ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাঁতশিল্পের ভবিষ্যত

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৩১ আগস্ট ২০১৮

তাঁতশিল্পের ভবিষ্যত

মাকুরের শব্দ শোনা যেত এই বঙ্গে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। গ্রামে-গঞ্জে দিনরাত এই শব্দের তরঙ্গ বয়ে যেত। বোঝা যেত নির্মিত হচ্ছে শাড়ি অথবা কাপড় কিংবা চাদর। তারপর সেইসব সামগ্রী চলে যেত নৌপথ ধরে গঞ্জ শহর হয়ে ভিন দেশে। কদর ছিল অত্যধিক। এই পূর্ববঙ্গে তাঁতিদের অবস্থা ছিল এককালে বেশ রমরমা। সুনিপুণ হাতে তাঁতের তৈরি কাপড় নির্মাণে প্রাণান্তকর পরিশ্রম করা হতো। যখন এলো যন্ত্রসভ্যতা, কলকারখানায় তৈরি হতে থাকে কাপড়, তখন থেকেই ক্রমশ তাঁতশিল্প হারিয়ে যেতে থাকে। তাঁতিরা বেকার হয়ে পেশা পরিবর্তন করতে থাকে। কিন্তু দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তাঁতিরা তাদের পেশা আঁকড়ে থাকে শত দুঃখ-কষ্ট ও অবর্ণনীয় সমস্যার মধ্যেও। সেই তাঁত শিল্পের ফিরে আসছে সুদিন। বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ৬০ জেলাজুড়ে তাই চলছে তাঁতশুমারি। আর পাঁচ জেলায় হচ্ছে প্রশিক্ষণ। ইতিহাসের খেরো খাতায় দেখা যায় বিগত পাঁচ শ’ বছর ধরে এই উপমহাদেশের ৬০ থেকে ৮০ ভাগ সুতিবস্ত্রের চাহিদা মেটাত তাঁতশিল্প। দেশীয় তাঁত ও তাঁতশিল্পীদের সমাদর ছিল রাজদরবারেও। বাহারি সব বস্ত্র তৈরিতে তারা ছিল সক্ষম এবং সক্রিয়। কালপরিক্রমায় সবই বিলুপ্তির পথে গেলেও নিভু নিভু আলো জ্বেলে রাখা তাঁত ও তাঁতশিল্পীরা আবার জেগে উঠেছে। তাদের হারানো গৌরব আবার ফিরিয়ে আনছে তাঁতিবান্ধব শেখ হাসিনার সরকার। পাওয়ার লুমের আধিপত্যের কাছে হ্যান্ডলুম হার মেনে নিলেও এখনও বস্ত্র চাহিদার চল্লিশ ভাগ যোগান আসছে তাঁতশিল্প থেকে। পনেরো বছর সম্পাদিত তাঁতশুমারি অনুযায়ী এক লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি ইউনিট তাঁতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় নয় লাখ। এমন প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে এই খাতের আধুনিকায়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত ১১৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে তাঁতশুমারি চালানো হচ্ছে। শুমারির তথ্য হালনাগদ হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে সহজতর। প্রকল্পের মূল কাজ হবে তাঁত বোর্ডের আওতাধীন পঁাঁচটি বেসিক কেন্দ্রে পাঁচটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউশন এবং দুটি মার্কেট প্রমোশন কোড স্থাপন। তাঁত অধ্যুষিত অঞ্চলে স্থাপন করা হবে পাঁচটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট স্থাপন হবে জামালপুরের মেলান্দহে। ঢাকার কাওরান বাজার ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিক্রয় কেন্দ্র হবে। তাঁত শিল্পের বিকাশে শেখ হাসিনার নির্দেশে আরও প্রকল্প নেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এমনিতেই বর্তমান বাজার পদ্ধতির কারণে প্রান্তিক তাঁতিরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মহাজনের কাছ থেকে তারা উচ্চমূল্যে সুতা কেনে। এই সুতা থেকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয় আবার কম দামে। ফলে গুনতে হয় লোকসান। উপযুক্ত বাজার না থাকায় এই করুণ দশা সইতে হচ্ছে তাদের। বাজার থাকলে দেশে-বিদেশে তাঁতশিল্পীদের আত্মকর্মসংস্থান এবং তাঁত বস্ত্রের ব্যবহার বাড়ত এবং চাহিদা তৈরি হতো আরও। এই শিল্পের যত অগ্রগতি হবে ততই তা অর্থনৈতিক খাতে সহযোগী শক্তিতে পরিণত হবে। তাঁতশুমারি এক্ষেত্রে সহায়ক হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে এ খাত যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি বাড়বে কর্মসংস্থান। দেশী-বিদেশী বাজারে এদেশের তাঁতপণ্য বিশাল বাজার যাতে পায় সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টরা নিবেদিত হবে বলেই বিশ্বাস।
×