ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

তবে কি বন্ধ হবে ভানুমতির খেল!

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৩০ আগস্ট ২০১৮

তবে কি বন্ধ হবে ভানুমতির খেল!

সত্যই কি তাহলে বন্ধ হবে ভানুমতির খেল? দীর্ঘদিন ধরে বহু লেখালেখি-সামাজিক, মানসিক বিভিন্ন ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে বোঝানো হয়েছে এগুলো ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ ধ্বংসকারী। এসবের মধ্যে সুস্থ বিনোদনের ছিটেফোঁটা নেই। সবই ইন্দ্রজালের মতোই মহোনীয়। কিন্তু তাতে কি! এ সুপরামর্শের কোন প্রভাব আমাদের মনোরাজ্যে পড়েছে বলে মনে হয় না। নিশ্চই আপনারা বুঝতে পারছেন কোন বিষয়ে আবারও সচেতন করার চেষ্টা করছি। না বুঝলে পরিষ্কার করে বলি, আমাদের বাঙালী জীবনে দিনের শেষে ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে যখন অগণিত নারী পুরুষ নিজেদের বসার ঘরে বা টিভিরুমে ‘স্টার জলসা’, ‘জি বাংলা’, কালারস বাংলা, স্টার প্লাসসহ আরও কি কি সব চ্যানেলে বিনোদনের তৃষ্ণা মেটাতে কমদামি নেশা দ্রব্যের মতো সস্তা সিরিয়ালের নীল পেয়ালায় চুমুক দেয়। তখন কীভাবে স্বামী-স্ত্রী কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সুস্থ মানসিকতার স্বপ্ন বহাল থাকে। একটু কঠিন করে বলে ফেললাম! মনে হয় না। এর থেকেও কড়া ভাষায় শত মিডিয়ার সামনে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্পষ্ট বলেছন, সিরিয়ালের ভেতর দিয়ে আমরা খুব খারাপ টেকনিক দেখিয়ে দিচ্ছি, জানেন তো ভাল জিনিস লোকে কম গ্রহণ করে, খারাপ বিষয় খুব তাড়াতাড়ি মাথায় ঢুকে যায়। জানি না বলা ঠিক হবে কিনা, সম্রাটরা সব এখানে বসে আছে হয়ত ঝগড়াই করবে। আমি দেখেছি সব সিরিয়ালেই একই রকম। যেমন, একটা ছেলে তার বাবা নেই, বাবার পরিচয় নেই। এই হচ্ছে একটা ফেনোমেনা। দুই, একটা লোকের তিনটে বউ, তিনটে কুটুন্তি এ যেন সেই কৈকেই মন্থুরার যুগ। ফলে কি হচ্ছে এ ওকে বিষ খাইয়ে দিচ্ছে, ও জলে ওষুধ মিশিয়ে দিচ্ছে, মানে যত খারাপ খারাপ জিনিসগুলো যারা জানে না তাদেরও শিখিয়ে দিচ্ছে, এবং এগুলো থেকে সামাজিক প্রবলেম হচ্ছে, সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে, বিশ্বাস করুন এগুলো না বেশি দেখাবেন না। গত শুক্রবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পশ্চিমবঙ্গের কেবল অপারেটর ও মাল্টিপল সিস্টেম অপারেটর (এমএসও) দের সম্মেলনে এসব কথা সবার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন। আসলে এই কথাগুলো নতুন কিছু নয়। বরং বেশ পুরনো কথাই তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নিয়ে এই কথাগুলো প্রতিবাদ এবং পরামর্শের সুরে বলেনÑ তখন নিশ্চই আবারও নতুন করে ভাবা উচিত টিভিদর্শক থেকে সিরিয়াল নির্মাতাদের। কেননা দিন যত সামনে এগোচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন তত জটিল আকার ধারণ করছে। আর এসব জটিলতা, অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে নাটুকে কুটকাচালির ভানুমতির খেল বেশ ভালভাবেই দায়ী! সিরিয়াল দেখতে না দেয়ায় গৃহবধূর আত্মহত্যা, পারিবারিক ভাঙ্গন কিংবা স্বামী বা স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কে উৎসাহিত হওয়ার মতো মানবিক দুর্যোগ এই টিভি সিরিয়াল বেশ ভালভাবেই প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে ইলেক্ট্রিসিটি, ডিস এনটিনা এবং ইন্টারনেটের যথেচ্ছা ব্যবহারের প্রভাবে আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এসবের বিষবাষ্প ভীষণভাবে সাধারণদের প্রভাবিত করছে। যে কারণে খুব দ্রুতই বদলে যাচ্ছে আমাদের সামাজিক এবং পারিবারিক জীবন। ঘণ্টায় একটা করে বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রতিবছর নতুন নতুন রেকর্ডসংখ্যক পারিবারিক ভাঙ্গন। নিঃসঙ্গ কিংবা হতাশার জীবন। মানবজীবনকে অসহ্য সময়ে পরিণত করছে। কাজেই জীবন উপভোগ করতে হলে আমাদের সুন্দর স্বপ্ন দেখতে হবে, দেখাতে হবে। কারণ, স্বপ্ন ছাড়া জীবনতরী কিনারা পায় না। সেই আশা জাগানিয়ার স্বপ্ন নিয়ে নির্মিত হোক আপামোর সাধারণের বিনোদনের খোড়াক আর তাতেই বিনোদিত হোক আমাদের পরিবারের প্রিয়জনরা।
×