ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১০ সদস্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার বন্ধ হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ আগস্ট ২০১৮

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার বন্ধ হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাওয়া ১০ সদস্যের সিন্ডিকেটকে শোকজ করবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস (আরবিএম) আয়োজিত ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি শীর্ষক’ মিট দ্য প্রেসে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এ কথা বলেন। অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস (আরবিএম) সভাপতি ফিরোজ মান্নার সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় মিট দ্য প্রেসে এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা প্রমুখ। মিট দ্য প্রেসে মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, অভিযুক্ত ১০ এজেন্সির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আজই (মঙ্গলবার) শোকজ করা হবে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ১০ এজেন্সিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করি নাই। মালয়েশিয়ার সরকার ১০ এজেন্সিকে দিয়েছে, আমরা দেইনি। আমাদের কাছে সবাই সমান। যে আসুক... আপনি নিয়ে আসেন। কেউ ডিমান্ড (চাহিদা পত্র) নিয়ে আসুক, আমরা দিতে পারব। ১০ জনের বিরুদ্ধে আমি সব সময় ছিলাম, এখনও আছি। আমি সিন্ডিকেশনে বিশ্বাস করি না। আপনারা কেউ আমার কাছে দরখাস্ত করেন, দেখেন আমি তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেই। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেটের বিষয়টি নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। তারা যে এত বড় খারাপ কাজ করেছে তা আমার জানা নেই। শোকজের জবাব পেলেই আমি মালয়েশিয়ায় সফরে যাব। ইতোমধ্যে হাইকমিশনের মাধ্যমে ওই দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া সফরের আগে ১০ এজেন্সি সম্পর্কে আমাকে ভালভাবে জানতে হবে। অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটের তিন সদস্যকে মালয়েশিয়া ঢুকতে না দেয়ার নিষেধজ্ঞা জারি করা হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবারেও তিনি বলেন এ বিষয়েও আমি কিছু জানিনা। ১০টি এজেন্সি হলো ইউনিক ইস্টার্ন, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ এ্যাসোসিয়েটস, আমিন ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ। নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাই মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধের কথা বলছেন। এটা মিডিয়ার সৃষ্টি। আসলে কি মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে? মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এখনও খোলা। তারা শুধু একটা ব্যবস্থাকে বাতিল করেছে। ওই ব্যবস্থার বাইরে পুরনো ব্যবস্থাও মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। এখনও ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা মালয়েশিয়া চাকরি নিয়ে যাবেন। আমরা আশা করছি এর মধ্যে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, আমরা এখনই তাদের শোকজ করব। ব্যাখ্যা চাইব। আমরা ডাটাগুলো আগে কালেকশন করে নেই। তারপর দেখেন কি ব্যবস্থা নিতে পারি। মন্ত্রণালয় তো এত অসহায় হতে পারে না। প্রভাবশালী যারাই সিন্ডিকেট করে থাকুক আমরা কোন প্রকার ত্রুটি পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমি বার বার বলছি, বাজার বন্ধের খবরটা সত্যি নয়। মালয়েশিয়ার লোকের দরকার আছে। এই মুহূর্তে তাদের ২ লাখ ৮৯ হাজার কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এখন যেটা তারা করছে, লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন করতে পারে। বাজার বন্ধের বিষয়ে আমরা কোন চিঠি পাইনি। যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে তা সিনারফ্ল্যাক্সকে দেয়া হয়েছে। চিঠি পেলে যোগাযোগ করব। ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে বিদেশী কর্মী ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষ কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়টিও তিনি জানেন বলে মিট দ্য প্রেসে বলেন। মিট দ্য প্রেসে সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার খবর সঠিক নয়। শ্রমবাজার খোলা আছে এবং আগামীতেও থাকবে বলে জানান তিনি। জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে সে দেশের বেসরকারী কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্স-র অনলাইন সিস্টেম এসপিপিএ-এর মাধ্যমে যেভাবে কর্মী যাচ্ছিল শুধুমাত্র এই সিস্টেমটি (পদ্ধতি) বাতিল করেছে মালয়েশিয়া সরকার। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই পদ্ধতিতে আর কোন লোক যাবে না। তবে পাইপলাইনে থাকা ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কর্মী এসপিপিএ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়া যেতে কোন বাঁধা নেই। জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ ৬৯ হাজার কর্মীর চাহিদা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ২ লাখ ৩৫ হাজার কর্মীর ভিসা সত্যায়ন করেছে মালয়েশিয়া হাইকমিশন। মালয়েশিয়া ৮৬টি কোম্পানির ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে প্রায় ৩২ হাজার ভিসা সত্যায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২ লাখ কর্মীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
×