ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ পবিত্র হজ ও কোরবানি ভাবনা-২০১৮

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩১ আগস্ট ২০১৮

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ পবিত্র হজ ও কোরবানি ভাবনা-২০১৮

২০১৮ খ্রিঃ, হজ ও কোরবানি নানা অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করেছে। প্রথম হজের সূচনা করেন আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহিম (আ) আল্লাহর নির্দেশে। আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মক্কা শরীফ তাঁর ঘরকে পুনর্নির্মাণের জন্য। তিনি তাঁর বালক পুত্র হযরত ইসমাইল (আ) ও স্ত্রী বিবি হাজেরা (আ) সহযোগিতায় এ ঘর নির্মাণ করেন। ঘর নির্মিত হয়ে গেলে আল্লাহ্ এই ঘরে হজ করার জন্য সকলকে আহ্বান করতে বলেন। হযরত ইব্রাহিম (আ) বলেন, হে আল্লাহ্ আমার তো কণ্ঠস্বর সুউচ্চ নয়। আল্লাহ্ বললেন, হে ইবরাহিম তোমার কাজ হলো ঘোষণা দেয়া আর দুনিয়ার মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমার। তখন ইবরাহিম (আ) আবু কুরায়েস পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন। হে দুনিয়ার মানুষ, আল্লাহ্ তার ঘর নির্মাণ করিয়েছেন এবং এই ঘরকে তওয়াফ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই খবর ফেরেশতাদের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়। তখন থেকে এখানে নানা অঞ্চলের মানুষ ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ হাজির হাজির হে আল্লাহ্ আপনার দরবারে হাজির বলতে বলতে উপস্থিতি জ্ঞাপন করেন। হযরত ইবরাহিম (আ)-এর আমল থেকে এই উপস্থিতি ঘোষণা চলে আসছে কিন্তু কিছু কাল পর হজের মধ্যে শিরক ও কুফ্র ঢুকে পড়ে। কয়েক হাজার বছর পর আল্লাহ্ তায়ালা হযরত মুহম্মদ (সা)-কে শিরক মুক্ত হওয়ার প্রবর্তনের জন্য নির্দেশ দেন। ৬৩১ খ্রিঃ আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন : সেই সব মানুষের জন্য বায়তুল্লাহ হজ করার অবশ্য কর্তব্য যাদের সেখানে যাবার সামর্থ্য আছে। এর পরের বছর এক লাখ চল্লিশ হাজার সাহাবায়ে কেরাম সঙ্গে নিয়ে প্রিয় নবী (সা) হজ করেন। এটা তাঁর জীবনের প্রথম হজ। যা বিদায় হজ নামে খ্যাত। ৯ জিলহজ আরাফাত ময়দানে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা বিদায় হজের ভাষণ নামে মশ্হুর। তিনি এই ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন : আমি হয়ত আর তোমাদের কাছে আসব না। আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি তা হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব ও তাঁর রসূলের সুন্নাহ্। তোমরা যদি এই দুটোকে আঁকড়ে থাক তাহলে পথভ্রষ্ট হবে না। এই ভাষণ শেষে তিনি সবাইকে আলবিদা জানান। ঠিক তখনই আল্লাহ্ তায়ালা অহি নাযিল করলেন : আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণাঙ্গভাবে দিলাম এবং তোমাদের দীন ইসলামকে সানন্দে অনুমোদন দান করলাম। প্রিয় নবী (সা) সেই হজে যে নিয়ম-কানুন পালন করেছিলেন, সেই নিয়মে হজ পালিত হয়ে আসছে। এ বছর ২০১৮ খ্রিঃ প্রায় পঁচিশ লাখ লোক হজ পালন করতে যান। আমাদের বাংলাদেশের এক লাখ ছাব্বিশ হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ হজ করতে যান। ৯ জিলহজ হজের খুতবায় ইমাম সাহেব তাকওয়া, আমানত আখলাক প্রভৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। এবারকার হজের সময় মিনাতে প্রচ- ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টি হয় যা তিন ঘণ্টাব্যাপী চলেছিল। ২০০২ সালে বর্তমান লেখক স্বস্ত্রীক হজে গিয়েছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর স্ত্রী মাহমুদা বেগম মায়া বাংলাদেশ মিশনে ছিলেন। সারারাত ধরে মদিনা মনওয়ারায় অবস্থান করছিলেন। সারারাত ঝড়বৃষ্টি চলছিল। সকালে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় মাথায় জায়নামাজ দিয়ে ভিজতে ভিজতে এক হাঁটু পানির মধ্য দিয়ে মসজিদে নববীর দিকে গমন করেন। মদিনায় বৃষ্টি শীর্ষক একটি কবিতায় এর বিস্তারিত বিবরণ বিধিত হয়েছে। মদিনায় বা আরব দেশে বৃষ্টি হওয়া এক দুর্লভ ব্যাপার। এ বৃষ্টিকে আল্লাহ্র রহমত বলে গণ্য করা হয়। একবার প্রিয় নবী (সা) মসজিদুল নববীতে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় একজন লোক দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, হে আল্লাহ্র রসূল, অনাবৃষ্টিতে ক্ষেত- ফসল নষ্ট হয়ে গেল। হুজুর (সা) তখন সামনের দিকে ইশারা করে বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেঘ সঞ্চারিত হলো এবং বৃষ্টি বর্ষিত হতে লাগল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এক হাঁটু পানি অতিক্রম করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ফিরলাম এবং যা সপ্তাহখানেক ধরে অব্যাহত ছিল। পরের জুমায় ওই ব্যক্তি নবী (সা) খুতবা প্রদানের সময় বললেন হে আল্লাহ্র রসূল সব বৃষ্টিতে ডুবে গেল। হুজুর (সা) তখন ইশারা করলেন এবং তৎক্ষণাৎ মেঘ সরে গেল এবং বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। কোরবানির সঙ্গেও হযরত ইবরাহিমা (আ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ)-এর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আল্লাহ্ হযরত ইবরাহিম (আ)-কে স্বপ্নযোগে তাঁর প্রিয়জনকে জবেহ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। হযরত ইবরাহিম (আ) পুত্রকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে জানান। হযরত ইসমাইল (আ) তখন বলেন, আব্বা আপনি স্বপ্নে যা আদিষ্ট হয়েছেন সেটাই করুন-ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। পিতা-পুত্র আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেন এবং হযরত ইবরাহিম (আ) পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে তিন মাইল দূরে মিনা নামক স্থানে এসে পুত্রকে পাথরের উপরে শোয়ালেন এবং গলায় ছুরি চালাতে উদ্যত হলেন- এমন সময় আল্লাহ্র নির্দেশে তিনি পুত্রের বদলে একটি দুম্বা কোরবানি দিলেন। সেই থেকে কোরবানি দেয়ার রীতি চলে আসছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন : ওরে হত্যা নয়, এ যে সত্যগ্রহ শক্তির উদ্বোধন ২০১৮ সালে বাংলাদেশের কোরবানির পশুরহাট বসেছিল বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু প্রথম দিকে পশুর দাম ছিল বেশি শেষের দিকে দাম অনেকটা পড়ে যায়। বর্তমান লেখকের পুত্র আরিফ বিল্লাহ মিঠু ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি হৃষ্টপুষ্ট লাল রঙের গরু খরিদ করে আনেন। ২২ আগস্ট বুধবার ভোরবেলা বায়তুল মোকাররমের প্রথম ঈদের জামাত আদায় করে এসে ৭ জনের নামে আল্লার উদ্দেশে কোরবানি সম্পন্ন করেন। যাদের নাম ছিল তারা হচ্ছেন, হযরত মাওলানা শাহ্ সুফী তোয়াজউদ্দিন (রহ), ইবনে মিনহাজউদ্দিন আহম্মদ, আবুল হাসান মোহাম্মদ আবদুল কাইউম- ইবনে পীর তোয়াজউদ্দিন আহম্মদ, আরিফ বিল্লাহ মিঠু ইবনে হাসান আবদুল কাইউম মাহমুদা বেগম মায়া জজে হাসান আব্দুল কাইউম, তানিয়া জজে আরিফ বিল্লাহ মিঠু, তাছমিয়া আরিফ বিনতে আরিফ বিল্লাহ মিঠু। কোরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ। আল্লাহ্ বলেন, কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহ্র কাছে পৌঁছে না। পৌঁছে তোমাদের তাক্ওয়া। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ
×