ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

এরিনার অপেক্ষার অবসান

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৯ আগস্ট ২০১৮

এরিনার অপেক্ষার অবসান

অবশেষে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন এরিনা সাবালেঙ্কা। শনিবার কানেক্টিকাট ওপেনের ফাইনালে কার্লা সুয়ারেজ নাভারোকে হারিয়ে প্রথম কোন ডব্লিউটিএ টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। বেলারুশের এই প্রতিভাবান টেনিস খেলোয়াড় কানেক্টিকাট ওপেনের ফাইনালে ৬-১ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন স্প্যানিশ টেনিস তারকা কার্লা সুয়ারেজ নাভারোকে। ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জয়ের পর দারুণ রোমাঞ্চিত সাবালেঙ্কা। এ বিষয়ে ২০ বছরের এই খেলোয়াড় বলেন, ‘প্রথম শিরোপা জয়ের পর আমি খুব খুশি। এই অনুভূতিটা সত্যিই অসাধারণ।’ সাবালেঙ্কার ক্যারিয়ারে এটা চতুর্থ ডব্লিউটিএ ফাইনাল। প্রথম তিন টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হওয়ার পর চতুর্থ প্রচেষ্টায় সাফল্যের মুখ দেখলেন তিনি। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে তিয়ানজিন ওপেনে ফাইনাল খেলেছিন সাবালেঙ্কা। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সেবার রাশিয়ান টেনিসের কিংবদন্তি মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরে যান তিনি। এরপর লুগানো এবং বছরের শুরুতে ইস্টবোর্ন টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে স্বপ্ন-ভঙ্গের বেদনায় ডুবেছিলেন সাবালেঙ্কা। তারপরও হতাশ হননি কখনই। বরং সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। ধীরে ধীরে সেইসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই কানেক্টিকাট ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে সক্ষম হন তিনি। এ প্রসঙ্গে সাবালেঙ্কা বলেন, ‘এটা আমার দ্বিতীয় প্রিমিয়ার ফাইনাল, সব মিলিয়ে চতুর্থ। তবে একটা ব্যাপারে খুব চিন্তিত ছিলাম যে, চারটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারিনি। তারপরও সেই ফাইনালগুলো মানসিকভাবে আমাকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। সেইসব ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা থেকেই ফাইনালের আগেই জানতাম আমাকে কী করতে হবে।’ তবে ফাইনাল ম্যাচটা কিন্তু তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। বিশেষ করে দ্বিতীয় সেটের কথা আলাদা করেই বললেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বেলারুশ তারকার অভিমত, ‘আমার জন্য এটা কঠিন একটা ম্যাচ ছিল। কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। দ্বিতীয় সেটে তো অনেক বেশি নার্ভাস হয়ে পড়ি। তবে আমি নিজেই নিজেকে সাহস দেই। নিজেকে বলি, নিজের কাজটা করে যাওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই নিজের কাজটা করতে পেরেছি।’ সাবালেঙ্কাকে সপ্তাহের পুরোটা সময়ই কোর্টে লড়াই করতে হয়েছে। পক্ষান্তরে, কার্লা সুয়ারেজ ফাইনালসহ মোট কোর্টে ছিলেন মাত্র তিন ঘণ্টা ৯ মিনিট! অর্থাৎ সাবালেঙ্কা যতটুকু সময় কোর্টে ছিলেন স্প্যানিশ তারকা খেলেছেন তার অর্ধেকেরও কম সময়! কেননা, দ্বিতীয় রাউন্ডে ওয়াকওভারে জয় পান নাভারো। এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ অবসরে চলে যাওয়ায় খুব সহজেই ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেন এই স্প্যানিয়ার্ড। কিন্তু সেসব সুবিধা ফাইনালে মোটেও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। তবে হারলেও প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঠিকই। সাবালেঙ্কা দারুণ একটা টুর্নামেন্ট খেলায় সুয়ারেজ নাভারো বলেন, ‘অবিশ্বাস্য একটা টুর্নামেন্ট খেলার জন্য সাবালেঙ্কাকে আমি অভিনন্দন জানাতে চাই। যদিওবা আমি এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি তারপরও দারুণ একটা সপ্তাহ পার করেছি।’ সুয়ারেজকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পাওয়া সাবালেঙ্কার অগ্রগতি হয়েছে র‌্যাঙ্কিংয়েও। প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠে এসেছেন তিনি। তবে বেলারুশ তারকার সামনে চ্যালেঞ্জ এখন ইউএস ওপেন। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের প্রথম পর্বে তার প্রতিপক্ষ আমেরিকার ড্যানিয়েলে কলিন্স। সেই ম্যাচের আগে তার অনুভূতি কেমন? এ প্রসঙ্গে সাবালেঙ্কার সুস্পষ্ট জবাব, ‘আমি খুব ভাল অনুভব করছি। ইউএস ওপেনে খেলার জন্য যথেষ্ট শক্তি আছে আমার। মানসিকভাবেও আমি প্রস্তুত। লড়াই করার জন্যই ইউএস ওপেনের কোর্টে নামব আমি। এই মুহূর্তে বাঘের মতো লাগছে নিজেকে।’ এদিকে, কার্লা সুয়ারেজ নাভারো ইউএস ওপেনের মিশন শুরু করবেন আমেরিকান বাছাই নিকোল গিবসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সেই টুর্নামেন্টে কতটুকু এগুবেন তিনি? সেটার উত্তর এখন সময়ের হাতে। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের লড়াই। মার্কিন মুলুকের এই আসরই বছরের শেষ গ্র্যান্ডসøাম। যা ঘিরে উৎসবমুখর আমেজ তৈরি হয়েছে নিউইয়র্ক জুড়ে। টেনিসের জনপ্রিয় এই আসরে অনেক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষ (একক ও দ্বৈত), নারী (একক ও দ্বৈত), নারী ও পুরুষ দ্বৈত, বালক-বালিকা একক ও দ্বৈত এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য আছে হুইলচেয়ার ইভেন্ট। মহিলা এককে শীর্ষ বাছাই রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ। বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর খেলোয়াড়। উইম্বলডনে ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। তাও আবার সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠে সেরেনা উইলিয়ামস ১৭তম বাছাইয়ের মর্যাদা পান। ২০১৪ সালে সর্বশেষ ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। এরপর থেকে ইউএস ওপেনের শিরোপাটা অধরাই রয়ে যায় তার। তবে গত বছরটা অনেক ঝড়-ঝাপটার মধ্য দিয়েই পার করেছেন তিনি। বিয়ে-সন্তান জন্মদানের পর কোর্টে ফিরতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে তাকে। তবে সেই লড়াইয়ে খুব বেশি সময় নেননি আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। প্রথম কন্যা সন্তান জন্মের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যে উইম্বলডনের ফাইনাল খেলেন তিনি। সেই টুর্নামেন্টে সিমোনা হ্যালেপের কাছে না হারলেই নতুন ইতিহাস গড়তেন সেরেনা। মার্গারেট কোর্টের ২৪গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসাতেন তিনি। তবে উইম্বলডনে না পারলেও ইউএস ওপেন জিতে কিংবদন্তি মার্গারেট কোর্টকে ছুঁতে দারুণ আশাবাদী ২৩ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক। ইউএস ওপেনের বাছাইয়ের তালিকায় রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল মারিয়া শারাপোভা আছেন ২২ নম্বরে। উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন এ্যাঞ্জেলিক কারবার চার নম্বর বাছাই। ইউএস ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্লোয়ান স্টিফেন্স। আমেরিকার তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়ও শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী। এবারের ইউএস ওপেনে পুরুষ এককে সেই বিগ থ্রি-ই পুরোপুরি ফেভারিট। কেননা, চলতি বছর তিনটি গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন তারা তিনজন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার। স্পেনের টেনিস তারকা রাফায়েল নাদাল জেতেন তাঁর পছন্দের ক্লে কোর্টের ফরাসি ওপেন। আর চোট সারিয়ে ফেরা সার্বিয়ার নোভাক জোকোভিচ রূপকথা লিখে জেতেন উইম্বলডন। তাদের সামনে এবার দখলে নেওয়ার পালা ইউএস ওপেন। বিভিন্ন টেনিস বোদ্ধাগণ ইউএস ওপেন জয়ে এই ত্রয়ী ছাড়া অন্য কোন হাত দেখতে পাচ্ছেন না। বাছাইয়ে নাদাল শীর্ষে, ফেদেরার দুইয়ে। আর চোট থাকায় দীর্ঘ সময় না খেলায় জোকোভিচ ছয় নম্বরে থেকে মিশন শুরু করবেন। গতবার ইউএস ওপেনে পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রাফায়েল নাদাল।
×