ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০০১ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এ দেশে আর হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩১ আগস্ট ২০১৮

২০০১ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এ দেশে আর হবে না

রাজন ভট্টাচার্য ও সালাম মশরুর, সিলেট থেকে ॥ যত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রই হোক না কেন ২০০১ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এদেশে আর হবে না, হতে দেয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাকে আবারও স্বাগত জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ইভিএম ব্যবহারে বিএনপির আপত্তি কোথায়? তারা কী চায়? বৃহস্পতিবার সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ যুক্তি, তথ্য-উপাত্ত এবং বিভিন্ন দেশের উদাহারণ তুলে ধরে এই দাবি জানিয়েছিল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ইভিএমের ব্যবহার হয়েছে। এই পদ্ধতিতে দ্রুত ভোটগ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণা করা যায়। আর সিলেটের নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ইভিএমের ফলে বিএনপিই জিতেছিল। তাহলে ইভিএম ব্যবহারে তাদের আপত্তি কোথায়? জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এই সভা আয়োজিত হলেও সেখানে নেতাদের বক্তৃতায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের প্রসঙ্গই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা ওই পরাজয়ের জন্য সিলেটের নেতাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও বেইমানিকে দায়ী করে আত্মধ্বংসী এই কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিলেটে কারা কী করেছেন, সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছেন, নৌকা মার্কা ঠেকাতে আত্মবিধ্বংসী প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন- তারা কিন্তু রেহাই পাবেন না। সিলেটে ভাষণ দিতে আসিনি। এসেছি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। কারও রেহাই নেই। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সংলাপের বিরুদ্ধে নয়। তারাও সংলাপ চায়। কিন্তু কাদের সঙ্গে সংলাপ হবে? ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা কী খালেদা জিয়াকে ফোন করে সংলাপের আহ্বান করেননি? খালেদা জিয়া নোংরা ভাষায় সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সান্ত¡না দিতে গেলে তার মুখের ওপর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। সেদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে খালেদা জিয়া সংলাপের দরজাই বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা সংলাপের জন্য মায়াকান্না করেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদেরও কিন্তু ধৈর্যের সীমা আছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কারা কারা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া যাচ্ছেন, কারা গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠক করছেন; সব তথ্যই সরকারের জানা আছে। ষড়যন্ত্রের চোরাগলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার চক্রান্ত বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব, প্রতিরোধ করব। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত না থাকলে তারা কীভাবে এই হত্যাকা-ে সহযোগিতা করেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেন? এই অপরাধের দায় বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে হাওয়া ভবনের যুবরাজ তারেক রহমান কীভাবে অস্বীকার করবেন? বিচারের রায় কী হবে জানি না। কিন্তু সত্য বলেই যাব। সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্র ছাড়া জনগণের ওপর কখনও আস্থা রাখেনি। এবারের নির্বাচনকেন্দ্রিক তাদের ষড়যন্ত্রে সুশীল সমাজের কিছু লোক জড়িত। আগামী নির্বাচন যথাসময় হবে। কোন ষড়যন্ত্রই এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। যারা করতে আসবে জনগণ তাদের রাস্তায় শায়েস্তা করবে। সিলেটের পরাজয় প্রসঙ্গে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের মধ্যে দুর্বলতা, দোদুল্যমানতা ও বিশ্বাসঘাতকতা ছিল কিনা, তা তদন্ত করে বের করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে আত্মপ্রবঞ্চনাকারীরাই বারবার বিজয়ী হবে; শেখ হাসিনা পরাজিত হবেন। সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, প্রয়োজনে আমরাও চিহ্নিত করব কারা আওয়ামী লীগের নাম করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করেছে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করে ধানের শীষের গান গাইবেন তাদের ছাড়া হবে না। আওয়ামী লীগ হতে হলে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ হতে হবে। খালেদা জিয়ার আওয়ামী লীগ হলে বরদাশত করা হবে না। সিলেটের মতো আগামী ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভুল হলে বিএনপি-জামায়াত কিন্তু কারো ছাড়বে না। গত পাঁচ বছরে ২৬ হাজার হত্যা করেছে, এবার এক রাতে তারা এক লাখ মানুষ হত্যা করবে। তারা সব ধ্বংস করে দেবে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় এমপি ইমরান আহমেদ ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ সময় সিলেট বিভাগের সব জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় এমপিসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, শোকসভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিলেট সার্কিট হাউসে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এই বৈঠকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়, অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় ওবায়দুল কাদের সব ধরনের কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেন নেতাদের। এরপর সড়ক ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
×