ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব কুমার কুণ্ড

‘মুজিব মানে মুক্তি’ বঙ্গবন্ধুর জীবনাশ্রিত নাটক

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩০ আগস্ট ২০১৮

‘মুজিব মানে মুক্তি’ বঙ্গবন্ধুর জীবনাশ্রিত নাটক

ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার যেমন গর্বের তেমনি ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার ফিউশান অগ্রযাত্রার স্বার্থে অনুপ্রেরণার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং লোক নাট্যদলের প্রাণপুরুষ লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা- নির্দেশনা ও অভিনয় সমৃদ্ধ ‘সোনাই মাধব’ পদাবলী যাত্রা ঐতিহ্যবাহী ময়মনসিংহ গীতিকার ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার। সেই গ্রন্থনাকে আধুনিক মঞ্চ প্রযোজনার সকল অনুসঙ্গ তথা সেট-লাইট কস্টিউম- মিউজিক প্রভৃতি সহযোগে সমকালীন বিষয়ের মিশ্রণে উপস্থাপন করে ঢাকা-কলকাতা-বেইজিং জয় করাটা অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার। দৃষ্টান্তের বিষয় যখন চীনের উৎসব আয়োজক কমিটির অনুরোধ আসে, লিয়াকত আলী লাকীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পাঁচটি দেশের শিল্পীদের অংশ গ্রহণে সোনাই মাধব যেন পুনর্নির্মাণ হয়। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মতোই ঘটনার সাদৃশ্যতা মিলল লিয়াকত আলী লাকীর গ্রস্থনা-পরিকল্পনা- সুর সংযোজনা ও নির্দেশনায় ২০০৯ সালে ৫ আগস্ট লোক নাট্যদলের মঞ্চায়িত নাটক ‘মুজিব মানে মুক্তি’ প্রদর্শনের ধারাবাহিকতায় এ বছর আগস্ট মাসজুড়ে লোক নাট্যদলের মঞ্চায়নের সমান্তরাল ৫টি জেলায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও পিপল্স থিয়েটার এ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় মুজিব মানে মুক্তি নাটকের বস্তুনিষ্ঠ-তেজদীপ্ত ও ইতিহাস পরম্পরার সাবলীল মঞ্চায়ন। ঢাকার লোক নাট্যদলের পাশাপাশি অপরাপর মঞ্চায়নের দল বা সংঘটনের নামগুলো হলো ঢাকার বাংলা কলেজ যুব থিয়েটার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর বঙ্গবন্ধু কলেজ থিয়েটার, ঝিনাইদহের অংকুর নাট্যদল, গোপালগঞ্জের গোপালগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি রিপার্টরি নাট্যদল ও গাজীপুর বন্ধুমহল শিল্পী সংস্থা। সংস্থা তথা নাট্যদলগুলোর প্রযোজনা অবলোকনে দৃশ্যমান আবহমান বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, শোষণ, বঞ্চনা, দ্রোহ ও মুক্তির স্বপ্ন বিনির্মাণ নিয়েই নাটক ‘মুজিব মানে মুক্তি’। নাটকটিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ধারাবাহিক ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, সংগ্রামী জীবন ও বেদনাবিধূর মহাপ্রয়াণের ঘটনা পরম্পরা এসেছে সময়ের প্রবাহমান ধারায়। ঢেউ এবং বাতাসের দোলায় খেয়াতরী যেমন তরতরী যে এগিয়ে চলে তেমনি ওভার ভয়েজে সঙ্গীতের মূর্চনাধারায় অর্ধ-শতাধিক অভিনেতা অভিনেত্রীদের নান্দনিক কোরিওগ্রাফিতে নির্মিত দৃশ্যকল্পের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে নাটকটি। অভিনেতা- অভিনেত্রীদের দেহ ভঙ্গিমার বিন্যাসে এবং নির্মাণে মঞ্চে কখনও সবুজ ধানের ক্ষেত, গ্রাম্য নৈসঃর্গ, ব্রিটিশ শাসনাকাল, দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণ, পাক বাহিনীর নির্মামতা, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব, স্বাধীন রাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধুর কর্মমুখর সময়, আন্তর্জাতিক মেলবন্ধন, ষড়যন্ত্র ও বিয়োগান্তক ঘটনা, শোক থেকে শক্তির পুনরুত্থান এবং সভ্যতার অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলার তেজদীপ্ত পদচারণা প্রভৃতি ফুটে ওঠে যেন বাস্তবেরই আদলে। খেয়াতরী রূপ নাট্যদল লোক নাট্যদলসহ মোট ৬টি কিন্তু মাঝিরূপী নির্দেশক একজনই তিনি লিয়াকত আলী লাকী আর সে কারণে মূল্যায়নে কেউ কারও থেকে ছোট না হয়ে বরং প্রত্যেকে প্রত্যেককে ছাড়িয়ে। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশকে নিমিষে চিনে নিতে, বুঝে নিতে ‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটক ইতিহাসের বিশ্বস্ত ও নান্দনিক মানচিত্র। মঞ্চয়ানের মানচিত্র দেখা যায় পুরো আগস্ট মাসের মঞ্চায়নের ধারাবাহিকতায় আগস্ট মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে বিভিন্ন দলগুলোর প্রযোজনায় মুজিব মানে মুক্তি মঞ্চস্থ হবে ঢাকা, গাজীপুর, শ্রীপুর, ঝিনাইদহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য জেলায়। লোকনাট্যদল প্রযোজিত এবং মঞ্চায়িত বঙ্গবন্ধুর জীবন আশ্রিত এবং প্রায় দুই শতাধিক মঞ্চায়ন ছুঁতে যাওয়া ‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটকটির ছয়টি দলের মঞ্চয়নের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলছে সারাদেশব্যাপী সহস্রতম মঞ্চায়নের অভিলক্ষে। লিয়াকত আলী লাকীর বিশ্বাস, ‘নাটকে লোক শিক্ষা হয়। মুজিব মানে মুক্তি নাটকটি শুধু ইতিহাসের আত্মবিস্মৃতিকে নাড়া দেয় না বরংতা ফেলা আসা স্মৃতিকে নতুনভাবে চিনিয়ে দেয়। সভ্যতার অগ্রযাত্রার স্বার্থে এই চেনা জানাটা জরুরী।’ বাংলাদেশের হৃদয়ের মর্মমূলের কথা বলে নাটক মুজিব মানে মুক্তি।
×