ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুগন্ধার ভাঙ্গনে ঝুঁকির মুখে দোয়ারিকা সেতু

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ আগস্ট ২০১৮

সুগন্ধার ভাঙ্গনে ঝুঁকির মুখে দোয়ারিকা সেতু

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রমত্তা সুগন্ধা নদীর রাক্ষুসী থাবায় একরাতেই বাবুগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ মোশারফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পানির ট্যাঙ্কসহ প্রায় সাত শ’ বর্গফুট এলাকা ও পাউবোর বাঁধ হারিয়ে গেছে। সোমবার রাতের এ রাক্ষুসী থাবার পর মঙ্গলবার সকালে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্কুল ভবনের একাংশের নিচ থেকে মাটি দেবে গেছে নদীতে। আকস্মিক ভাঙ্গনে স্কুল ভবনের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের শতকোটি টাকার বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (দোয়ারিকা সেতু) পড়েছে ঝুঁকির মুখে। সেতুর পাদদেশে মহাসড়কের পূর্ব পাশের সংযোগ মুখের গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পড়েছে নদীতে। সেতুর গার্ডার অঞ্চলেও গ্রাস করেছে ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক বাঁধের প্রায় ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, সেতুটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তাই এটি রক্ষার দায়িত্ব তাদের। সেতু রক্ষার জন্য প্রয়োজন নদী শাসনসহ আলাদা বৃহৎ প্রকল্প। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সওজকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। এজন্য আমাদের দফতরে আলাদা কোন অর্থবরাদ্দ নেই। অপরদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বরিশাল অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা আমাদের কাজ নয়। তাই ভাঙ্গন রোধের কোন কারিগরি জ্ঞান কিংবা অর্থবরাদ্দ নেই সওজের। আমরা রাস্তাঘাট মেরামত করি। সরকারী সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য আর পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর ঠেলাঠেলিতে এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বপ্নের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা) সেতু। সৈয়দ মোশারফ-রশিদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম রেজা জানান, এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাহাবুবুর রহমানসহ এলাকার কয়েক শিক্ষানুরাগীর মহতী চেষ্টায় ২০০৩ সালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর পাদদেশে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। সম্প্রতি স্কুলের সামনের পাউবোর ব্লক পাইলিং ভেঙ্গে পড়ার পর স্থানীয়ভাবে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান সংগ্রহ করে পার্কোপাইন ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেও কোন সুফল মেলেনি। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বরিশাল-৩ আসনের সাংসদ এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান ক্ষোভের সঙ্গে সাংবাদিকদের জানান, সরকারী প্রতিষ্ঠান পাউবো এবং সওজ একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা করার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। গতবছর সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে সৈয়দ মোশারফ-রশিদা স্কুল ও বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কোন সুফল মেলেনি। তিনি আরও বলেন, দাফতরিক অবহেলায় স্কুলটি আজ নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সেতুটির বিপর্যয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
×