ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের পাশে সাজিয়া আফরিন

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৮ আগস্ট ২০১৮

শিশুদের পাশে সাজিয়া আফরিন

সাজিয়া আফরিন সোমা। নির্যাতিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। ডিপ্রজন্মে এবার থাকছে এ তরুণের নিজের গল্প। আমার পড়াশোনা শেষ করার পর একটা সমবায় ব্যাংক এ চাকরিতে যোগদান করার সুবাদে সুযোগ হয় বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার। সেখানে যোগদানের পর আমার বুঝতে বেশি সময় লাগেনি যে মেয়েরা সবখানেই শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতিত। মেয়েদের প্রতি এমন মানসিকতা ভাল লাগেনি বলেই সেদিন কয়েক মিনিটের সিদ্ধান্তে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। আর ঠিক সে সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমি কাজ করব। চারদিকে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরগুলো আমাকে খুব ভাবাত, এর ভেতর বগুড়ায় দেড় বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি আরও বেশি কষ্ট দিয়েছিল আমাকে। এই নির্যাতনগুলোর বিরুদ্ধে তখন কিছু একটা করার চিন্তা করি, কিন্তু একার পক্ষে কিছু করাটাও ছিল অনেক কঠিন। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’- রবীন্দ্রনাথের লেখা এই লাইনে ভীষণভাবে প্রভাবিত আমি। আমি বিশ্বাস করি শুধু মনোবল আর আত্মবিশ্বাস থাকলে একাই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব। আর তাই শুধু এসব নির্যাতিত শিশুদের কথা মাথায় রেখেই নিজ উদ্যোগে শুরু করি আমার ‘রিহ্যাবিলিটেশন ফর এ্যাবিউসড চাইল্ড ইন বাংলাদেশ’- ‘আরএসিবি’-এর কাজ। একটা শিশুকে ৬-৭ বছর বয়স থেকেই চেনাতে হবে তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে। যে অংশগুলোতে রয়েছে শুধু তার একান্ত নিজের অধিকার। কোন্টা গুড টাচ, কোন্টা ব্যাড টাচ সেটা বোঝাতে হবে। কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিবারে শিশুদের এসব বিষয়ে জানানো বা শেখানো হয় না। অথচ নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে নিজেকে অথবা পরিবারকেই সচেতন হতে হবে, জানতে হবে কোন্গুলো নির্যাতন, কোন্ ধরনের নির্যাতনের ক্ষেত্রে কোথায় জানাতে হবে? আর তাই ‘আরএসিবি’ বিভিন্ন স্কুলের শিশুদের মাঝে শিশু যৌন নির্যাতন কি, তার প্রতিকার, প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করছে। মেয়েরা বয়ঃসন্ধি কালের বিভিন্ন সমস্যার কথা তাদের পরিবারে বলতে পারে না, বা গ্রামের কন্যা শিশুরা এই সময় সঠিক পরামর্শ বা চিকিৎসা পায় না, তাই স্কুলে স্কুলে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা চিকিৎসা পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (ভি এম) ও তালোড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশকিছু স্কুলে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শিশু নির্যাতন, তার প্রতিরোধ, বয়ঃসন্ধি কালের বিভিন্ন সমস্যার ডাক্তারি পরামর্শ ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছি। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা হতাশায় ভোগে তাই ‘আরএসিবি’Ñএসব শিশুর জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। নির্যাতিত শিশুদের জন্য আইনী সহায়তাও দিচ্ছে আমার এই সংস্থাটি। আমার ইচ্ছে আছে এভাবে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নির্যাতিত শিশুদের জন্য কাজ করার। এতিম শিশুরাও ভীষণভাবে নির্যাতিত হয় তাদের পরিবার-আত্মীয়ের কাছে। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে এতিম শিশুদের জন্যও কাজ করছি আমরা। এতিম শিশুদের জন্য বই ও পোশাক কিনে দেয়া ছাড়াও পড়াশোনার খরচ দিয়েও তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও এতিমখানায় বিকেলের নাশতা, মাসে একবার ভাল খাবারের ব্যবস্থা করাসহ শিশুদের চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে নির্যাতিত শিশুরা চাইলেই যেন তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারে বা পরবর্তীতে তাদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় সেই বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের সংস্থা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজগুলোর জন্য অর্থের যোগান আসে কোথা থেকে? ব্যক্তিজীবনে আমি একজন উদ্যোক্তা। আমার একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, সেটা দেখার পাশাপাশি আমি বাচ্চাদের জন্য কাজ করছি। আর অর্থের যোগান এখন পর্যন্ত আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই দিচ্ছে। দেশের যে কোন জায়গা থেকে যে কেউ সরাসরি বা যে কোন রকমভাবে এই সংস্থার পাশে দাঁড়াতে পারেন, যে ভাবে ‘আরএসিবি’-এর স্কুল কার্যক্রমের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে হুতুমপেঁচা টিম, আনিকা সাবা, জোবাইদা ফাতেমাসহ অনেকেই। সবাই মিলে যে যার অবস্থান থেকেই করতে পারি প্রতিবাদ, দাঁড়াতে পারি নির্যাতিত শিশুদের পাশে। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×