ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুদক স্বাধীন সংস্থা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ আগস্ট ২০১৮

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুদক স্বাধীন সংস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অনুমোদনের বিধান রেখে সরকার আইন করার উদ্যোগ নিলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন কারও অনুমতি নিয়ে কাজ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এক সপ্তাহ পূর্বে ফৌজদারি মামলায় কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে হলে অনুমোদন নেয়ার বিধান রেখে বহুল আলোচিত আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেয় সরকার। আর একসপ্তাহ পূর্বে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া আইন নিয়ে সোমবার দুদক কার্যালয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নতুন ওই আইন নিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ‘উচ্ছ্বসিত’ হওয়ার কোন কারণ নেই। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা, দুদকের আইন আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দুদককে পরাধীন সংস্থা করা হচ্ছে না ততদিন কিন্তু স্বাধীন থাকবে। দুদক কারও অনুমতি নিয়ে কাজ করবে না, এটা আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই।’ গত ২০ অগাস্ট অনুমোদন দেয়া এ আইন পাস হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক সঙ্কটে পড়বে কিনা জানতে চাইলে সরকারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ইকবাল মাহমুদ বলেন, আইনটা যেভাবেই পাস হোক না কেন, যে সব অসৎ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রয়েছে তাদের কিন্তু উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তাদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোন অসুবিধা হবে না। তবে কোন আইনই দুর্নীতিবাজদের ‘রক্ষা করার জন্য’ হয় না মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সৎ কর্মচারীদের সুরক্ষা দেয়ার আইনের প্রয়োজন আছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরাও চাই সৎ যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে তাদের সুরক্ষার প্রয়োজন। যে আইনই হোক না কে, জনগণের ইচ্ছা ও কল্যাণেই আইন হয়, জনকল্যাণেই আইন হবে আমি এটা প্রত্যাশা করি। নতুন আইন পাস হলে দুদকের ক্ষমতা খর্ব হবে কি না এই বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক ঠুঁটো জগন্নাথ হবে না এবং গ্রেফতারও থেমে থাকবে না। প্রয়োজনের সময় গ্রেফতার হবে। দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার করা সমস্যা হবে না। কমিশন যতদিন আছে ততদিন দুর্নীতি করে পার পাওয়া সহজ হবে না দাবি করেন চেয়ারম্যান। সরকার এ আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিলেও পরবর্তী পদক্ষেপে যাওয়ার আগে দুদক এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি না বলে জানান দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনও নেই। আমরা মনে করি সরকার দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষার জন্য কোন আইন তৈরি করবে না। প্রস্তাবিত আইনটা দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষার জন্য আইন না, বরং এটাকে আমি দেখি সৎ কর্মচারীদের সুরক্ষার আইন। নতুন আইন হলে ফাঁদ পেতে ঘুষের ঘটনা ধরার ক্ষেত্রে দুদক সমস্যায় পড়বে না বলেও জানান তিনি। এদিকে, গত ২০ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফৌজদারি মামলায় কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে হলে অনুমোদন নেয়ার বিধান রেখে আইনের খসড়ায় অনুমোদন দেয় সরকার। এই আইনের শিরোনাম আগে ‘সরকারী কর্মচারী আইন’ থাকলেও এখন তা নাম বদলে হয়েছে ‘সরকারী চাকরি আইন, ২০১৮। মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকের পর সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, ‘সব ধরনের ফৌজদারি অপরাধের জন্য ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। চার্জশীট হওয়ার পরে এ্যারেস্ট করার জন্য অনুমতি লাগবে না।’ ফৌজদারি মামলার কোন সরকারী কর্মচারীর এক বছরের বেশি মেয়াদে সাজা বা মৃত্যুদ- হলে রায়ের দিনই তাৎক্ষণিকভাবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। আর ফৌজদারি মামলায় এক বছরের কম কারাদ-, অর্থদ- বা উভয় দ- হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে তিরস্কার, বেতন স্থগিত করা বা বেতন কমিয়ে দেয়ার মতো ছোট শাস্তি দিতে পারবে বলে খসড়ায় ল্লেখ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে ‘ফাঁদ পেতে’ দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারী কর্মচারীদের ধরছে। নতুন আইন কার্যকর হলে সেটি বাধাগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সে সময় বলেন, বাধাগ্রস্ত হবে না, কিছুটা বিলম্বিত হবে। যদি কোন সরকারী কর্মচারীর ঘুষ নেয়ার ঘটনা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দেখে ফেলে, তখনও কি তাকে গ্রেফতার করা যাবে কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে শফিউল বলেন, ‘আমার মনে হয় যাবে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে (গ্রেফতার) করতে হবে।’ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৬ সালে ‘সিভিল সার্ভিস আইন’ নামে গণকর্মচারীদের জন্য আইন তৈরির উদ্যোগ নিলেও সে সময় কোন খসড়া প্রণয়ন হয়নি। পরে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই আইনের খসড়া তৈরি করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সরকারী কর্মচারী আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি একটি কমিটি করে দেয়। ২০১৪ সালের ২১ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ওই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই প্রস্তাবিত খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ২০১৬ সালের ২৪ নবেম্বর সরকারী কর্মচারী আইনের খসড়া ফের মন্ত্রিসভায় তোলা হলেও তাতে চূড়ান্ত অনুমোদন না দিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুশাসন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ কমিটি এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় তা উপস্থাপন করা হয়। এরপর প্রস্তাবিত আইনটির কয়েকটি ধারা বিশ্লেষণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি উপ-কমিটি করে দেয় সরকার। গত এপ্রিলে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে সচিব কমিটির সভায় তা অনুমোদন দেয়া হয়।
×