ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়রা নির্বাচন নিয়ে নেতাদের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩১ আগস্ট ২০১৮

বায়রা নির্বাচন নিয়ে নেতাদের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট আর বিকেল পাঁচটায় হোটেল ওয়েস্টিনে ১০ সদস্যের সিন্ডিকেট সংবাদ সম্মেলন করে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত বায়রার নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মালয়েশিয়ায় জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শ্রমবাজার বন্ধে দায়ী সিন্ডিকেটটি এবারও নির্বাচন প্রভাবিত করে পদে টিকে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের নেতাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের প্যানেল প্রধান সফিকুল আলম ফিরোজ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, গত বছরের মতো এবারও বায়রা নির্বাচন নিয়ে নূর আলী গংরা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবারও গত কমিটিতে যারা ছিলেন তাদেরকেই বসানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমন কি প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা তাকে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। তাকে বলে দেয়া হয়েছে গত কমিটিতে যারা ছিলেন এবারও তারাই থাকবেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। তাদের জানিয়ে দিয়েছি, আমিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নেত্রী বায়রার নির্বাচন কোন কিছু বললে জানতে পারব। প্রধানমন্ত্রী এমন কোন কথাই বলেননি। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়নোর কোন প্রশ্নই উঠে না। এরপরও তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। আমরা এ বিষয়ে সচেতন রয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই দুই বছরের জন্য সদ্য বিলুপ্ত কমিটি নির্বাচিত হয়। কমিটির মেয়াদ ছিল এ বছরের ১২ জুলাই পর্যন্ত। মেয়াদ শেষে গত ২২ মার্চ বায়রার নির্বাচন বোর্ড নির্বাচনের জন্য ২৪ জুন নতুন তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু এর মধ্যে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই আবেদনে সভাপতি রোজা, ঈদ, হজ, বর্ষা ও জাতীয় নির্বাচনের কারণ দেখান। এ কারণে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কার্য নির্বাহী কমিটির মেয়াদ আরও ৯ মাস বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে তিনি অন্য কোর্টে যান। পরে তিন মাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট। ফলে ২৪ জুন নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা ছিল না। কিন্তু হাইকোর্টের ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করে বায়রার সদ্য বিলুপ্ত কমিটি। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপীল বিভাগ ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহারের শেষ ৬ সেপ্টেম্বর। ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সদ্য সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের নেতৃত্বে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক মহাসচিব মনসুর আহমেদ কালাম অভিযোগ তুলেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধে দায়ী সিন্ডিকেটটি এবারও নির্বাচন প্রভাবিত করে পদে টিকে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। মালয়েশিয়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও কাতারের শ্রমবাজারে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বায়রায় নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই তাদের এ চেষ্টা। একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় ওই সিন্ডিকেট আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে। এ জন্য তারা নানা মাধ্যমে আমাদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় বায়রার দ্বিবার্ষিক নির্বাচন বানচাল করারও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই নির্বাচনে একটি প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জহরত এ্যাসোসিয়েট-এর শফিকুল ইসলাম ফিরোজ ও সাবেক মহাসচিব মনসুর আহমেদ কালাম। অন্য প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউনিক ইস্টার্নের মালিক নূর আলী, সংগঠনের সাবেক সভাপতি বেনজীর ও সাবেক মহাসচিব ক্যাথার্সিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমীন স্বপন। তারা মালয়েশিয়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও কাতারের শ্রমবাজারে তাদের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রায় নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় বায়রার দ্বিবার্ষিক নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। একটি প্রভাবশালী চক্রের সহায়তায় ওই সিন্ডিকেট আগামী ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় বায়রা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার প্রক্রিয়া বানচাল করতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, নির্বাচন প্রভাবিত করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচন প্রভাবিত করার কোন সুযোগও নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। যারা এমন মিথ্যাচার করছেন, তারা আসলে ষড়যন্ত্র করছেন। যারা বিজয়ী হবে তারা দায়িত্ব পাবেন। মিডিয়ায় যে সব খবর আসছে তা অতিরঞ্জিত। মালয়েশিয়া দশটি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল, তারা শুধু গেটওয়ে হিসেবে কাজ করেছে। তারা কর্মীদের কাছ থেকে সরকারের বেঁধে দেয়া টাকার বাইরে কোন টাকা নেয়নি। টাকা যদি কেউ বেশি নিয়ে থাকে তাহলে এই ১০ এজেন্সিকে যেসব প্রতিষ্ঠান কর্মী সরবরাহ করেছে তারাই নিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা বলা হলেও আসলে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। মালয়েশিয়া সরকার বদল হয়েছে। তারা আগের সরকারের অনেক সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। তার অংশ হিসেবে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তও রয়েছে। এখানে আমাদের দোষারোপ করা কোনভাবেই উচিত নয়। মন্ত্রণালয় নাকি আমাদের শোকজ করবে- করুক আমরা জবাব দেব। আমাদের কোন ভয় নেই। সংবাদ সম্মেলনে ইউনিক ইস্টার্নের মালিক নূর আলী বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সময় হলে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা এতে ভীত নই। বিকেলে ওয়েস্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেটের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×