ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ আগস্ট ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আগস্ট শেষ হচ্ছে। বিদায় নিচ্ছে। আজ শুক্রবার শোকাবহ মাসের সমাপনী দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের রক্তে ভেসে গিয়েছিল বাংলাদেশের রাজধানী শহর। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে সপরিবারে হত্যা করা হয় অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের পর একেবারেই উল্টো পথে চলা শুরু করে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়তে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের যত অর্জন নষ্ট হতে থাকে। একই উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। প্রকাশ্য জনসভায় এমন বর্বর আক্রমণ, মানুষ হত্যার কথা ঢাকাবাসী ভুলতে পারবে না কোনদিন। কত মানুষ যে চোখের সামনে কাতরাতে কাতরাতে মারা গেল! শরীর থেকে ছিটকে পড়ল কারও কারও হাত পা। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী রাজনীতির ধারাকে এগিয়ে নিতে, চিরস্থায়ী করতেই এমন নৃশংসতম হত্যাকা-। আগস্ট এলে এখনও মৌলবাদী অপশক্তি ও সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদরা জোট বাঁধে। নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রগতিশীল শক্তি তাই দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে পারে না। আগস্ট শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে হয় তাদের। আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে দিন গুনা। না, এবার আগস্টে নতুন করে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। সফল হয়নি কোন ষড়যন্ত্র। বরং একেবারে প্রথম দিন থেকে শেষ দিনটি পর্যন্ত জাতির পিতাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে জাতি। ঢাকার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচী পালন করেছে। কথা কবিতা গানে প্রায় প্রতিদিনই প্রণতি জানানো হয়েছে শেখ মুজিবকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি বেজেছে সর্বত্র। জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে বিশেষ সেমিনার প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে স্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধুর বিশালাকার প্রতিকৃতি। চারুশিল্পী সংসদের শিল্পীরা রং তুলিতে মূর্ত করেন জাতির জনককে। এভাবে শোককে শক্তিতে পরিণত করার নানা উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় রাজধানীর নানা প্রান্তে। এরই মাঝে গত হয়েছে ঈদ-উল-আযহা। ভালই কেটেছে বলতে হবে। এবারও ঢাকাজুড়ে পশুর হাট বসেছিল। অসংখ্য পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঈদের প্রথম দিন প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার পশু কোরবানি দেয়া হয়। বর্জ্যরে পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৫০০ টন। উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র জানান, পূর্ব ঘোষিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক পরিচ্ছন্ন করার কাজে ২৮০টি বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি নিয়োজিত ছিল। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ৯ হাজার ৫০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন বলে জানান তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও বহু পশু কোরবানি হয়েছে। ঈদের দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও অনেকে পশু কোরবানি দিয়েছেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সক্ষম হয় সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া যথাসময়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তায় লেগে থাকা রক্তের দাগ, আবর্জনা ধুয়ে গেছে। রাজধানীবাসীকে তাই বিশেষ ভোগতে হয়নি। এদিকে, ঈদের পর পুরনো চেহারায় ফিরছে রাজধানী। এখন বেশ কর্মব্যস্ত। সরকারী-বেসরকারী অফিস আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবই খুলেছে। চালু আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অবশ্য এখনও যানজট প্রকট হয়নি। গায়ে গা লাগা ভিড় নেই। কারণ ঈদ শেষ হলেও, ছুটি শেষ হয়নি অনেকের। আগামী রবিবার নাগাদ সবাই ঢাকায় ফিরবেন বলে আশা করা যায়। আর তখনই হয়ত বসবাস অযোগ্য ঢাকা দেখার শুরু হবে! ‘দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’ -এর প্রসঙ্গ টেনে শেষ করা যাক। আগামীকাল শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে বিশাল এই আয়োজনের উদ্বোধন করা হবে। আন্তর্জাতিক আসরে বিশ্বের ৬৮ দেশের চারুশিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন। ২৬৬ বিদেশী শিল্পীর মধ্যে ২২৩ শিল্পী প্রতিযোগিতায় শিল্পকর্ম জমা দিয়েছেন। বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেবেন ২৯ বিদেশী শিল্পী। ১৪ পারফর্মেন্স আর্টিস্ট এবার তাদের শিল্পনৈপুণ্য প্রদর্শন করছেন। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করছেন ১৯৯ বাংলাদেশী শিল্পী। ১৩ মাস্টার পেইন্টারের ছবি দেখা যাবে প্রদর্শনীতে। এছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নিচ্ছেন ৬৩ শিল্পী। এবার প্রদর্শিত হবে মোট ৩৬৮টি পেইন্টিং, প্রিন্ট ও ফটোগ্রাফি, ৩৩টি ভাস্কর্য, ৫২টি ইনস্টলেশন আর্ট এবং ৩০ পারফর্মেন্স আর্টিস্টের শিল্পনৈপুণ্য। আয়োজনের মধ্যে আরও থাকছে ইয়াং আর্ট প্রজেক্ট। থাকছে আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কর্মশালা। এছাড়াও আয়োজনে কারুপণ্য মেলা, ফুড কোর্ট, আর্ট ক্যাফে, শিশু কর্নার, আর্ট ক্যাম্প, পারফর্মেন্স আর্ট ওয়ার্কশপ এবং ভাস্কর্য উদ্যান যুক্ত হচ্ছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চিত্রশালার গ্যালারিজুড়ে চিত্রকর্ম। স্থাপনা শিল্প। একদিকে শিল্পকর্ম আসছে, অন্যদিকে চলছে প্রদর্শনীর আয়োজন। সব মিলিয়ে উৎসবের আগেই উৎসবের আমেজ।
×