং সাংবাদিকতায়। নজরুল বুঝেছিলেন, মুসলিম জাগরণের একটি গুরুতর দুর্বলতার দিক হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ ঔপনিবেশিক শাসক ব্রিটিশপন্থী। ড. আনিসুজ্জামান উল্লেখ করেছেন, ‘আধুনিক সমাজ আন্দোলনের আরেক দিকে ছিল ইংরেজ শাসনের সঙ্গে আপোসের এবং হিন্দু মুসলমানের স্বাতন্ত্র্যের ওপর গুরুত্বারোপের চেষ্টা। ...দু’-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া সকল লেখকই ইংরেজ শাসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং তাদের পক্ষপুটে প্রসারিত অধিকার লাভ করার স্বপ্ন দেখেছেন। তবে বাস্তব জীবনের সংঘাতে ইংরেজ শাসন সম্পর্কে সমালোচনার মনোভাব ধীরে ধীরে প্রবেশ করছিল। এর আকস্মিক বিস্ফোরণ দেখা যায় নজরুল ইসলামের রচনায়।’ মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতারা যখন স্বরাজ দাবি করছেন ভারতবর্ষের, নজরুল তখন স্বরাজ নয়, সরাসরি স্বাধীনতার দাবি করেন। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য নজরুল ১৮ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধচর্চা না হলেও সেনাবাহিনীতে থাকাকালে সাহিত্যচর্চা করেছেন। আর ওই সময়ে সংঘটিত রুশ বিপ্লব এবং তার ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সম্যকজ্ঞান নজরুলকে ভিন্নতর মানবে পরিণত করে। সাহসের বরাভয় কাঁধে নজরুল সৈনিক জীবনেই শুরু করেন সাহিত্যচর্চা। পরাধীনতার গ্লানি তার লেখায় উঠে আসে। দুর্মর দুর্দান্ত এক তরুণ নজরুল ২১ বছর বয়সেই কবিতা লিখে আলোড়ন তুললেন। বাংলা সাহিত্যে নজরুলই প্রথম কবি যিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক সিদ্ধি সাধনেই। মানুষকে জাগরণের মন্ত্র শোনাবার জন্য সংবাদপত্রকে বেছে নিয়েছিলেন হাতিয়ার হিসেবে। আর সে প্রয়োজনে লিখেছেন গদ্য। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য সক্রিয় সকল পথের সঙ্গে নজরুল সহযাত্রী হতে এগিয়েছেন সব সময়ই। সশস্ত্র পথে দেশের মুক্তি চেয়েছিলেন বলেই সৈনিকের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তার হয়নি। গান্ধীর চরকা কাটা এক সময় সমর্থনও করেছেন। দেশবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। নেতাজী সুভাষ বসুর প্রতি ছিল অকুণ্ঠ সমর্থন। সাম্যবাদের গণজাগরণেও নজরুলকে দেখি পথিকৃৎ হিসেবেই। নজরুল হিন্দু-মুসলমানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের স্বাধীনসত্তার বিকাশ চেয়েছিলেন। আর সে বিকাশ যে পরাধীন দেশে অসম্ভব-সে সহজ কথাটাই তিনি সবার কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন। ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার, নিপীড়ন তাকে পীড়িত করেছে বলেই, কলম ক্ষুরধার হয়ে উঠেছিল। পরিস্থিতি তাকে পথ দেখিয়েছিল রাজনৈতিক দলে যোগদান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ, জনসভায় ভাষণ এবং গান পরিবেশন। বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে নজরুল আবির্ভূত হলেন যেন ধূমকেতুর মতো। সৈনিক জীবনে শেষে ১৯২০ সালে নজরুল কলকাতায় দিয়ে এলেন। ২১ বছর বয়সী তুর্কী তরুণ দুর্দমনীয় এক যুবক। বন্ধু মুজাফফর আহমদের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ‘নবযুগ’ নামে সান্ধ্য দৈনিক। অর্থায়নে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। এর আগে নজরুল কোন পত্রিকায় কাজ করেননি। এমনকি কোন দৈনিক পত্রিকার অফিসের চৌকাঠ মাড়াননি। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই নবযুগ প্রথম সংখ্যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা পাঠকপ্রিয়তা পায়। নজরুল তার সহজাত তীক্ষè মেধা, কাব্যরুচি এবং প্রখর কাব্যজ্ঞান প্রয়োগের ফলে সাংবাদিকতা কর্মে অদ্ভূত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। নবযুগ পত্রিকায় নজরুল সরাসরি লিখলেন, ‘আমি নবযুগে যোগদান করেছি, শুধু ভারতে নয়, জগতে নবযুগ আনার জন্য।’ নজরুল কঠোরভাবে সম্পাদকীয়তে ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় অবিচার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া শুধু নয়, প্রতিকারে গণজাগরণের উল্লেখ করেন। মূলত নজরুলের লেখার জন্য নবযুগ রাজরোষে পতিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু কলম বন্ধ হয়নি। সাত মাস কাজ করার পর নজরুল নবযুগ ছেড়ে দেন। নবযুগে প্রকাশিত সম্পাদকীয় এবং প্রবন্ধ নিয়ে ১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ‘যুগবাণী’ নামে প্রবন্ধগ্রন্থ। প্রকাশের সাথে সাথেই সরকার তা বাজেয়াফত করে। ব্রিটিশ শাসকরা নজরুলের এই ‘ঔদ্ধত্য’ বা ‘সাহস’ কিংবা ‘বীরবিক্রম’ মনোভাব মেনে নিতে পারেনি। এর আগে বাজেয়াফত করা হয়েছিল নজরুল সম্পাদিত অর্ধসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’। অভিযোগ রাজদ্রোহিতামূলক রচনা লেখা ও প্রকাশ। ‘যুগবাণী’ নিষিদ্ধ করা হয় শুধু বাংলা নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যসহ সুদূর বর্মায়। ১৯৪১ সালেও বইটি সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকার হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা ও গ্রন্থ বাজেয়াফত নজরুলকে তার অবস্থান থেকে টলাতে পারেনি। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ নামে ধূমকেতুতে কবিতা ছাপার অপরাধে গ্রেফতার হন। জেলও খাটেন। আর নজরুল ক্রমশ হয়ে ওঠেন বাংলার নিপীড়িত, লাঞ্ছিত মানুষের কণ্ঠস্বর। যেন তার কণ্ঠে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাহসের পঙ্ক্তি ক্রমশ ধ্বনিত হতে থাকে। যুগবাণীর কাছাকাছি সময় প্রকাশিত হয়েছিল ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য গ্রন্থটি। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তা বাজেয়াফত করা হয়নি। যদিও সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে প্রচার ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এক ধরনের বাধা দিয়েছিল পুলিশ। বিদ্রোহী নজরুলের আরও গ্রন্থ নিষিদ্ধ করা হয়। কাব্যগ্রন্থ বিষের বাঁশী (১৯২৪), ভাঙার গান (১৯২৪), প্রলয় শিখা (১৯৩০) এবং চন্দ্রবিন্দু (১৯৩০)। আর ‘যুগবাণী ছাড়াও আরও দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ বাজেয়াফত করা হয়, ‘দুর্দিনের যাত্রী’ (১৯২৬) এবং ‘রুদ্রমঙ্গল’ (১৯২৬)। এসব গ্রন্থে সরকার রাজদ্রোহী বিষয়বস্তু খুঁজে পেয়েছিল। আর বাংলার মানুষ পেয়েছিল গণজাগরণের সুর ও ঐকতান, যা তাদের স্বাধীনতার পক্ষে উদ্বুদ্ধ করেছিল। নজরুল তার কলমকে অসিতে পরিণত করেছিলেন। ব্যঙ্গ, বিদ্রƒপ, জ্বালাময়ী কবিতা লিখে শাসকের সিংহাসনে এক দ্রোহের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। নজরুল যেমন আক্রমণ করেছিলেন ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তার আক্রমণ অব্যাহত ছিল। তেমনি সমাজের প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। ফলে উভয় দিক থেকে তার ওপর আক্রমণ নেমে আসে। কাঠ মোল্লারা তাকে চিহ্নিত করে ‘কাফের’ অভিধায়। তেমনই রাজদ্রোহের অভিযোগে ব্রিটিশ শাসক বাজেয়াফত করে তার ৩টি প্রবন্ধ ও ৪টি কাব্যগ্রন্থ। আরও ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রচার ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নানা রকম বাধাবিপত্তি চালানো হয়েছিল। নজরুলের ৭টি গ্রন্থ রাজরোষে পতিত হওয়া ছাড়াও অন্য গ্রন্থগুলোর প্রতি ছিল সরকারের বিরূপ দৃষ্টি। অগ্নিবীণা কোন কোন বিপ্লবীর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে পুলিশ। ‘সঞ্চিতা’ও সরকারও ভাল চোখে দেখেনি। ফনিমনসাকে নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি কমিশনার বইটি বাজেয়াফত করার জন্য চীফ সেক্রেটারিকে পত্র দিয়েছিলেন। তবে সে সময় নজরুলাতাঙ্কে ব্রিটিশ শাসক তা কার্যকর করেনি। স্বরাষ্ট্র দফতর চাইলেও সরকার যেন কিছুটা ক্লান্ত এবং ভীত হয়ে পড়েছিল। জনগণের ক্ষোভ বেড়ে যাবার আশঙ্কাও ছিল তীব্র। যা সরকারকে সতর্ক করে দেয়। (নজরুলের এক একটি গ্রন্থ এক একটি কামানের অগ্নিগোলা হয়ে বোমাবর্ষণ করে চলেছিল। যার জন্য কবিকে রাজশাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। গ্রন্থ হয়েছে বাজেয়াফত। তবু তিনি অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি। যেমন দাঁড়িয়ে ছিল সমসাময়িককালের রাজনৈতিক নেতারা। সাহিত্যিক শিশির কর নজরুলের নিষিদ্ধ নানা গ্রন্থ নামক তার গবেষণা গ্রন্থে দেখিয়েছেন নজরুলের ওজস্বিতা। লিখেছেন তিনি, ‘নজরুলের রচনায় তখন যুগমানসই প্রতিবিম্বিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এই রাজনৈতিক সামাজিক পটভূমিতে ঝড়ো হাওয়ার বেগে ছুটে এলেন নজরুল। বাংলা সাহিত্যে তিনি আনলেন চিরবিদ্রোহের বাণী। কেবল লেখার মধ্য দিয়েই দেশবাসীকে নজরুল অনুপ্রাণিত করেননি, জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গেও তার ছিল প্রত্যক্ষ যোগ। বিপ্লবীদের সঙ্গেও ছিল প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে যে দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈপ্লবিক আন্দোলন মাথাচাড়া দেয়, তার পেছনে তার লেখনীর প্রেরণা অনস্বীকার্য। একদিকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও অপরদিকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা সমকালীন আর কোন কবির মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় না। এই দুটি গুণই নজরুলের সবচেয়ে বড় দোষ হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশ শাসকের চোখে। তাই তার কণ্ঠরোধের জন্য তারা বার বার তৎপর হয়েছে। নজরুল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসক ও রাজত্বের অবসান চেয়েছিলেন। তাই তার এতগুলো গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বাজেয়াফত করা হয়। এই একই কারণে তাকে কারাদ- ভোগ করতে হয়। এটা বাস্তব যে, বিশ শতকের প্রথম থেকেই অন্ধকার ফুঁড়ে আলোর সর্বচিহ্ন ফুটে উঠতে শুরু করেছিল। নজরুল সেই সকালের পাখি- যাঁর কণ্ঠে বেজে উঠেছিল স্বাধীনতার ডাক। নজরুল তার গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন। নজরুলের প্রথম গ্রন্থ ব্যথার দান (১৯২১) মাত্র দু’শ’ টাকায় স্বত্ব বিক্রি করতে হয়েছিল। দ্বিতীয় কপিরাইট বা স্বত্ব বিক্রি করা হয় একই বছরে রিক্তের বেদনসহ আরও দুটি গ্রন্থের, মাত্র ৪শ’ টাকায়। অগ্নিবীণা এবং যুগবাণীর প্রকাশক ছিলেন প্রকাশ্যে কবি, নেপথ্যে আর্য পাবলিশিং। যারা নজরুলের লেখার অনুরাগী ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রন্থ প্রকাশের সমস্ত ব্যয় বহন করলেও সরকারী রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় প্রকাশক হিসেবে নিজের নাম ছাপাতে আগ্রহী হননি। নজরুলের যে সব গ্রন্থ বাজেয়াফত হয়েছে, তা গোপনে ছাপা ও বিক্রি হতো। তার রয়্যালিটি যে কবি পেতেন, এমনটা সব সময় ঘটেনি। নজরুলের প্রথম নিষিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ ‘বিষের বাঁশি’। এর পর পরই নিষিদ্ধ হয় ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থ। দুটিই ১৯২৪ সালে প্রকাশিত। ‘বিষের বাঁশি’ প্রকাশিত হওয়ার পর অভিজাত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘কবিতাগুলো যেন আগ্নেয়গিরি, প্লাবন ও ঝড়ে রুদ্ররূপ ধরিয়া বিদ্রোহী কবির মর্মজ্বালা প্রকাশিত করিয়াছে। জাতির এই দুর্দিনে মুমূর্ষু নিপীড়িত দেশবাসীকে মৃত্যুঞ্জয়ী নবীন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করিবে।’ এর পর পরই গ্রন্থটি নিষিদ্ধ হয়। ‘বিষের বাঁশী’ গ্রন্থটি সম্পর্কে প্রথম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নজরে আনেন বেঙ্গল লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান অক্ষয় কুমার দত্তগুপ্ত। আর ১৯২৪ সালের ১৮ অক্টোবর পুলিশ কমিশনার ‘টেগার্ট’ চীফ সেক্রেটারির কাছে এ গ্রন্থ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছিলেনÑ ‘ঞযব ৎিরঃবৎ রং পড়হারপঃবফ ষধংঃ ুবধৎ ঁহফবৎ ংবপঃরড়হ ১২৪/অ ধহফ ১৫৩/ধ ও.চ.ঈ ধহফ ংবহঃবৎহপবফ ঃড় ধহব ুবধৎ’ং জ.ও. রহ ঃযব ফযঁসশবঃঁ ংবফরঃরড়হ পধংব. ঞযব পড়হঃবহঃং ড়ভ ঃযব ইড়ড়শ ধং ড়িঁষফ ধঢ়ঢ়বধৎ রহ ঃযব বীধপঃং ড়ভ ঃৎধহংষধঃরড়হ ধৎব ফধহবৎঁংষু ড়নলবপঃরড়হধনষব ধহফ ও ৎবপড়সসবহফ ঃযব রসসবফরধঃব ঢ়ৎড়ংপৎরঢ়ঃরড়হ ড়ভ ঃযব ংধসব’. এরপর চীফ সেক্রেটারি ১৯১৪ সালের ২২ অক্টোবর জারি করেন বিজ্ঞপ্তিÑ বিষের বাঁশি বইটি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচ- রকম উত্তেজক এবং বিদ্বেষ ও দ্রোহমূলক। এ জন্য সরকারী দ-বিধি অনুযায়ী ১২৪-এ ধারানুসারে এই বইটি শাস্তিযোগ্য। এই ঘোষণার পর ব্যাপক খানাতল্লাশি শুরু হয়। তবু বইগুলোর বিক্রি গোপনে গোপনে চলতে থাকে। বিপ্লবীদের হাতে হাতে এই বই ফিরতে তাকে। বিষের বাঁশির সঙ্গে অনুরূপ ‘ভাঙ্গার গান’ও বাজেয়াফত করা হয়। ‘বিষের বাঁশির’ জন্য পুলিশ কল্লোল অফিস সার্চ করেছিল। এতে নজরুলে সঙ্গে কল্লোলের আত্মিক যোগ স্পষ্টতর হলো। এই কল্লোলে ছাপা হয়েছিল ‘বিষের বাঁশীর’ অনেক কবিতা। বিষের বাঁশির প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদটি অপূর্ব উল্লেখ করে অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত লিখেছেন, একটি রিক্ত গাত্র কিশোর হাঁটু মুড়ে বসে বাঁশের বাঁশি বাজাচ্ছে। তাকে জড়িয়ে আছে তীক্ষèজিহ্বা বিশাল বিষধর। কিশোরের ভঙ্গিতে- ভাবে ভয়ের বিন্দুবিসর্গও নেই। সে তন্ময়, তৎপরায়ণ হয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে। আর তার বাঁশির সুরে জেগে উঠেছে নতুন দিনের সহ¯্রাংশু সূর্য- যার আরেক নাম লোকচক্ষু, লোক প্রকাশক।’ প্রচ্ছদের চিত্রটি এঁকেছিরেন কল্লোল সম্পাদক কবি দীনেশ দাশ। নজরুলের নিজের বর্ণনায় ‘প্রথিতযশা কবিÑ শিল্পী-আমার ঝড়ের রাতের বন্ধু।’ নজরুল আরও লিখলেন, ‘এই বিষের বাঁশীর বিষ যুগিয়েছেন আমার নিপীড়িতা দেশমাতা আর আমার ওপর বিধাতার সকল রকম আঘাতের অত্যাচার।’ শনিবারের চিঠি সম্পাদক সজনীকান্ত দাশ ছিলেন ঘোর নজরুলবিরোধী। নজরুলকে ‘গালির গালিচায় বাদশা’ হিসেবে গালাগালি করেছেন। তিনিও নজরুলকে মূল্যায়ন করেন ভিন্নভাবে, বাস্তবতার পাশে দাঁড়িয়ে। লিখলেন সজনীকান্ত ‘স্বদেশী আন্দোলনের মুখে রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ কবিগণ যেভাবে বহুবিধ সঙ্গীত ও কবিতার সাহায্যে বাঙালীর দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলেন, অসহযোগ আন্দোলনের বৃহত্তর বিপ্লবে যে কারণেই হউক, তাঁহারা ঠিক সেইভাবে সাড়া দেন নাই। একমাত্র কবি নজরুলই ছন্দে গানে এই আন্দোলনকে জয়যুক্ত করিয়াছিলেন। পরবর্তী আন্দোলনের চারণ কবি তাহাকেই বলা যাইতে পারে। বাংলাদেশের মতো অনড় ও জড় দেশকে জাগাইবার জন্য যে আবেগময় উচ্ছ্বসিত প্রাণ বন্যার প্রয়োজন ছিল, কবি নজরুলের মধ্যে তাহার প্রকাশ ঘটিয়াছিল। কুলভাঙ্গা আবেগের ধাক্কায় এই অসাড় জাতিকে প্রাণস্পন্দনে চকিত হইয়া উঠিতে আমরাই দেখিয়াছি। কবি নজরুলের ‘বিষের বাঁশী’ এই থর থর প্রাণস্পন্দন যুগের গান। ইহার আঘাত সরকার সহ্য করিতে পারেন নাই বলিয়াই দীর্ঘকাল ইহার প্রচার রদ করা হইয়াছিল। জাতীয় জাগরণের সহায়ক হিসেবে এই গ্রন্থের প্রচার ও প্রসার একান্ত আবশ্যক।’ বিষের বাঁশী আর ভাঙার গান দুই-ই প্রায় এক সময়ে বেরোয় এবং দুই-ই নিষিদ্ধ হয়ে সরকারীভাবে বাজেয়াফত হয়ে যায়। ‘আমরা জানি সোজা সোজা কথা পূর্ণ স্বাধীন করব দেশ।/এই দোলালুম বিজয় নিশান, মরতে আছিÑ মরব শেষ।/ নরম গরম পচে গেছে আমরা নবীন চরম দল/ডুবেছি না ডুবতে আছি স্বর্গ কিংবা পাতাল তল।/নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও নজরুলের কবিতার গ্রন্থের বিক্রয় বন্ধ করা যায়নি। নানা সভায়-সম্মিলনে প্রায় প্রকাশ্যেই বই বিক্রি হয়েছে। কলকাতার অলিগলি ফুটপাথ তো আছেই। তবে তার কোন অর্থ নজরুলের হাতে পৌঁছেনি। এরপর নিষিদ্ধ হয় কবির ‘প্রলয়শিখা’। প্রলয়ের শিখা অগ্নিশিখা হয়ে যেন দেশে দাবানল জ্বালা সৃষ্টি করল। পুলিশ, গোয়েন্দা, সরকারী আমলারা পর্যন্ত হলো বেসামাল। ১৯৩০ এর ১৬ ডিসেম্বর চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারে কবির ৬ মাসের কারাদ- হয়। কবির পক্ষে হাইকোর্টে আপীল করা হয়েছিল। ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রলয়শিখার রায়ে বিচারক ঞ. জড়ীনঁৎময উল্লেখ করেনÑ ‘ও ভরহফ ঃযব ধপপঁংবফ কধলর ঘধলৎঁষ ওংষধস মঁরষঃু ঁহফবৎ ংবপঃরড়হ ১২৪-অ ড়ভ ঃযব ওহফরধহ ঢ়বহধষপড়ফব ধহফ ংবহঃবহপব যরস ড়ভ ংরী সড়হঃযং ৎরমড়ৎড়ঁং রসঢ়ৎরংড়হসবহঃ.’ প্রলয়শিখা প্রচার বন্ধ করার জন্য সরকারী মহলের তৎপরতার অন্ত ছিল না। নজরুল যেন ব্রিটিশ শাসকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন। এরপর দ-ের তালিকায় উঠে আসে কবির ব্যঙ্গাত্মক কাব্যগ্রন্থ ‘চন্দ্রবিন্দু’। তবে এর বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি। অবশ্য এর নিষেধাজ্ঞা ইংরেজ আমলেই প্রত্যাহার হয়। বাংলা সাহিত্যে ‘সর্বহারা’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেন নজরুল। যুদ্ধের শিবিরে বসে বলশেভিক আন্দোলনের বিপ্লবী চিন্তাধারার সংস্পর্শে এসে তিনি সর্বংসহ সর্বহারা মানুষের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল হয়ে ওঠেন। তার ‘সর্বহারা’ কাব্যের ছত্রে ছত্রে নিখিল বিশ্বের নিপীড়িত নিঃস্বের বঞ্চিত বুকের সঞ্চিত অভিমান যেথা পুঞ্জীভূত হয়েছিল, ধূমায়িত ছিল, কবি তাকেই ‘ভাষা দিয়ে আশা দিয়ে ভালবাসা দিয়ে’ অপরূপ করে তুলেছিলেন। যুগ-যুগান্ত ধরে মেহনতী শ্রেণীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিকে মুখর করেছেন। নিপীড়ক শাসক-শোষকের বঞ্চনাকে তীক্ষèধার ভাষার সমালোচনা করেছেন। বলেছেন কবি ‘আয় অশুচি আয়রে পতিত এবার মায়ের পূজা হবে/হেথায় নিখিল জাতির নিখিল মানব নির্ভয়ে চরণ ছোঁবে।/’ সর্বহারা কাব্য গ্রন্থ নিখিল মানবত্মার ভালবাসার জীবন বেদ হয়ে উঠেছিল। বেদনাসিক্ত মানুষের সমবেদনায় রাঙা সহানুভূতিশীল কবির মর্মনির্যাস ও অশ্রু দিয়ে লেখা এই গ্রন্থ। নজরুলের ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থ বাজেয়াফতের জন্যও পুলিশ কমিশনার টেগার্ট এবং পাবলিক প্রসিকিউটর তারকনাথ সাধু সুপারিশ করেছিল। গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্টে বলা হয়েছিল ‘অষসড়ংঃ ধষষ ঃযব ঢ়ড়বসং নৎধঃযব ধ ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ৎবাড়ষঃ.’ কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের অবস্থান ছিল দুর্বল। কারণ নজরুল ততদিনে গণজাগরণের প্রতীক পরিণত হয়েছেন। নজরুলের কণ্ঠরোধ ও কলমরোধ করার সকল ধরনের প্রচেষ্টাই চালায় শাসক এবং তাদের সহযোগীরা। নজরুলকে জেলে রাখাও সম্ভব হয়নি। গণবিক্ষোভে তাকে মুক্তি দিতে হয়েছে। বই বাজেয়াফত করেও সফল হয়নি শাসকগোষ্ঠী। বরং নজরুলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েছে। শুধু নজরুল নয়, তার পূর্ববর্তী বঙ্কিম, দীনবন্ধু মিত্র, শরৎচন্দ্রের গ্রন্থও বাজেয়াফত হয়েছে। শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে, নজরুলের নিষিদ্ধ গ্রন্থগুলোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে বঙ্গীয় আইন সভায় বাদানুবাদ হয়। ১৯৪৫ এ বিষের বাঁশী, ১৯৪৭-এ যুগবাণী, ১৯৪৮ সালে প্রলয়শিখা ও চন্দ্রবিন্দুর রাহুমুক্তি ঘটে। অবশ্য কবির কণ্ঠ তখন স্তব্ধ। তিনি তখন বোধের অতীত। কিন্তু রাহু মুক্তি সহজে ঘটেনি। নজরুলের নিষিদ্ধ ও বাজেয়াফত বইগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সম্পর্কে কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির ১৯৩৯ সালের ১০ মার্চের অধিবেশনে বঙ্গীয় আইন সভায় মুলতবি প্রস্তাবের নোটিস দেন। জবাবে বঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন যুগবাণী, বিষের বাঁশী, ভাঙ্গার গান, প্রলয়শিখা ও চন্দ্রবিন্দুকে দেশদ্রোহাত্মক গ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কথিত শক্তিশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দেশে গণবিদ্রোহের পরিকল্পনায় বইগুলোর আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বাজেয়াফতের আদেশ প্রত্যাহার না করার সরকারী অভিমত ব্যক্ত করেন।’ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিটি তখন সামনে আসতে থাকে। আইন সভার আলোচনার পর কয়েক কবি-সাহিত্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়, ‘নজরুল ইসলাম আধুনিক বাংলায় মুসলিম জাগরণের প্রথম হুঙ্কার, তাই তাঁহার রচনাবলী পাঠের সুযোগ হইতে বঞ্চিত হওয়া দেশবাসীর পক্ষে নিতান্তই দুঃখদায়ক। এই দুঃখের প্রতিকার আমরা আজ দৃঢ়তা সহকারে দাবি করি। অন্যান্য প্রদেশের কংগ্রেসী মন্ত্রিসভা যদি অনুরূপ দাবি পূরণ করিতে সমর্থ হইয়া থাকেন, তবে বাংলার হক মন্ত্রিসভার তাহা পূরণ না করিবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকিতে পারে না।’ যে ফজলুল হক ছিলেন ‘নবযুগ’ পত্রিকার মালিক তথা পরিচালক, তার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধের সমন্বয়ে সঙ্কলিত গ্রন্থ ‘যুগবাণী’ নিষিদ্ধ হলেও তার সরকার যখন ক্ষমতায় তখনও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং ১৯৪১ সালে বঙ্গ সরকারের পুশিলী প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে ‘যুগবাণী’ গ্রন্থটি এখনও বিপজ্জনক।’ কাজী নজরুল তার সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সঙ্গীত সাধনা করেছিলেন দীর্ঘদিন ধরে পরাধীন এক দেশে। যে পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য তার লেখা গ্রন্থ বাজেয়াফত হয় একের পর এক। কবিকে করা হয় গ্রেফতার। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। জেল হয়। জেলজুলুমের প্রতিবাদে অনশন করতে হয়। আর তিনি পরিণত হন কিংবদন্তির নায়কে। তবে পরাধীন যুগের কবির মনমানসিকতা ও সৃষ্টিকর্মে ছিল না পরাধীনতার কোন ছোঁয়া। সৃষ্টির ভুবনে নজরুল ছিলেন স্বাধীন। তার স্বাধীন চিত্তের জাগরণ ছিল চির সমুন্নত।
×