ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যবান্ধব এ কর্মসূচী চলবে সেপ্টেম্বর থেকে নবেম্বর পর্যন্ত

হতদরিদ্রদের দশ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল দেবে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ আগস্ট ২০১৮

হতদরিদ্রদের দশ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল দেবে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় হতদরিদ্রদের দশ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। নির্বাচনের আগে এই কর্মসূচী নিয়ে সরকার কোন অনিয়ম দেখতে চায় না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। বুধবার খাদ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি ফুড) উদ্দেশে মন্ত্রী একথা বলেন। নীতিমালা অনুযায়ী বছরের মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর এই পাঁচ মাস ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হয়। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কামরুল ইসলাম বলেন, সুবিধাভোগীদের তালিকা করার ক্ষেত্রে ভুল-ভ্রান্তি থাকতেই পারে। কিন্তু এবার আমরা মোটামুটি নির্ভুলভাবে এই কাজটা করতে চাই, ডিস্ট্রিবিউশনটা করতে চাই। এটা নির্বাচনের বছর, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। নির্বাচন বছরে চাই না কোন রকম অনিয়ম হোক, কোন অনিয়মের চিত্র পত্র-পত্রিকায়, মিডিয়ায় আসুক। তিনি আরও বলেন, আমি ডিসি ফুড, আরসি ফুড কর্মকর্তাদের বলব, আপনারা অত্যন্ত সচেতন থাকবেন কোথাও যাতে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত না হয়। কোথাও কোন অনিয়ম ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করবেন। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, কোথাও যাতে কোন অনিয়ম না হয় সেজন্য আপনারা অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকবেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে নিরন্ন মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। আড়াই কোটি মানুষ এই কর্মসূচীর সুফল ভোগ করছে। চালুর পর এই কর্মসূচী নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক নিউজ এসেছে। আমরা সেটা থেকে সাবধান হয়েছি। কিছু কারেকশনের সুযোগ পেয়েছি। পরবর্তী প্রান্তিকে যখন আবার চালু হয়েছিল তখন আমরা প্রথম প্রান্তিকের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করতে পেরেছিলাম। এখন যে কেউ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যে কোন স্থানের সুবিধাভোগীদের সংখ্যা, নাম-ঠিকানা দেখতে পারেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই কর্মসূচীর তালিকা প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, তাদের মধ্যেও রেষারেষি আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে রেষারেষির কারণে ম্যানিপুলেট করে সংবাদ সরবরাহ করার চেষ্টা করে। সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, কোন রকমের দুর্নীতি, কোন রকমের অস্বচ্ছতা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নবেম্বর- এই তিন মাসের কর্মসূচীতে যেন ধরা না পরে। আমি চাই, এবারে এই কর্মসূচী একেবারে নির্ভুল হোক। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বছরে কোন পক্ষ সরকারকে আনপপুলার (অজনপ্রিয়) করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের দোষ ত্রুটি তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারে। এবার সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। একটি পক্ষ সেই চেষ্টা করতে পারে, তাই এ ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন। তিনি বলেন, আমাদের এখন রেকর্ড মজুদ রয়েছে। বাজারে চালের দাম বাড়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ আছে আমাদের। বিশ্বাস করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে মানুষ আগামী দিনে মানুষ আমাদের পক্ষেই রায় দেবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রায় দেবে জনগণ। নির্বাচনের বানচাল করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অনুষ্ঠানে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা দুর্গম অঞ্চলে ডিলারদের পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। ডিলাররা প্রায় সবাই রাজনৈতিক পরিচয়ধারী, তাই কর্মসূচী শুরুর আগে ডিলারদের নিয়ে বৈঠক করার প্রস্তাব দেন তারা। ৮ উপজেলায় দেয়া হবে পুষ্টি চাল ॥ এর আগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় কুড়িগ্রামে পুষ্টি চাল বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার নতুন আটটি উপজেলায় পুষ্টি চাল দেয়া হবে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের কালিগঞ্জ, গোপালগঞ্জের মোকছেদপুর, ফরিদপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও বিজয়নগর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এবং বরগুনার বামনা উপজেলায় পুষ্টি চাল দেয়া হবে। ক্রমান্বয়ে সব উপজেলায় আমরা পুষ্টি চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করব। সেই কার্যক্রম চলছে। পুষ্টিচালের জন্য মিল চালু হচ্ছে। ভবিষ্যতে পুষ্টি চাল যাতে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় আমরা সেই ব্যবস্থাও নিচ্ছি। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আরিফুর রহমান অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ।
×