ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় ভারত মহাসাগর সম্মেলনে সুষমা স্বরাজ

চাই সামুদ্রিক নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৯ আগস্ট ২০১৮

চাই সামুদ্রিক নিরাপত্তা

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্প্রতি পরিবর্তী পরিস্থিতিতে নতুন যেসব নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিচ্ছে তিনি সেগুলো মোকাবেলার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। সুষমা সোমবার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে তৃতীয় ভারত মহাসাগর সম্মেলনে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে সোমবার ভারত মহাসাগর-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। এতে ৪৩টি দেশ ও অঞ্চল থেকে ২৮০ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। তৃতীয় ভারত মহাসাগর বিষয়ক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘বিল্ডিং রিজিওনাল আর্কিটেকচার’। এতে সুষমা বলেন, ‘সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ছাড়া ভারত মহাসাগরের বিশাল সম্পদ আমরা আহরণ করতে পারব না। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা একটির সঙ্গে অপরটি সংশ্লিষ্ট। নিরাপত্তা একটি বহুমুখী ধারণা, যার মধ্যে প্রথাগত, অপ্রথাগত ও নিত্যনতুন হুমকি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’ এই প্রেক্ষাপটে তিনি সমুদ্রে সন্ত্রাস, মানব ও মাদক পাচার, জলদস্যুতা, অবৈধ অভিবাসন, অনিয়ন্ত্রিত সামুদ্রিক নিরাপত্তা কোম্পানিগুলোর বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক হুমকির কথা তুলে ধরেন। সুষমা বলেন, ‘এটি পরিষ্কার কথা যে, ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব এ অঞ্চলের দেশগুলোর। এ কথাও একই রকম সত্য যে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারব।’ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় চার দিনের সফরের প্রথম পর্যায়ে সুষমা সোমবার হ্যানয় পৌঁছেন। আসিয়ান অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা আরও মজবুত করাই সুষমার এ সফরের লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, তাই শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি করা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের মধ্যে বিভিন্নতা থাকলেও বর্তমানে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবেলা করছি সেটি প্রায় অভিন্ন। আঞ্চলিক সমৃদ্ধি বাড়াতে যৌথ উদ্যোগ ও সহযোগিতার নীতিই আমরা গ্রহণ করেছি। সোমবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপেন্দ্র যাদব, ভিয়েতনামের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ফাম বিন মিন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান আন্তর্জাতকি আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আঞ্চলিক কাঠামো নির্মাণে তাদের মতবিনিময় করেন। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৪৭ বক্তা ও অন্য প্রতিনিধিরা নয়টি অধিবেশনে যোগ দেবেন। সম্মেলনে মূলত ভারত মহাসাগর অঞ্চলের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। পারস্পারিক আস্থা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমুদ্রের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ বিষয়ের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং বিভিন্ন হুমকির বিষয় নিয়ে সম্মেলেনের আলোচনায় স্থান পাবে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় আগের দুটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বললেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর মধ্য দিয়ে চীনকে একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের মাধ্যমে চীন ক্রমেই ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভারত মহাসাগর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। মোট জলভাগের ২০ শতাংশ এই মহাসাগর অধিকার করে আছে। এই মহাসাগরের উত্তরে ভারতীয় উপমহাদেশ, পশ্চিমে পূর্ব আফ্রিকা, পূর্বে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর।
×