ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীরসরাইয়ে পাহাড়ে সবজির বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৮ আগস্ট ২০১৮

মীরসরাইয়ে পাহাড়ে সবজির বাম্পার ফলন

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ২৭ আগস্ট ॥ মীরসরাই উপজেলার পাহাড়ী ভূমিতে চলতি মৌসুমে হরেক রকম সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ী ঢালু জমি ও পাদদেশে বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হলেও স্থানীয় বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি স্থানীয়ভাবে বাজারজাত না করে বাইরে থেকে আগত ব্যবসায়ী পার্শ্ববর্তী ফেনী ও চট্টগ্রামের বড় আড়তদারের মাধ্যমে বাজারজাত করায় স্থানীয় বাজারে এর কোন প্রভাব পরছে না বলে জানিয়েছেন সবজি চাষী ও স্থানীয়রা। উপজেলার কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, মীরসরাই উপজেলার আয়তন : ৪৮২.৮৮ বর্গ কি.মি.। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৮.৯৩%, কৃষিভূমির মালিকানা ভূমি মালিক ৫১.৩০%, ভূমিহীন ৪৮.৭০%। শহরে ৩৮.৮২% এবং গ্রামে ৫২.০৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভার মধ্যে ১০টিতেই পাহাড়ী ঢালু জমি ও পাদদেশে স্থানীয় কৃষকেরা হরেক রকমের সবজির আবাদ করেছেন। সবজির মধ্যে রয়েছে করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাকরোল, লাউ, কুমড়া, বরবটি, ঢেড়শ, শসাসহ হরেক রকমের সবজি। এতদাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এ সকল সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে এ সকল সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারজাতকরণের জন্য উত্তোলনে ব্যস্ত। উত্তোলিত সবজি পরিবহনের সুবিধার জন্য সড়কের পাশে মওজুদ করে রেখেছেন। কি পরিমাণ জমিতে চলতি মৌসুমের সবজির চাষ হয়েছে, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান কৃষি বিভাগের কাছে না থাকলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মীরসরাই উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মীরসরাই সদর, খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন এবং সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার পাহাড় থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি মিনি ট্রাক যোগে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফেনী-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে কৃষক এবং বহিরাগত বেপারীরা। স্থানীয়রা ক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, উপজেলায় বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হলেও কাঁচা তরি-তরকারির বাজারে এর কোন প্রভাব পড়ছে না। তাদের তরি-তরকারির ভরা মৌসুমেও চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। কৃষকেরা স্থানীয়ভাবে বাজারজাত না করে উপজেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের উৎপাদিত সবজি। যার কারণে বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানীয় বিভিন্ন স্থান থেকে তরি-তরকারি ক্রয় করে এনে মীরসরাই প্রায় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার মস্তাননগর এলাকার ব্যবসায়ী একে আজাদ জানান, উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হলেও বাজারে এর কোন প্রভাব নেই। সবজির এ ভরা মৌসুমে বাজার থেকে চড়া দামে তরি-তরকারি ক্রয় করতে হচ্ছে। আড়তদার পেয়ার মিয়া জানান, এ বছর চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজির চাহিদা বেশি রয়েছে। পাহাড়ের ঢালে উৎপাদিত সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় চাহিদা বেশি বলে তিনি জানান। তিনি প্রতি সপ্তাহ তিন দিন শুক্রবার, সোমবার ও বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সবজি কিনতে আসেন। দুর্গাপুর ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাপুর এলাকার কৃষক সামসুদ্দিন ও জসিম জানান, তাদের এলাকায় স্থানীয় কৃষকেরা হরেক রকম সবজি উৎপাদন করেন। তারা বলেন ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাকরোল, বরবটি, ঢেড়শ, শসা প্রতি একর জমিতে চিচিঙ্গা চাষ করতে খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যা থেকে তারা বাজারদর অনুযায়ী বিক্রি করে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা অনায়াশে আয় করবেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া ও রাবার ড্যাম তৈরির ফলে উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ যেমনি সম্ভব হয়েছে তেমনি সারাবছরই চাষাবাদের দুর্লভ সুযোগ হয়েছে। মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ জানান, পাহাড়ী ভূমিতে বর্ষাকালে বিনা সেচে সব ধরনের ফসল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিশেষ করে প্রান্তিক চাষীগণ সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে তারা লাভবানও হচ্ছেন। মীরসরাই উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সবজি চাষীদের সরকারীভাবে সহায়তা প্রদান করলে একদিকে স্থানীয় ভোক্তারা কম মূল্যে সবজি ক্রয় করতে পারবে।
×