ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় বিনোদনের পরিধি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৯ আগস্ট ২০১৮

ঢাকায় বিনোদনের পরিধি

রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার বিচিত্র সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখানে বিনোদনের পরিধিও যে সঙ্কুচিত ও সঙ্কীর্ণ সেটি ভালমতো অনুধাবন করা যায় দুই ঈদের লম্বা ছুটির সময়। দীর্ঘ অবকাশে মানুষ বিনোদনলাভের জন্যে বিভিন্ন স্পটে ভিড় জমায়। তাতে সত্যিকারের বিনোদন প্রাপ্তি অধরাই হয়ে ওঠে। ভুলে গেলে চলবে না, মানুষই একমাত্র প্রাণী যার বেঁচে থাকা তথা সুস্থ থাকার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই চলে না, মনের আহারও চাই তার। সে জন্য মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করে, তা না হলে অন্যের সৃষ্টি উপভোগ করে। তার চাই নির্মল বিনোদন। এই আনন্দ উপভোগ আবার ঠিক ঘরে বসে পুরোপুরি লাভ করা যায় না। যদিও আধুনিক যুগ তার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে নানা বিনোদনের অজস্র উপকরণ ও সম্ভার। তবু তার চাই ঘরের বাইরে যাওয়া, দল বেঁধে বিনোদন লাভ করা। একটি আধুনিক শহরের আয়তন অনুসারে সহনীয় সংখ্যক নাগরিক থাকা যেমন সমীচীন, তেমনি পার্ক ও উদ্যান থাকাও বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর সেই নগর যদি মহানগর বা রাজধানী হয় তবে তার পরিকল্পনা হতে হয় দূরদর্শী। খোলামেলা স্থান ও পার্ক একটি নগরের ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া মানে প্রাণটাই বিপদাপন্ন হয়ে ওঠাÑ সেকথা বলাই বাহুল্য। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে রাজধানী ঢাকার পার্কের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে এসেছে। হাতে গোনা যে কয়টি উদ্যান রয়েছে সেগুলো নানা কারণে কলুষিত হয়ে পড়ছে। ঢাকা মহানগরীতে মানুষের তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাই হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্রে দলে দলে মানুষ ভিড় জমায়। আর এই ভিড়ের ফলে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে আনন্দদায়ক স্থানগুলো। সেক্ষেত্রে কি আর নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ লাভ সম্ভব? প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রেরই একটি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। উপচে পড়া মানুষের ভিড়ে সম্ভব নয় সুস্থভাবে বিনোদন লাভ করা, মনের চাহিদাকে তৃপ্ত করা। বিভিন্ন ছুটিছাটায় আমরা তাই দেখতে পাই চিড়িয়াখানা, শিশু পার্কের মতো অতিচেনা ও অতিপুরনো বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। অবশ্য মানুষ বাধ্য হয়ে বিকল্প পথও খুঁজে নিচ্ছে। বিনোদনপ্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও। পছন্দের বিনোদন স্থানের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় জাদুঘর, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ধানম-ি লেক, রমনা পার্ক, আহছান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর, স্মৃতিসৌধ এবং নান্দনিক স্থাপনা-হাতিরঝিল। তবে ঢাকার ভেতরে এলাকাভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্রের কথা ভাবতে হবে। কেননা যানজটের কারণে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলের বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়া বড় ঝক্কির ব্যাপার। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) খালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে, দু’পাশে পরিবেশ উপযোগী গাছ লাগিয়ে ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলে বিনোদনপিয়াসী মানুষের বিনোদনের একটি স্পট তৈরি হতে পারে। অবশ্য খালটি দীর্ঘকাল অযতœ-অবহেলায় করুণ দশায় পতিত হয়েছে। তবু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে এটিও হতে পারে হাতিরঝিলের মতো অনুপম একটি বিনোদন কেন্দ্র। নতুন আইডিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে নতুন বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ঈদের ছুটিতে আত্মীয়স্বজনরা মিলে কোন একজনের বাসভবনের ছাদে বা সামনের খোলা প্রাঙ্গণে গান-কবিতা-গল্প বলা ও নৃত্য পরিবেশন এবং নানা ধরনের খেলা ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চমৎকার বিনোদন লাভ করতে পারে। এর মাধ্যমে সংস্কৃতিচর্চারও সুযোগ তৈরি হবে। সেটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে ভোজন-সংস্কৃতির বাইরে এ ধরনের আনন্দসমাবেশ উদ্যম ও উদ্দীপনা উপহার দিতে পারে।
×