ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কিভাবে দেশ চালাবেন ইমরান

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২৯ আগস্ট ২০১৮

কিভাবে দেশ চালাবেন ইমরান

পাকিস্তানে নির্বাচন নিয়ে যে ব্যাপক জালিয়াতি, কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এখন তা থিতিয়ে এসেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ১১ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এককালের স্বনামধন্য ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিকই ইনসাফ (পিটিআই) এখন পার্লামেন্টে আধিপত্য করবে। প্রশ্ন হচ্ছে এই নতুন প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানকে কি দিতে পারবেন? কি করতে পারবেন তিনি দেশের জন্য? গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ইমরান খান বংশানুক্রমিক শাসন ও পৃষ্ঠপোষকতার নেটওয়ার্কের কদর্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর ছিলেন। এবারই প্রথম ক্ষমতায় এসে তিনি এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কতটুকু কি করতে পারবেন সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকবে। কিন্তু কোয়ালিশন করতে বাধ্য হওয়ায় ইমরানকে অনেক ব্যাপারে আপোস করতে হবে। অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তান। অর্থনীতি, বিদেশীনীতি, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রে দেশটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ইমরানকে নয়া পাকিস্তান গড়ার চেষ্টা করতে গেলে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু সুস্পষ্ট কোন পরিকল্পনা তার না থাকায় এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইমরান তেমন যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারবেন না বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতি। এক্ষেত্রে অপচয় করার মতো সময় ইমরান পাবেন না। এই প্রথম ক্ষমতায় আসা এক নতুন সরকারকে দায় পরিশোধ সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হবে। দেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে এবং রুপীর মুদ্রামান হ্রাস পাচ্ছে। পাকিস্তান তার প্রয়োজনীয় জ্বালানির তিন-চতুর্থাংশ আমদানি করে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে মাত্র ৯শ’ কোটি ডলারে যা দিয়ে মাত্র দু’মাসের আমদানি খরচ মেটানো যেতে পারে। ঘাটতি সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে আইএমএফের ১২শ’ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়া নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু সেটা যে মিলবেই তার কোনই নিশ্চয়তা নেই। পাকিস্তান নানাভাবে চীনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের অধীনে চীন অবকাঠামো নির্মাণে ৬২০০ কোটি ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও জোর দিয়ে বলেছেন যে, চীন লাভবান হতে পারে আইএমএফের এমন যে কোন সাহায্য পরিকল্পনায় তার দেশ বাধা দেবে। ইমরান খানের স্বপ্ন ইসলামী কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়া। কিন্তু এর জন্য যে বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন তার সংস্থান কিভাবে হবে সেটাই প্রশ্ন। ইমরানের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হলো বিদ্যুত খাত। ক্ষমতায় থাকাকালে নওয়াজের মুসলিম লীগ সরকার পাকিস্তানের বিদ্যুত সঙ্কটের সুরাহা করতে অনেক কিছুই করেছিল। চীন ও পাকিস্তানের নতুন বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। কিন্তু তার পরও এই খাতে চরম নৈরাজ্য ও সঙ্কট বিরাজ করছে এবং বিশাল অঙ্কের ঋণ জমে উঠেছে। চুরি ও দুর্নীতি সঙ্কটক আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এরপর আসে নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি ইসলামী সন্ত্রাস নির্বাচনকে নির্বিঘœ করতে পারেনি। পাকিস্তান এই সন্ত্রাস একটা সর্বক্ষণের হুমকি। তার ওপর আছে আঞ্চলিক পরিস্থিতির জটিলতা ও টানাপোড়েন। আমেরিকা-চীন দ্বন্দ্ব এবং চীন-ভারত দ্বন্দ্ব, ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব মিলে আঞ্চলিক পরিস্থিতি এক ভয়াবহ অগ্নিগর্ভ রূপ ধারণ করেছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো শক্তি কূটনৈতিক ও সক্ষমতা ইমরান খানের রয়েছে কিনা সন্দেহ। জঙ্গী হত্যায় ড্রোন ব্যবহার নিয়ে স্বয়ং জঙ্গীরা যতটা না আমেরিকার সমালোচনা করছে তার চেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন ইমরান। তাঁকে সামাল দিতে হবে এমন এক সেনাবাহিনীকে সে বাহিনী দেশের ঘোর শত্রু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথে প্রধান বাধা। ইমরান খান এসব চ্যালেঞ্জের কথা জানেন এবং এর সমাধানের পথও ভেবে রেখেছেন। বিভিন্ন সময় তিনি চীন থেকে শিক্ষা নেয়ার অর্থাৎ জনগণকে দারিদ্র্য থেকে টেনে তোলার কৌশলের কথা বলেছেন এবং সরকারের ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হলো তার কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশার ক্রমবর্ধমান জোয়ার। শুধু দারিদ্র্যা বিমোচন নয়, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দূর করার, সর্বস্তরে মেধাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার, জবাবদিহিতা বৃদ্ধির এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ প্রসারিত করার যে সব অঙ্গীকার করছিলেন ইমরান জনগণ এখন সরকারের কাজে-কর্মে সেগুলোর প্রতিফলন দেখতে চায়। ইমরানের অঙ্গীকারগুলো মহৎ, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাও সঙ্গত। কিন্তু সেই লক্ষ্যগুলো অর্জনে সে সময় প্রয়োজন পাঁচ বছর সে তুলনায় খুবই সামান্য। যে দেশ শক্তিমানরাই সুবিধাভোগী এবং শক্তিহীনরা উপেক্ষিত সেখানে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে যে প্রশাসনিক কাঠামোর প্রয়োজন তা নেই। তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানে কোন পরিবর্তনই আসবে না। পরিবর্তন অবশ্যই কিছু আসবে। কিন্তু সেটা এত মন্থরগতিতে আসবে যে দেশের জনগোষ্ঠীর ৬৪ শতাংশ তরুণ সমাজের মোহমুক্তি ঘটতে সময় লাগবে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট ও অন্যান্য
×