ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলিং পদ্ধতিতে কঠোর হচ্ছে জ্বালানি বিভাগ

সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের গ্যাস বিলে সারচার্জ আরোপ চায় পেট্রোবাংলা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৮ আগস্ট ২০১৮

সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের গ্যাস বিলে সারচার্জ আরোপ চায় পেট্রোবাংলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের গ্যাস বিলে সারচার্জ আরোপ করতে চায় বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিল পরিশোধে দেরি করায় বিলম্ব ফি প্রদানের ব্যবস্থা যুক্ত করতে সম্প্রতি জ্বালানি সচিবকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন কর্পোরেশন চেয়ারম্যান। সূত্র বলছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দর পরিশোধ করতে বিলিং পদ্ধতিতে কঠোর হচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে পিডিবি বিল প্রদানের ক্ষেত্রে গড়ে চার মাস পর্যন্ত সময় নিয়ে থাকে। এতে বহুজাতিক কোম্পানির গ্যাসের দাম পরিশোধের ক্ষেত্রে তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। কোন কারণে বহুজাতিক কোম্পানির গ্যাসের দর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে লাইবরের সঙ্গে এক ভাগ হারে সুদ যোগ করে পরিশোধ করতে হয়। এতে কর্পোরেশন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়েজ উল্লাহ, (এনডিসি) গত ১০ আগস্ট জ্বালানি সচিব আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ চুক্তি ছাড়াই সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রে পেট্রোবাংলা গ্যাস দিয়ে থাকে। অন্যদিকে বেসরকারী কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পেট্রোবাংলার দ্বিপক্ষীয় গ্যাস সরবরাহ চুক্তি রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল না দিলে তাদের ১২ ভাগ হারে সারচার্জ প্রদান করতে হয়। চিঠিতে বলা হয়, এখন দেশে গ্যাসের ঘাটতি পূরণে এলএনজির বিল আমদানি পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়াও ওআইসির দাম পরিশোধের ক্ষেত্রেও সুদ দিতে হয়। কিন্তু সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর কাজে গড়ে চার মাসের বিল বকেয়া থাকছে। এই অবস্থায় সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের গ্যাস বিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রদানে বাধ্য করতে এই ব্যবস্থা বলে জানা গেছে। এখনও দেশের মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ৫৭ দশমিক ৮৭ ভাগ গ্যাস থেকে উৎপাদন হয়। দেশে মোট গ্যাস চালিত ১০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। গ্যাসচালিত বেশিরভাগ বিদ্যুত কেন্দ্রই সরকারী। পিডিবি ছাড়াও পিডিবির বিভিন্ন কোম্পানি এসব কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এলএনজি আসার পর বিদ্যুত কেন্দ্রে কিছুটা গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে। এলএনজি আসায় চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রে সরবরাহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এলএনজি আসায় সম্প্রতি হরিপুর বিদ্যুত কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি এলএনজির সরবরাহ বাড়লে কয়েকটি গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো হবে। এতে তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রেখে গ্যাস চালিত কেন্দ্র চালানোয় উৎপাদন খরচ কমে আসবে। এখন দৈনিক গড়ে এক হাজার ১শ’ থেকে এক হাজার দেড় শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুত কেন্দ্রে সরবরাহ দিয়ে আসছে পেট্রোবাংলা। এখনও একক গ্রাহক হিসেবে বিদ্যুত কেন্দ্রই গ্যাসের সব থেকে বড় গ্রাহক। পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পিডিবি বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিদ্যুত বিক্রি করে। বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা গ্রাহকের কাছে আবার ওই বিদ্যুত বিক্রি করে। এখনও সারাদেশের অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুত ব্যবহারের পর বিল দিয়ে থাকে। ফলে এখানে আগে সরবরাহ করতে হয় তারপর অর্থ আসে। এতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়। ফলে বিল প্রদানে কিছুটা বিলম্ব হওয়া স্বাভাবিক। কারণ বিতরণ কোম্পানিগুলোও পিডিবির অর্থ পরিশোধে দেরি করে থাকে। তবে ক্রমান্বয়ে প্রিপেইড মিটার চালু হলে এই সমস্যা কেটে যাবে। অন্যদিকে একই প্রক্রিয়ায় পেট্রোবাংলাও গ্যাস বিতরণ করে। পেট্রোবাংলা উৎপাদন কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে বিতরণ কোম্পানিকে দেয়। আবার বিতরণ কোম্পানি পেট্রোবাংলার গ্যাসের দাম পরিশোধ করলে পেট্রোবাংলা ওআইসি এবং অন্যব্যয় নির্বাহ করে।
×