ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া পাচাররোধে সীমান্তে নজরদারি

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ আগস্ট ২০১৮

চামড়া পাচাররোধে সীমান্তে নজরদারি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ পশু কোরবানি শেষ। চলছে পশুর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা। এবার কাঁচা চামড়া বেচাকেনায় সরকারী দামের ধারের কাছে নেই। কেউ নির্ধারিত দর মানছেন না। সিন্ডিকেট গোষ্ঠী কমিয়ে দিয়েছে দাম। ফলে সিন্ডিকেটের কারণে নীলফামারীতে পানির দামে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই চামড়ার মূল্যে এই মহা ধস নেমেছে। নামমাত্র মূল্যে গরু ও ছাগলের চাপড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে মানুষজন। এতে করে কোরবানিদাতার আর্থিক কোন লোকসান না হলেও কপাল পুড়ছে এতিম, অসহায় ও গরিব মানুষের। কারণ কোরবানিদাতা চামড়া দান হিসেবে এসব মানুষ ও তাদের পুনর্বাসনে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চামড়ার দামে মন্দা দেখে গোটা চামড়া বিভিন্ন এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছে। আবার যে সকল মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছে একটু লাভের আশায় তারাও পড়েছে বিপাকে। এদিকে সীমান্ত গলিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কায় বিজিবির পক্ষে নেয়া হয়েছে কঠোর নজরদারি। ঈদের দিন বুধবার সন্ধ্যায় হতে ঈদের পরে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিকে যে সকল বসতবাড়ির মুসল্লিরা পশু কোরবানি দিয়েছে এমন অনেকে জানায় লাখ টাকার গরু হতে ৩০ হাজার টাকার গরুর চামড়ার মূল্য বলতে গেলে একই। কেউ ৮০০ কেউবা ৬০০ কেউবা ৫০০ আবার ৪০০ টাকায়ও গরুর চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের মৌসুমি পশুর চামড়া ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ৫০ পিস গরুর চামড়া কিনে মাথায় হাত পড়েছে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫০টি গরুর চামড়া গড়ে প্রতিটি ৫০০ টাকা করে ক্রয় করেছি মোট ২৫ হাজার টাকায়। ওই চামড়া কিনে এখন বাজারে পাইকাররা দাম বলছে অর্ধেকের একটু বেশি। চামড়া ভাল রাখার একমাত্র উপকরণ লবণ। তার দামও চড়া। জেলা শহরের ট্রাফিক মোড় বড়বাজারে চামড়া ক্রেতা পাইকারগণ গড়ে ৫০০ হতে ৬০০ টাকায় গরুর চামড়া ক্রয় করছে। আর ছাগলের চামড়া ক্রয় করছে ৩০-৩৫ টাকায়। এদিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে হাজার হাজার টাকা লোকসানে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, খুচরা ব্যবসায়ীরা এই দামেই চামড়া কিনছেন। কাঁচা চামড়ার মূল্য কমিয়ে দেয়ায় কোরবানিদাতার আর্থিক কোন লোকসান না হলেও কপাল পুড়বে এতিম, অসহায় ও গরিব মানুষের। কারণ কোরবানিদাতা চামড়া দান হিসেবে এসব মানুষ ও তাদের পুনর্বাসনে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ চামড়ার দামে মন্দা দেখে গোটা চামড়া বিভিন্ন এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছে। নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দারুলহুদা গ্রামের মৌসুমি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম জানান, দুই হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে ৮টি চামড়া কিনেছি। কিন্তু বাজারে চামড়ার আড়তদাররা সেগুলো দাম করছে ৯০০-১২০০ টাকা। বাধ্য হয়ে সেগুলো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া দালালদের কাজ থেকে চামড়া কিনে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারিতে সরবারহ করে থাকেন। কিন্তু এবারে আর্থিক সঙ্কটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ী মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চামড়া ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আতা, হাসিবুল ইসলাম ও উসমান গণি জানান, চামড়া সংরক্ষণের লবণের দামও বেড়ে গেছে। আবার নাটোর, ঢাকাসহ সব জায়গায় চামড়ার দামও কমে গেছে। বেশি দামে কিনে চামড়া বিক্রি করতে পারব কি না তা নিয়ে আশঙ্কায় আছি। নীলফামারী চেম্বারের সাবেক সভাপতি সফিকুল আলম ডাবলু বলেন, এই চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ চারবার হাতবদল হয়। চারবার কেনাবেচায় কখনোই লোকসান গুনতে হয় না আড়তদার কিংবা ট্যানারির মালিকদের। কিন্তু গ্রামের পাড়া মহলায়, চামড়া কিনে মাথায় হাত পড়ে (ঝুঁকি) মৌসুমি ও পাইকার চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন তারা। এই দুই পক্ষই লোকসানের মুখে পড়ে। নীলফামারীর জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ২০-২৫টি চামড়া ব্যবসায়ী তাদের পাওনা টাকা আদায় করতে না পারায় সঙ্কটে আছেন। অর্থ সংগ্রহ করতে না পারলে তাদের পক্ষে চামড়া ক্রয় করা সম্ভব হবে না। ফলে এবার কোরবানির ঈদে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকায় এ দেশীয় ফড়িয়া দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। নীলফামারীর ৫৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) পরিচালক লে. কর্নেল কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, চামড়া পাচাররোধে সীমান্তের যেসব এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই সেসব এলাকায় বিজিবিকে সর্তক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
×