ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘জয় ১০৯’ সার্চে মিলবে এ্যাপটি

নারীর আপৎকালীন সুরক্ষায় মোবাইল এ্যাপস ‘জয়’

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৯ আগস্ট ২০১৮

নারীর আপৎকালীন সুরক্ষায় মোবাইল এ্যাপস ‘জয়’

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ নারীর আপৎকালীন সুরক্ষায় একটি মোবাইল ফোন এ্যাপসই যথেষ্ট! এই যুগোপযোগী এ্যাপের মাধ্যমে মুহূর্তেই নারীরা সেবা পাবেন। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে সরকারের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে চালু হয়েছে ‘জয়’ নামক একটি মোবাইল এ্যাপ। স্মার্টফোনের গুগল প্লে স্টোরে ‘জয় ১০৯’ সার্চ দেয়ার মাধ্যমে মিলবে এ্যাপটি। এবার এটি ডাউনলোডের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ইনস্টল করা থাকলে যে কোন বিপদে এ্যাপটি চালু করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি ও শব্দ সংগ্রহ করে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও নিকটজনদের কাছে বার্তা পাঠাবে। নারীরা বলছেন, এ্যাপটির বিষয়ে প্রচার বাড়ানোর মাধ্যমে প্রত্যেক নারীর হাতেই জয় এ্যাপসটি পৌঁছে যাবে। সেক্ষেত্রে নারীর যে কোন বিপদকালীন সময়ে এ্যাপসটির মাধ্যমে সহজেই সুরক্ষা পাবেন। চলতি পথে হরহামেশাই নারীদের উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ কিংবা শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে এ সব ঘটনা গড়ায় মামলা পর্যন্ত। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে, পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। তবে এবার জয় মোবাইল এ্যাপ পূরণ করবে সেই ঘাটতি। এই এ্যাপটি নারী-শিশুর বিপদে কাজ করবে হাতিয়ার হিসেবে। স্মার্টফোনে এ্যাপটি চালু থাকা অবস্থায় কোন বিপদ এলে, আপনা থেকেই ঘটনাস্থলের অবস্থান, ছবি ও শব্দ পৌঁছে যাবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জরুরী সেবা নম্বর ১০৯ এর সার্ভারে। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পুলিশ কর্মকর্তার কাছেও পৌঁছবে তথ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এসব তথ্য মামলা চালাতেও শক্ত ভূমিকা রাখবে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিনায়তনে ‘জয়’ এ্যাপটি উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। উদ্বোধনের পনেরো দিনে এক হাজারের বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে এ্যাপসটি। আর অভিযোগ এসেছে প্রায় তিনশটি। এ বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদফতর বলছে, ভবিষ্যতে এই এ্যাপসটি বাংলাদেশ পুলিশের জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এর সঙ্গে সংযুক্ত হবার কথা রয়েছে, সেটি হলে শুধু নারী ও শিশুই নয়, যে কেউ তার বিপদের সময়ে এই এ্যাপসটি থেকে সুবিধা পেতে পারবেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় ১২ কোটি মানুষের হাতে এখন মোবাইল ফোন। এই এ্যাপটি যুগোপযোগী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। প্রচার বাড়লে সম্পূর্ণ ফ্রি এই সেবা পেতে নারী ও শিশুরা আরও এগিয়ে আসবেন। বিপদের সময় কোন কারণে অন না করা গেলে, ফোনের পাওয়ার বাটন চারবার চাপলেই, চালু হয়ে যাবে এ্যাপটি।’ এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি রওশন আরা বেগম, ‘অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণের অভাবে অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যায়। এবার এই এ্যাপসে বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও, অডিও, ছবিসহ সকল তথ্য জমা থাকবে। প্রয়োজনে আমরা সেগুলো ব্যবহার করে একটি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারব। আশা করছি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতেও আমাদের সুবিধা হবে। মূলত এই এ্যাপসটি নারীদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে নারীদের অবগত হতে হবে। নারী নির্যাতন রুখতে নারীদেরই বলিষ্ঠ হতে হবে। নারী নির্যাতন রোধকল্পে সরকার জিরো টলারেন্সসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করবে। আমাদের সেসব সম্পর্কে জেনে সচেতন হতে হবে।’ জয় মোবাইল এ্যাপ হলো তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অধীন এটুআই প্রোগ্রামের অর্থায়নে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের উদ্ভাবিত একটি এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। এ্যাপসটি নির্যাতনের শিকার বা নির্যাতনের আশঙ্কা রয়েছে এমন নারী ও শিশুকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করার প্রয়াসে উদ্ভাবিত। যেকোন এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সম্পন্ন ফোন থেকে গুগল এ্যাপস্টোরের সার্চ অপশনে গিয়ে ‘জয় ১০৯’ লিখে সার্চ করে এ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। উক্ত এ্যাপের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের জরুরী মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপার, মেট্রো এলাকার উপ-পুলিশ কমিশনার, নির্দিষ্ট ৩টি এফএনএফ নাম্বার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্প লাইন সেন্টার (১০৯) এ এসএমএস আসবে। নির্যাতন অথবা সহিংসতার মুহূর্তে মোবাইলে নির্দিষ্ট ইমার্জেন্সি বাটন চেপে ভিক্টিমের জিপিএস লোকেশন, ছবি এবং অডিও রেকর্ডিং মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো যাবে। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জয় এ্যাপস সেন্টার থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লিখিত অভিযোগ পাঠানোর জন্য এ্যাপসটির ‘অভিযোগ করুন’ অপশনে গিয়ে অভিযোগের ধরন বাছাই করে বিবরণসহ অভিযোগ করা যাবে। এ ছাড়াও ‘সংযুক্ত করুন’ অপশনে ছবি এবং অডিও সংযুক্ত করে প্রেরণ করা যাবে। এ্যাপস থেকে ধারণকৃত ছবি ও অডিও শুধুমাত্র বাস্তবায়নকারী সংস্থা অর্থাৎ জয় এ্যাপস সেন্টার থেকে দেখা যাবে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হবে। সিস্টেম আপডেটের সঙ্গে সঙ্গে এ্যাপসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে। ভিকটিমের তাৎক্ষণিক প্রতিকার প্রদান এবং অপরাধী শনাক্ত করার জন্য এ্যাপসটি একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জনগণের দোরগোড়ায় সেবা সহজীকরণ ও সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। এছাড়া উদ্ভাবনী সংস্কৃতির মূলধারার সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা বৃিদ্ধ এবং নারীর ক্ষমতায়ন, অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
×