ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে সাফের প্রস্তুতি সারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩০ আগস্ট ২০১৮

শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে সাফের প্রস্তুতি সারল বাংলাদেশ

রুমেল খান, নীলফামারী থেকে ॥ বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটা মিল আছে। সেটা কী, বলুন তো? দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতাই একজন কবিÑ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! বুধবার দুই দেশের জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা গাইলেন নিজ নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীত। আর খেলা শুরুর আগে যে ভেন্যুতে গাইলেন সে ভেন্যুটিও হয়ে গেল ইতিহাসের অংশ। কেননা নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে এটিই ছিল ফিফা স্বীকৃত প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ যা দেখতে তপ্ত প্রখর রোদ উপেক্ষা করে হাজির হয়েছিলেন প্রায় ২৫ হাজার দর্শক (আসনসংখ্যা অবশ্য ২০ হাজার)। তারা দেখতে এসেছিলেন বাংলাদেশ দলের ঐতিহাসিক জয়। কিন্তু দেখলেন উল্টোটিই, বাংলাদেশ ভাল খেলেও হেরে গেল ০-১ গোলে। এক কথায় বলতে গেলে খেলেছে বাংলাদেশ, কিন্তু জিতেছে শ্রীলঙ্কা। খেলা শুরুর আগে টসে জিতলেও ম্যাচে জিততে পারেনি স্বাগতিক দল। এই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে দুই দলের কোচেরও সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হলো। যাতে জয়ী কোচ হিসেবে অভিষেকটা রাঙিয়ে নিলেন পাকির আলী। আর অভিষেকটা তেতো হারের স্বাদ নিয়েই শুরু করলেন জেমি ডে। এ নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১৭ ম্যাচে অবতীর্ণ হলো লাল-সবুজরা। জয়ের পাল্লা ভারি বাংলাদেশেরই। ১১ বারই জিতেছে তারা। ড্র করেছে ২টি। হেরেছে ৪টিতে। গোল করেছে ২৫টি, খেয়েছে ১৩টি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশ সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি। সেবার যশোরে শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গ্রুপপর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৪-২ গোলে। বুধবারের ম্যাচে স্বাগতিক দলকে হারিয়ে প্রতিশোধটা কড়ায়-গ-ায় নিল লঙ্কান দল। অথচ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ছয় ধাপ এগিয়ে থাকা দল বাংলাদেশ (শ্রীলঙ্কা ২০০, বাংলাদেশ ১৯৪)। বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল হোমগ্রাউন্ড এ্যাডভান্টেজকে ভালভাবে কাজে লাগিয়ে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ম্যাচে জয় কুড়িয়ে নেয়া। কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্য পর্যবসিত হয় ব্যর্থতায়। এর ফলে সাফ ফুটবলের প্রস্তুতিটা ভালমতো নেয়া হলো না বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’র। ‘মানব-চাপ’ কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কিÑ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে বুধবার এই ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে। স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে ঢুকতে গিয়ে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীর ‘তাপে-চাপে-ভাপে’ একেবারে চিড়েচ্যাপ্টা হবার জোগাড়। তারপরও মনটা অদ্ভুত ভাললাগার অনুভূতিতে ছেয়ে গেল এই ভেবেÑ ঢাকায় এই ম্যাচটি হলে কি এমন অম্লমধুর অভিজ্ঞতা হতো? স্টেডিয়ামে ঢুকে ডান কোণায় গ্যালারিতে তাকাতেই অবাক দৃশ্যÑ দর্শকদের সবাই মহিলা! যদিও অন্য গ্যালারিতেও তাদের উপস্থিতি ছিল ছড়ানো-ছিটানো। গ্যালারিতে তীব্র কড়া রোদ, ভুভুজেলার কানফাটানো শব্দ, সবার মধ্যে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। কিন্তু তাদের সেই উৎসবে জল ঢেলে দেয় লঙ্কানরা! পুরো ম্যাচে বাংলাদেশই বেশি আক্রমণ করে খেলে। বলের নিয়ন্ত্রণ তাদের ছিল ৭০ শতাংশ। কিন্তু হলে কি হবে, আসল কাজটিই করতে পারেনি তারা। গোলমুখে শট নিয়েছে মাত্র একটি! আক্রমণের পসরা সাজালেও সেই আক্রমণে ছিল না কোন ধার। বরং কাউন্টার এ্যাটাক স্টাইলে এবং দ্রুতগতিতে খেলে লঙ্কানরা কয়েকবারই বিপদে ফেলে বাংলাদেশ দলকে। তাছাড়া তাদের রক্ষণভাগ এবং গোলরক্ষক ছিল ভাল। খেলা কভার করতে গিয়ে বেশ বিড়ম্বনাতেই পড়তে হয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের। তাদের জন্য ছিল না কোন ইন্টারনেট সংযোগ। ছিল না কোন প্রেসবক্স। বরং দর্শকদের সঙ্গে তাদের বসানো হয়। দর্শকদের কারণেই তাদের খেলা দেখতে ঝামেলা পোহাতে হয়। এগুলো অবশ্য কোন সমস্যাই মনে হতো না যদি বাংলাদেশ দল জিততো। ‘১২ ঘণ্টা জার্নি করে ঢাকা থেকে নীলফামারীতে গিয়েও বাংলাদেশকে জেতাতে পারলেন না?’ দর্শকদের কাছ থেকে এমন টিপ্পনীও শুনতে হয়েছে! গ্যালারিতে হলুদ রংয়ের জামা পরিহিতা (টানা টানা চোখে কালো ফ্রেমের চশমা) এক সুর্দশনা তরুণীকে শুরুতে দেখা গেছে বেশ প্রাণোচ্ছল অবস্থায়। কিন্তু যেই না বাংলাদেশ দল গোল হজম করলো, তারপর থেকেই তরুণীর মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। সারাক্ষণ বসে থাকে চুপচাপ, বিষণœচিত্তে। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা দলের আট খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়। ফলে তাদের কাছে এই জয়ের মুহূর্তটি ছিল স্মরণীয়। পক্ষান্তরে এশিয়ান গেমসে খেলা দলকে বিশ্রামে রাখায় এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে সিনিয়র ফুটবলারের সংখ্যা ছিল বেশি। ম্যাচের ৭ মিনিটে সাখাওয়াত হোসেন রনির শট অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। ৯ মিনিটে ফজলে রাব্বি বুক দিয়ে বল নামাতে গেলে হ্যান্ডবল হয়। ফ্রি কিক পায় শ্রীলঙ্কা। ১০ মিনিটে বক্সের বেশ দূর থেকে লঙ্কান ফুটবলার মোহাম্মদ ফজলের দুর্দান্ত শট লাফিয়ে উঠেও বলের নাগাল পাননি গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল (১-০)। এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এই ব্যবধান আর ঘোচাতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত এই স্কোরলাইন নিয়েই ম্যাচ শেষ হলে হারের বিষাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজরা।
×