ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশাসনে আলো ছড়াচ্ছেন কানিজ ফাতেমা

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩১ আগস্ট ২০১৮

প্রশাসনে আলো ছড়াচ্ছেন কানিজ ফাতেমা

শুরুর জীবন- ১৯৮৫ সালে নওগাঁ জেলার, পতœীতলার নজিপুর গ্রামে আবদুল করিম ও সেলিনা বেগম দম্পতির কোলজুড়ে যে শিশুটি ঘর আলোকিত করেন তিনিই বর্তমান কানিজ ফাতেমা। দুই ভাই তিন বোনের সংসারে হাসি-ঠাট্টা আর আনন্দ নিয়েই বেড়ে উঠেছেন তিনি। দুরন্তপনা আর ঘোরাঘুরিতে কেটেছে তার বেলা। পাশাপাশি পড়ালেখার প্রতিও ছিল তার প্রচ- টান। গ্রামের পরিবেশেই কেটেছে তার বাল্যকাল। শিক্ষা জীবন- প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে প্রথম লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয় নওগাঁর নজিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন পিএস গবর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল থেকে। উচ্চ মাধ্যমিকে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্কুল ও কলেজ থেকে পাস করেন। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি হন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন সেখান থেকে ২০০৬ সালে অনার্স এবং ২০০৭ সালে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। শৈশবের স্মৃতি- দুরন্তপনায় ঘেরা শৈশব দিনগুলো কাটিয়েছেন তিনি। নিজের মুখেই বললেন, আজকাল শিক্ষার্থীরা যেমন এ+ এর জন্য নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন-রাত শুধু বইয়ের বোঝাই টেনে যেতে হয় আমাদের সময় এমন ছিল না। পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা। দুরন্তপনা করেও আমি ভাল ফলাফল করতে পেরেছি। তবে মজার একটা ঘটনা হলো একবার প্রাথমিকে আমি বৃত্তি পেয়েছিলাম। আম্মা আমি যে বৃত্তি পেয়েছি এটা বিশ^াস করতে পারছিলেন না। তিনি কয়েকবার খবরা-খবর নিয়ে নিশ্চিত হলেন যে আসলেই আমি বৃত্তি পেয়েছি। কর্ম জীবন- ২০০৭ সালে অনার্স পাস করেই বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের ইয়াং প্রফেশনাল পদে যোগদান করেন। এরপর ঢাকা স্টক একচেঞ্জ এ চাকরি করেন। ২০১০ সালে ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০১১ সালের ১ আগস্ট রংপুরের গাইবান্ধা জেলার ডিসি অফিসে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০১৪ সালের শুরুর দিকে সহকারী কমিশনার হিসাবে ফেনী জেলায়, ২০১৪ সালের শেষের দিকে সোনাগাজী উপজেলায় যোগদান করেন। ২০১৫ সালের ৬ জুলাই চাঁদপুরের মতলব (দক্ষিণে) এসিল্যান্ড হিসাবে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসাবে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এবং ২০১৭ সালের জুন মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে চাঁদপুর সদরে যোগ দিয়ে নিজের কর্ম স্পৃহাকে বাড়িয়ে তুলেন। কাজে প্রতিবন্ধকতা- নারী হিসাবে কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতাকেই মোকাবেলা করতে হয় মাঠে। বিশেষ করে প্রভাবশালীদের তদবির কাজে বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাল্যবিয়েগুলো ঠেকাতে রাজনীতিবদিদের ও বেশ চাপ সামলাতে হয়। অতপর সবকিছু উপেক্ষা করেও কাজ চালিয়ে যেতে হয়। অনুপ্রেরণা- মা এবং বর্তমানে স্বামী দুজনের দিক থেকেই খুব বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এছাড়া নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার বইগুলো পড়ে মনে হলো যেন নারী হয়েছি যেহেতু সেহেতু নিজেকে বদলে দিতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যেন সাধারণ মানুষের খুব নিকটে পৌঁছাতে পারি। পরিবারের বেশিরভাগ মানুষ শিক্ষক ছিল। তখন আমিও ভাবতাম শিক্ষক হবো । কিন্তু এরপর মনে হলো শিক্ষক নয় বিসিএস দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থেকে, সাধারণের পাশে সেবার হাত বাড়িয়ে দেব। অর্জন- ছোট, বড় অসংখ্য পুরস্কার পেয়ে থাকলেও আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ অর্জন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ২০১৭ সালে জনপ্রশাসন পদক লাভ করা। সে মুহূর্তটি কখনই ভোলার মতো নয়। চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আবদুস সবুর ম-ল স্যারের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সম্মান সূচক পদক লাভ করতে পারাটাকেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসাবে গ্রহণ করতে চাইছি। বাল্যবিয়ে ঠেকানো- আমি মনে করি অভিভাবকরা সচেতন হলেই বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব। পারিবারিক কিছু ঘটক আছে যারা কিনা অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে নারীর ইচ্ছাকে অমর্যাদা করছে। আমি ১৮ বছরের নিচের নারীদের বলতে চাই তোমরাই পারো বাল্যবিয়ে ঠেকাতে। অনেক সময় দেখা যায় খবর পেয়ে আমরা ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর আগেই বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এলাকার প্রভাবশালী মহল বিষয়টিতে সাহায্য করে। মেয়েরা যদি সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তবে বাল্যবিয়ে ঠেকানো সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী নারীর ক্ষমতায়ন প্রিয় বঙ্গবন্ধুকে ’৭৫ এ হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা কালো অধ্যায় শুরু হয়। এরপর পুরুষের ক্ষমতায়ন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। বর্তমানে বেশ ক’বছর ধরেই বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আপনি জানেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী, স্পীকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, আমার বর্তমান কর্মস্থলের মাননীয় এমপি দীপু মণি স্যার মহোদয় তিনিও নারী। সুতরাং বলা চলে সারাদেশে এখন নারীর জয়জয়কার। স্বপ্ন- ভারতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, মানুষ নাকি স্বপ্নের চেয়ে বড়। কখনও কখনও সে স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যায়। স্বপ্ন সেটা নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন সেটাই যা কিনা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। আমার স্বপ্ন আমাকে ঘুমাতে দেয় না। আমার স্বপ্ন তৃণমূলের বঞ্চিত, শোষিত, অবহেলিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আপনি বিশ^াস করবেন কি-না জানি না, এ স্বপ্ন আমি দিবা-রাত্রি দেখি। মানুষের মাঝে শতভাগ সেবা প্রদানে আমি যে বদ্ধপরিকর।
×