ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

হাসান ইমাম ও ফেরদৌসী মজুমদার পেলেন আলতাফ মাহমুদ পদক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩১ আগস্ট ২০১৮

হাসান ইমাম ও ফেরদৌসী মজুমদার পেলেন আলতাফ মাহমুদ পদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ এক শিল্পী আলতাফ মাহমুদ। হয়ে আছেন এদেশের সঙ্গীতের ধ্রুবতারা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদের রক্তঋণের স্মারক ‘আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুরকার তিনি। বৃহস্পতিবার ৩০ আগস্ট ছিল তার অন্তর্ধান দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উল্টোদিকে নিজ বাড়ি থেকে পাক হানাদার বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর তিনি ফিরে আসেননি। ইতিহাসের সেই বেদনার্ত দিনটিতে তার নামাঙ্কিত পদক পেলেন বরেণ্য দুই শিল্পী। তারা হলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সৈয়দ হাসান ইমাম ও প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে এই পদক প্রদান ও আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন আলী যাকের। সভাপতিত্ব করেন আলতাফ মাহমুদের সহধর্মিণী শহীদজায়া সারা আরা মাহমুদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মঞ্চকুসুম খ্যাত অভিনেত্রী শিমুল ইউসুফসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে। আয়োজনের শুরুতেই ছিল উদীচীর পরিবেশনায় আলতাফ মাহমুদের গান। শিল্পীরা আলতাফ মাহমুদের ‘ঘুমের দেশে ঘুম ভাঙাতে’, ‘আমি মানুষের ভাই স্পার্টাকাস’ ও ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করলি বাঙালি’ গানগুলো পরিবেশন করেন। এর পরই ছিল পদক প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা। প্রধান অতিথি আলী যাকের দুই গুণী শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও ফেরদৌসী মজুমদারের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন। পদক প্রদানের পাশাপাশি তাদের উত্তীয় পরিয়ে দেয়া ও ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের সম্মাননা প্রদান করা হয়। আলী যাকের বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা যোদ্ধায় পরিণত হয়েছিলেন। আলতাফ মাহমুদ ছিলেন তাদের অন্যতম। যিনি সঙ্গীত শিল্পীর জীবন যাপন করার চেয়ে যোদ্ধার জীবন বেছে নিয়েছিলেন। পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, আলতাফ মাহমুদকে আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। শুরুতে তিনি রাজি হননি। পরে রাজি হন। তবে তার যাওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বর মাসে। কিন্তু এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনারা তাকে তুলে নিয়ে যায়। আলতাফ মাহমুদের সবগুলো নখ তুলে ফেলা হয়েছিল। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল হাঁটু। সহযোদ্ধাদের নাম বলে দিলেই কিন্তু তাকে ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, আলতাফ মাহমুদের প্রয়াণের দিনে শোকে মুহ্যমান হয়ে থাকা উচিত নয়। তিনি যে কত বড় সুর¯্রষ্টা ছিলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটা শুনলেই বোঝা যায়। সঙ্গীত মানুষকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়, একটা অন্য রকম বন্ধন তৈরি করে দেয়। যতদিন এই দেশ থাকবে ততদিন আমরা তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা করব। তার নামে পদক পেয়ে খুশি হয়েছি। তাকে অমর করে রাখার জন্য শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ। অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী হাসান আরিফ। আলতাফ মাহমুদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০০৫ সালে এ ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও তার একমাত্র সন্তান শাওন মাহমুদ জানান, এ পর্যন্ত দেশের ১৯ জন গুণীজনকে পদক প্রদানের মাধ্যমে সম্মাননা জানিয়েছে শহীদ আলতাফ মাহমুদের পরিবারের সদস্য এবং ক্রাক প্লাটুনের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই ফাউন্ডেশন। ‘নজরুল কাব্যে মিথিক-ঐতিহ্যিক প্রতিমা : ফিরে দেখা’ ॥ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪২তম প্রয়াণবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে বাংলা একাডেমি বৃহস্পতিবার বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নজরুল কাব্যে মিথিক-ঐতিহ্যিক প্রতিমা : ফিরে দেখা শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একক বক্তৃতায় ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সমন্ববাদী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বার্থক উত্তরাধিকার। ‘প্রলয়োল্লাস’ এবং ‘বিদ্রোহী’তে তিনি যে নিপুণভাবে ঐতিহ্য ও মিথের ব্যবহার করেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। ইসলামী ঐতিহ্য, হিন্দু এবং গ্রিক মিথের স্বচ্ছন্দ ব্যবহারের সমান্তরালে নজরুল-কাব্যে খ্রিস্ট ও বৌদ্ধ ঐতিহ্যেরও গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম কবিতায় তার বক্তব্যের যথার্থতা ফুটিয়ে তোলার বাহন হিসেবে বিপুলভাবে মিথ ও ঐতিহ্যের অনায়াস ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ দ্বিধাহীন। তার অসাম্প্রদায়িক মানসের প্রকৃত সন্ধান পেতে হলে সমগ্র নজরুল রচনার পাঠ অত্যন্ত জরুরী। কারণ তার কাব্যে ও অন্যান্য রচনায় মিথের ব্যবহার কোন খ-িত সত্যকে প্রতিষ্ঠা করে না বরং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব মানব মঙ্গলের আহ্বান ধ্বনিত করে। সভাপতির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সাহিত্য সৃষ্টির পরিসর পর্যন্ত নজরুল বিরল এক অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্বের নাম। আমাদের দুর্ভাগ্য তার মতো অনন্য প্রতিভাকে এখনও আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে সব ধরনের সংকীর্ণতামুক্ত হয়ে নজরুলকে তার যথার্থ বৈশ্বিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করা। স্বাগত ভাষণে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, নজরুল ছিলেন এক বহুমাত্রিক প্রতিভা। যে অসাম্প্রদায়িক- শোষণমুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র ও বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছেন আমাদেরও সে পথে এগোতে হবে। তবেই এদেশে নজরুল চেতনার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটবে। সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী মো. রফিকুল ইসলাম। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ডালিয়া নওশীন ও মাকসুদুর রহমান মোহিত খান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ) এবং ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একাডেমির কর্মকর্তা মাহবুবা রহমান।
×