ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টি ইসলাম তারিক

নতুন মৌসুমে তিন তারকার চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৯ আগস্ট ২০১৮

নতুন মৌসুমে তিন তারকার চ্যালেঞ্জ

এবার ইউরোপের তিন শহরে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন সময়ের তিন সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসি ও নেইমার। অথচ এক বছর আগেও এ তিনজন একই দেশে ছিলেন। তিনজনই ছিলেন স্পেনে। গত বছর স্পেন ছেড়ে নেইমার চলে আসেন ফ্রান্সের প্যারিসে। এ বছর মাদ্রিদ ছেড়ে ইতালির তুরিনে পাড়ি জমিয়েছেন রোনাল্ডো। শুধু মেসি থেকে গেছেন স্পেনে। যে কারণে এবার তিন তারকাকে তিন শহরে থেকে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। অধিনায়কত্ব পেয়ে যেন আরও ধার বেড়েছে লিওনেল মেসির। নতুন মৌসুমের শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য ছন্দে বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। স্প্যানিশ লা লিগায় নতুন মৌসুমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উড়ন্ত শুরু করেছে কাতালানরা। আলাভেসের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয়ে যথারীতি নায়ক মেসি। তিনি করেন জোড়া গোল। আরও একটি নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে এবং আবারও বার্সিলোনার প্রধান চরিত্র সেই মেসি। খেলা গোছালেন, এ্যাসিস্ট করলেন, সঙ্গে অবশ্যই গোলও করছেন। এই ম্যাচে গোল করে নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করেন মেসি। ২১ শতকে প্রথম ফুটবলার হিসেবে লা লিগায় টানা ১৫ মৌসুমে গোল করার কীর্তি গড়েন এলএমটেন। অর্থাৎ ২০০৪ সালে লীগে অভিষেক হওয়ার পর প্রতি বছরই গোল পাওয়া একমাত্র ফুটবলার মেসি। ম্যাচে আরও একটি ইতিহাসের সাক্ষী হন মেসি। ৯ বছর আগে বার্সিলোনার ৫০০০তম গোলটি করার পর ক্লাবের ৬০০০তম গোলটিও এসেছে তার পা থেকেই। লীগে এখন পর্যন্ত বার্সার ৬০০২ গোলের মধ্য মেসির পা থেকে এসেছে ৩৮৫টি। তার মানে বার্সিলোনার ৬.৫% গোলই একা করেছেন তিনি। দলের সেরা তারকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন বার্সা কোচ ভালভার্ডে। তিনি বলেছেন, মেসি একটা জিনিয়াস। আমরা সৌভাগ্যবান যে প্রতিদিন তাকে দেখতে পারি। সে খেলছে এমন সময়ে ফুটবলে জড়িত থাকতে পারায় আমরা সৌভাগ্যবান। আমরা চাই প্রতিদিনই সে বিস্ময়কর কিছু করুক। মেসির এই বিস্ময়ের এখনই শেষ দেখছেন না স্প্যানিশ কোচ। বলেন, আমাদের বিস্মিত করার সুযোগ মেসির এখনও আছে। সে সবসময় আপনাকে বিস্মিত করে। সত্যি বলতে কি, আমাকে বিস্মিত করায় সে কখনও থেমে থাকেনি। আপনাকে মেসির কাছ থেকে যে কোন কিছু প্রত্যাশা করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কারণ সে যা দেখে সেটা অন্য কেউ দেখে না। অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে এসেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। ইতালিয়ান সিরি’এ লীগে অভিষেকও হয়ে গেছে পর্তুগীজ সুপারস্টারের। অভিষেকে জয়েরও স্বাদ পেয়েছেন বর্তমান ফিফ সেরা ফুটবলার। কিন্তু চিয়েভোর বিরুদ্ধে জুভেন্টাসের ৩-২ গোলের নাটকীয় জয়ে সি আর সেভেন ছিলেন অনুজ্জ্বল। গোল তো পাননিই, সেভাবে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাও খেলতে পারেননি পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। ৩৩ বছর বয়সী রোনাল্ডো রিয়াল থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে গত মাসে তুরিনের জায়ান্ট ক্লাবটিতে যোগ দেন। নিজে গোলের চারটি সুযোগ নষ্ট করলেও তিন পয়েন্ট নিয়ে জুভেন্টাস লীগ শুরু করায় ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত তিনি। রোনাল্ডো ম্যাচ শেষে টুইটারে বলেন, জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে প্রথম জয়ে আমি দারুণ খুশি। দলের সেরা তারকা গোল না পেলেও তাতে খুব একটা সমস্যা দেখছেন না জুভেন্টাস কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো এ্যালেগ্রি। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই গোলের অপেক্ষায় ছিল। রোনাল্ডো গোল করতে না পারাটা দুঃখজনক। কিন্তু সোরেতিনো দু’বার তাকে হতাশ করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়াটা সত্যিই স্বস্তিদায়ক। সে যা করেছে তাতে আমরা খুশি। সে নিজেও তার পারফর্মেন্স নিয়ে সন্তুষ্ট। আমরা এখনও রোনাল্ডোকে জানার প্রক্রিয়ায় আছি। সে পাওলো দিবালার সঙ্গে ভালই সমঝোতা করে খেলেছে। যতটা সহজে সে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে তাতে আমি দারুণ খুশি। এদিকে রোনাল্ডো রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর ক্লাব কর্তারা অনেক বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন। নতুন কোচ জুলেন লোপেতেগিও বলছেন, সি আর সেভেনের অভাব অনুভূত হবে না। কিন্তু বাস্তবে কি ঘটছে? মৌসুমের শুরুতেই পর্তুগীজ তারকাকে ছাড়া কেমন যেন এলেমেলো লাগছে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নদের। দলটির তারকা ডিফেন্ডার মার্সেলো তো স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, রিয়ালে রোনাল্ডোর অভাব সুস্পষ্ট। সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে রোনাল্ডো-মার্সেলোর রসায়নটা বেশ ভালই ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে গুঞ্জন আছে, পর্তুগীজ তারকার পথ ধরে জুভেন্টাসে যেতে পারেন ব্রাজিল তারকাও। এক সাক্ষাতকারে মার্সেলো বলেছেন, রোনাল্ডো বিশ্বের সেরা। তার সঙ্গে খেলার অভাব আপনি নিঃসন্দেহে মিস করবেন। তবে গ্যারেথ বেল এবং করিম বেঞ্জামাও অনেক ভাল। লা লীগায় জিরোনার বিরুদ্ধে ৪-১ গোলে জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন বেঞ্জামা। তারপরও রোনাল্ডোকে নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে ফরাসী ফরোয়ার্ড বলেন, আপনি কখনোই রোনাল্ডোকে ভুলতে পারবেন না। রিয়ালের জন্য তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন, অনেক অনেক গোল করেছেন। মার্সেলো যেমনটা বলেছেন, ঠিকই তিনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু তারপরও ভিন্ন ভিন্ন খেলোড়দের নিয়ে গড়া একটি ভিন্ন দল সম্পর্কে আমাদের চিন্তা শুরু করতে হবে। নেইমারও পিএসজিতে নতুন মৌসুম প্রত্যাশামতো শুরু করেছেন। ফিরেই গোল পেয়েছেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। বিশ্বকাপজয়ী কিলিয়ান এমবাপে তো নেইমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ফরাসী ফরোয়ার্ড বলেন, নেইমার একজন সুপারস্টার, আমার চেয়ে বড় তারকা। আমি এখনও ওই পর্যায়ের না। এটা প্রমাণ করতে বার্সায় সে অনেক বছর পরিশ্রম করেছে। এই দলে আমাদের অনেক খেলোয়াড় আছে যারা সুপারস্টার। রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় এমবাপে বলেন, আমার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু হচ্ছে। ক্লাবের সঙ্গে থাকি বা জাতীয় দলে, আমার উচ্চাকাক্সক্ষা থাকে। কোন কিছু না করে আপনি বসে থাকতে পারেন না। আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে। নেইমারের মতো খেলোয়াড়ের পাশে খেলতে পারা সৌভাগ্যের।
×