ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় নাইক্ষ্যংদিয়া চরে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৮ আগস্ট ২০১৮

দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় নাইক্ষ্যংদিয়া চরে

চট্টগ্রাম অফিস/ স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিশাল একটি দল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হয়েছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের মংডুর নাইক্ষ্যংদিয়া চরে গত দুইদিন ধরে দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু জমায়েত হয়েছে। এরা যে কোন সময়ে এবং ফাঁক ফোকরে সীমান্ত গলিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষমাণ। এদের ইন্ধন দিচ্ছে কতিপয় এনজিও ও রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওপারের সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যজুড়ে বাংলাদেশী মোবাইল ফোন অপারেটরদের সিমকার্ডে নেটওয়ার্ক চলমান রয়েছে। যদিও গত বছরের ২৫ আগস্টের পর এই নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়েছে বলে ঘোষণা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, এপারের সঙ্গে ওপারের মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু রয়েছে। রোহিঙ্গাদের হাতে মোবাইলের ছড়াছড়ি। অনুরূপভাবে ওপারে অবস্থানরতদের হাতেও এপারের মোবাইল অপারেটরদের সিম কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে ওপারে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে এখনও ৬ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এরা নিজ বসতি এলাকায় যেমন যাচ্ছে না, তেমনি এপারে প্রবেশের তৎপরতাও লক্ষ্যণীয় নয়। তবে ফাঁক ফোকরে কেউ কেউ চলে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন মংডুর সীমান্ত এলাকা নাইক্ষ্যংদিয়া চরে দেড় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এদের মধ্যে অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী এপার থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে ১২ রোহিঙ্গার একটি দল টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টাকালে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটকে দিয়ে ফেরত পাঠায়। সূত্র জানিয়েছে, এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার সর্বক্ষণিক চেষ্টায় রত। মাছ ধরার নৌকা ভাড়া করে এরা এদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। বোট চালকরা মালিকদের মাথাপিছু ১ হাজার টাকা এবং প্রতি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা হারে আদায় করার পরিকল্পনাও চলছে বলে তথ্য মিলেছে। সূত্র আরও জানায়, রাখাইন রাজ্যের মংডু পাহাড়ের পূর্ব পাশের রোহিঙ্গা পল্লী পুইমালী, গুদামপাড়া, আলিয়ং, জংশং ও সিন্দিপ্রাং এলাকায় এখনও রোহিঙ্গা বসতি রয়েছে। সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা তাদের স্বজনদের মাধ্যমে মুঠোফোনে খবর পাঠাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ওইসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে তাদের বোটভাড়াসহ পথের খরচের জন্য নগদ টাকাও পাঠানো হচ্ছে। এ কারণে মিয়ানমারের মংডু নাইক্ষ্যংদিয়া চরে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানা গেছে। তবে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নাফ নদীতে কোস্টগার্ডের টহলও জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তসংলগ্ন এলাকার সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যের মংডু সিকদার পাড়া, মন্নিপাড়া, উকিলপাড়া, গদুছড়া, সাইরাপাড়া, দংখালী, গর্জনদিয়া, খুইন্যাপাড়া, ফাতনজা, কিলায়দং ও হাইচ্ছুরাতা এলাকায় মিয়ানমার সরকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহলে থাকলেও পাহাড়ের পূর্ব পাশে টহল দলের দেখা যায় না। পুইমালী, গুদামপাড়া, আলিয়ং, জংশং ও সিন্দিপ্রাং এলাকায় এখনও রোহিঙ্গা পল্লীতে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে, তা দেশটির প্রশাসনের জানা আছে। এ কারণে মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর সদস্যরা ওসব পাড়ায় টহলে যায় না বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ৪০টি এনজিও নামধারী সংগঠনের কর্মকা- নিষিদ্ধ করা হলেও এখনও দেশী বিদেশী দেড় শ’ এনজিওর কর্মকা- অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের বছর পূর্তি পালনকালে ইংরেজীতে লেখা ব্যানার ও নানা স্লোগান সম্বলিত টি শার্ট পরিধান করতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের। প্রশ্ন উঠেছে, শত শত ডিজিটাল ব্যানার ও হাজার হাজার পিস টি শার্ট রোহিঙ্গাদের কারা সরবরাহ করেছে। অঘোষিতভাবে আকস্মিক রোহিঙ্গারা কিভাবে এত বড় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভকালে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের পতাকা উড়িয়েছে। গত কোরবানির ঈদের পাঁচ দিন আগে ব্যাপক ত্রাণসামগ্রী ও কোরবানির পশু সরবরাহ করা হয়েছে। এনজিওর নামের যে কয়েকটি সংগঠন তাদের মধ্যে ইকরা, আসিয়াব, ইসলামিক রিলিফ, মুসলিম এইড, মারসি মালয়েশিয়া, এসকেবি, মুক্তি, আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন, পালস বাংলাদেশসহ বেশ কিছু সংস্থার বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব সংস্থায় কর্মরতদের জব ভিসাও নেই। ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে এরা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তার নামে কর্মকা- পরিচালনা করছে।
×