ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গরুর নাড়িভুঁড়ি হাড় শিংয়ের ব্যবসা জমজমাট

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৯ আগস্ট ২০১৮

গরুর নাড়িভুঁড়ি হাড় শিংয়ের ব্যবসা জমজমাট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানি দেয়া গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার হাড়, শিং, অ-কোষ, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রথলি, পাকস্থলী ও চর্বি সাধারণত ফেলে দেয়া হয়। তবে এগুলো এখন আর ফেলনা নয়। এসব বর্জ্য থেকেই হচ্ছে কোটি টাকার বাণিজ্য। বর্জ্যরে মধ্যে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, জাপান ও চীনে গরু-মহিষের পেনিস বা লিঙ্গ অত্যন্ত দামী বস্তু। এ দিয়ে তৈরি স্যুপ ওইসব দেশে খুবই জনপ্রিয় ও দামী খাবার। ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এসব দেশে পশুর একেকটি লিঙ্গ ৮-১০ ডলারে বিক্রি হয়। এছাড়া গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কাভার। প্রতিবছর কোরবানির সময় এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে ব্যবসা করেন ব্যবসায়ীরা। পরে প্রক্রিয়াজাতের পর বিদেশে রফতানি করেন। কোরবানির সময় ফেলে দেয়া গরু-মহিষের এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করে এক শ্রেণীর শিশু শ্রমিকরা। পরে তারা নির্দিষ্টস্থানে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থেকে তিন টাকা কেজি দরে পশুর হাড়, ২০-৩৫ টাকা দরে পশুর অ-কোষ, ১২০ টাকা দরে পাকস্থলী, শিং ১০০ টাকা, চোয়ালের হাড় তিন টাকা কেজি দরে কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লালবাগের রইসউদ্দিন বলেন, ‘বছরে একবারই আমরা এ ব্যবসাটা করি। বহুল প্রচারিত নয়, তারপরেও ভাল দাম পাই বলে বছরে একবারই এসব সংগ্রহে নামি। আমরা এগুলো সংগ্রহ করে কিছুটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিক্রি করে দেই। এগুলো কেনার জন্য লোকজন আসে। তাই বিক্রিতে ঝক্কি-ঝামেলা নাই, দাম ভালো।’ জানা গেছে, গরুর হাড়, শিং, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রনালি, চর্বি, রক্তের মতো বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাত করা গেলে এগুলো কাজে লাগানো যেত। পশুর বর্জ্যরে বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার নিশ্চিত করা গেলেই কোরবানির পশুর বর্জ্য হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি খাত। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গতবছর পশুর বর্জ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ১৭০ কোটি টাকারও বেশি। আশা করা হচ্ছে, এ বছর এর পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সমিতি বলছে, এ বছর কোরবানির পশু থেকে দেড় থেকে দুই হাজার মণ বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। খাওয়ার পর ফেলে দেয়া হাড় ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহের জন্য কোরবানির সময় অতিরিক্ত শ্রমিক নেয়া হচ্ছে গতবছর থেকে। এছাড়া, চামড়া থেকে আসা বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে বিভিন্ন ট্যানারি থেকে। ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া দিয়ে তৈরি জুতার সোল ও প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। পশুর রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও যব মিলিয়ে তৈরি দানাদার মিশ্রণ ব্যহার করা হয় মুরগি ও পাখির খাবারের জন্য। পশুর চর্বি দিয়ে তৈরি হয় সাবান।
×