ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন বানচালে রাজনৈতিক ঐক্য হলে ছাড় দেয়া হবে না ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৯ আগস্ট ২০১৮

নির্বাচন বানচালে রাজনৈতিক ঐক্য হলে ছাড় দেয়া হবে না ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যে কোন রাজনৈতিক দলের ঐক্য হলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, সকল দল নির্বাচনে আসবে এটাই চাই। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের প্রাসঙ্গিকতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি ১৯৫২-২০৪১’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান, ৭১ টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব আব্দুল হান্নান, গোলাম দোস্তগীর গাজী প্রমুখ। সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, মোঃ জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি মোঃ মুনতাকিম আশরাফ, পরিচালক আবু নাসের, শমী কায়সার প্রমুখ। তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে অনুযায়ী নির্বাচনী সব প্রস্তুতির কাজ করছে ইসি। ওই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে এটাই আমরা চাই। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে জ্বালাওপোড়াও, হরতাল কিংবা অবরোধের মতো কর্মসূচী দিলে কোন ছাড় নয়। এসব কর্মসূচী শক্ত হাতে দমন করবে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিকল্প কিছু নেই। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সরকার দৈনন্দিন কাজকর্ম করবে। আর ইলেকশন কমিশন নির্বাচনের যাবতীয় সব কাজকর্ম করবে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে এই দলটি অংশগ্রহণ না করলে তাদের পরিণতি হবে ভাসানী সাহেবের ন্যাপের মতো। বাটি চালান দিয়েও বিএনপিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ন্যাপের অস্তিত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। তাই বলবো, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচনে আসুন। অতীত ইতিহাস স্মরণ করে তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ওই সময় ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ভাসানী ঘোষণা করলেন, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। কিন্তু দেশতো ভাসানী সাহেবের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যদিয়ে পুরোজাতিকে তিনি এক প্লাটফর্মে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বলেন, তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর সবদিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে আমরা এগিয়ে গেছি। আমাদের রফতানি, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সবদিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক মজবুত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এমডিজি অর্জনের ধারবাহিকতায় এসডিজি অর্জনেও আমরা সাফল্য পাব। ২০৩০ সালের পর দেশে আর কোন দারিদ্র্য মানুষ থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা হবে। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ স্বাধীনের পরই বঙ্গবন্ধু দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ শুরু করেন। দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আমরা ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা, শিল্পপতি, সাংবাদিক, সেনাবাহিনীর অফিসার হতে পেরেছি। তা না হলে আমাদের কেরানির চাকরি করতে হতো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন মাত্র কিন্তু ওই সময়ই তাঁকে হত্যা করা হয়। তবে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনাই এখন একটি ব্র্যান্ড। প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ৩৭ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এই পরিমাণ জনসংখ্যাও নেই। বঙ্গবন্ধু জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু করেছিলেন। আর তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। ড. আতিউর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সূচিত হয়। কিন্তু তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, উদ্যোক্তারাই দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এক দশকে এখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। একজন ভিক্ষুক এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুযোগ নিতে পারছেন। তিনি বলেন, রফতানি বাড়াতে পোশাকখাতে সবুজ কারখানা গড়ে তুলতে হবে। সবুজ অর্থনীতি গড়তে সবাইকে কাজ করতে হবে। মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, বঙ্গন্ধুর সাড়ে তিন বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে যারাই দেশ পরিচালনা করছেন তারা সেই প্রবৃদ্ধি ১-২ শতাংশের মধ্যে রেখেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর তা সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। তিনি বলেন, মুজিববাদী অর্থনীতিই দেশকে এগিয়ে নিয়েছে। মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ান, আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি দিব। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশে এখন বিনিয়োগ বেড়েছে। বিদেশীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের যথেষ্ঠ সুযোগ রয়েছে।
×