ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে নারীর আত্মহত্যা চেষ্টার তদন্তে পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ আগস্ট ২০১৮

শাহজালালে নারীর আত্মহত্যা চেষ্টার তদন্তে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা এক নারীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ। বিমানবন্দরের মতো নিরাপদ এলাকায় তিনি কিভাবে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তা নিরাপত্তা কর্মীদেরকেও ভাবিয়ে তুলেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরের তিন তলায় টয়লেটে তিনি কীটনাশক পান করার পর তাৎক্ষণিক কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয় রুনা লায়লা নামের এই প্রবাস ফেরতকে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করার সময় তিনি চিৎকার করছিলেন, আমি আর বাঁচতে চাই না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বিমানবন্দর নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছে, প্রথমে রুনাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সেটাতে তার নাম লেখা- রুনা লায়লা (২৪)। বাবা মৃত আজাহার আলী ও মা জমিলা খাতুন। তারা সাভারের জিরানিতে থাকেন। এ বিষয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ তাহমিনা ভূইয়া বলেন-ওই নারী দুপুর ২টার দিকে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে কোনও আত্মীয়-স্বজন ছিল না। তাকে বিমানবন্দরের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে ওই নারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। শেখ তারিকুল ইসলাম নামে রুনার এক স্বজন বলেন- বিমানবন্দরে বাথরুমে কীটনাশক পান করেন। পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানের চিকিৎসা শেষে তাকে সেইফ হোমে নিয়ে যাব। কেন রুনা এমন কা- ঘটালো তা বুঝতে পারছি না। তার মনে এত দুঃখ ছিল সেটা আমরা জানতাম না। এদিকে কেন শাহজালালে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন তা খতিয়ে দেখছে বিমানবন্দর পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বেশ কজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সৌদি আরব গিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রুনা লায়লা নিজের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রতারণা ও যৌন হয়রানির কাহিনী। ঢাকা মেডিক্যালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব কথা বলার মতো নয়। গোপন রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন যখন বলতেই হচ্ছে তাহলে সবই বলতে হবে। সেটা হলো- ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ সৌদি যাই। ওখানে গিয়ে কাজকর্ম যেমনই করি না কেন, বেতনাদি যাই পাই না কেন, তার চেয়েও বড় দুঃখ হচ্ছে মানুষরূপী জানোয়াররা। যে কারণে সেখান থেকে গত ২৮ জুলাই দেশে আসি। সেদিন আমার লাগেজ পাইনি। তাতে অনেক টাকার মালামাল ছিল। সেটা আনার জন্য মঙ্গলবার বিমানবন্দরে যাই। সেখানে বিভিন্নস্থানে ঘোরাঘুরি করে কোনও লাভ হয়নি। লাগেজটি আর পাইনি। সৌদিতে গিয়ে সেখানে এক বাসায় কাজ করে ৮ মাস বেতন পাইনি। সেই অভিযোগ জানাতে সৌদি বাংলাদেশী এ্যাম্বাসিতে যাই। সেখানেই লোকমান নামে এক স্টাফের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। সে আমাকে কিছু সহযোগিতাও করে। এক পর্যায়ে আমাকে বিয়ের কথা বলে বিভিন্নভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘনিষ্ঠতার সুযোগে আমার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কও করে। কিন্তু আর বিয়ে করেনি। এ অবস্থায় আমি দেশে আসার জন্য সেখান থেকে আমার লাগেজটি বুকিং দেয়া হয়। কিন্তু ঢাকায় নামার পর দেখি লাগেজ আসেনি। সেখানে প্রায় ৪ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এই লাগেজ নিতে যখন বিমানবন্দরে আসি তখনও দেখি লোকজন শুধু ঘুরায়। কেউ সহযোগিতা করতে চায় না। সবাই খালি প্রশ্ন করে কোথায় কিভাবে ছিলেন, কোথায় হারিয়েছেন, কি করতে বিদেশ যান। এ ধরনের কীর্তিকা- দেখে আমার আর বাঁচতে মন চায় না। তাই আমি কীটনাশক পান করি। তার আগে একটি কাগজে লিখে ছিলাম-আমি যদি মরে যাই, তাহলে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী লোকমান ও গোলামসহ ৩-৪ জন।
×