ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কোন চুরি হয়নি ॥ বিদায়ী এমডি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩০ আগস্ট ২০১৮

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কোন চুরি হয়নি ॥ বিদায়ী এমডি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে দুর্নীতির মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম চলছেই। মঙ্গলবার ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বুধবার আরও ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের উপ-পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আলম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন। এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সদ্য বিদায়ী এমডি হাবিব উদ্দীন আহমেদ বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কোন চুরি বা দুর্নীতি হয়নি। যা হয়েছে তা টেকনিক্যালি সিস্টেম লস। সারা পৃথিবীতেই এটা হয়। আমাদের লস হয়েছে ১.৪ ভাগ। সারা বিশ্বে ঘটে ২ থেকে ১০ ভাগ। তিনি আরও বলেন, এটা হয়ত শুনে বিশ্বাসযোগ্য মনে নাই হতে পারে। কিন্তু যারা বিশেষজ্ঞ, তারা এটা বুঝতে পারবে। কয়লায় অনেক ডাস্ট থাকে। ময়েশ্চার থাকে। সব মিলে এ শূন্যতা তৈরি হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। আমরা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সব তথ্য দিয়েছি। আশাকরি তদন্তে সব উঠে আসবে। বড়পুকুরিয়া কয়লা কা-ে ধারাবাহিকভাবে পেট্রোবাংলা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুদক। বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহম্মদ, মহাব্যবস্থাপক (কোম্পানি সচিব) আবুল কাসেম প্রধানীয়া, ব্যবস্থাপক (এক্সপ্লোরেশন) মোশারফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হালদার, ব্যবস্থাপক (মেইনটেনেন্স এ্যান্ড অপারেশন) আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কন্সট্রাকশন এ্যান্ড মেইনটেনেন্স) জাহিদুল ইসলাম এবং উপ-ব্যবস্থাপক (সেফটি ম্যানেজমেন্ট) একরামুল হক। এর আগে মঙ্গলবার যে আট আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তারা হলেন, পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মোঃ নূরুজ্জামান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খালেদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক (মেইনটেনেন্স এ্যান্ড অপারেশন) মোরশেদুজ্জামান, উপ-ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) জাহেদুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অপারেশন) জোবায়ের আলী। এই আটজনের সবাই বড়পুকুরিয়ার কয়লা চুরির মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এর আগে গত ১৩ অগাস্ট মামলার ১৯ আসামিসহ পেট্রোবাংলার ৩২ কর্মকর্তাকে তলব করে নোটিস দেয় দুদক। এই নিয়ে তিন দফায় কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। অবশিষ্টদের বৃহস্পতিবার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। কয়লা দুর্নীতির ঘটনায় গত ২৪ জুলাই দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামছুল আলম। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যায়। বর্তমান বাজারমূল্যে এই কয়লার দাম ২২৭ কোটি টাকার ওপরে। মামলার এজাহারে বলা হয়, খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাসেম প্রধানীয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নূরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলামসহ খনির ব্যবস্থাপনায় জড়িত অপর আসামিরা ওই কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িত। অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ব্যবস্থাপক, উপ-ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা। কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় গত ২৩ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা হয়েছে।
×