ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা ও তারেককে জড়াচ্ছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ আগস্ট ২০১৮

সরকার গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা ও তারেককে জড়াচ্ছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ আগস্ট ন্যক্কারজনক গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিএনপিও চায়। কিন্তু গ্রেনেড হামলা-মামলার এই রায়কে ঘিরে সরকার প্রধান, আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীনরা যে বক্তব্য দিচ্ছে তা কখনও কাম্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই হামলার বিষয়ে বিএনপি তখনও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, এখনও জানায়। আমরাও চাই এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। কয়েকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন। নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জড়িত করে সরকার নিজেদের ইচ্ছাপূরণের অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে বর্তমান সরকার গোটা বিষয়টাকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এ কারণে দলীয় একজন নেতাকে (আবদুল কাহ্হার আকন্দ) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার অন্যতম আসামিকে (মুফতি হান্নান) দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে হান্নান সরকারের ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে। এখন তারা বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছাপূরণের অপচেষ্টায় রত হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই উল্লেখ করেন। বলেন জাতীয় রাজনীতিতে এর বিষময় পরিণতি সম্পর্কে পুনরায় ভাবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে দেশের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন। সরকারের উচিত নতুন সঙ্কট সৃষ্টির পরিবর্তে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া। বিএনপির এই মহাসচিব আরও বলেন, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা সাব-জেলে বন্দী থাকার সময় এই মামলার পঞ্চম তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির তাকে জিজ্ঞেস করলে ১৬১ ধারায় গৃহীত জবানবন্দীতে তিনি কোথাও খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলার চার্জশীটভুক্ত দুই নম্বর সাক্ষী থাকার পরও তিনি আদালতে আসেননি, সাক্ষ্য দেননি, কোন কথা বলেননি এবং সহযোগিতাও করেননি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানানো হয়, উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা তদন্তকাজে অসহযোগিতা করেন উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আকন্দের পেশকৃত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্যই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। শেখ হাসিনাও ক্রমাগত বলে এসেছেন, এই হামলার ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। কিন্তু আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনা কোন তদন্ত কর্মকর্তা কিংবা আইনজীবীকে কখনও খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছেন বলেননি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ ছাড়া কিছু নয় অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরও উল্লেখ করেন, ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার ও সরকারী দল যেভাবে বিএনপি এবং বিএনপির মূল নেতাদের অন্যায়ভাবে বিপদাপন্ন করার জন্য তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা ও তদন্ত কর্মকর্তা এমনকি বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নগ্ন প্রয়াস চালাচ্ছে তা কোন সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকার বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টা করছে। বিচারক নয়, এখন কোন মামলার রায় কী হবে, কবে হবে, তা ঠিক করেন আইনমন্ত্রী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলার রায়ের পর বিএনপি নেতৃত্ব-সঙ্কটে পড়বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, এই কথার অর্থ হলো ওবায়দুল কাদের জানেন কী রায় হতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বলা এসব বক্তব্যকে কোন বিচারেই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার কিংবা আইনের শাসনের পক্ষে বলা যাবে না। একমাত্র স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই শুধু এমন ঘটনা সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মইনুল ইসলাম খান শান্ত, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামালসহ আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন মেজবাহ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে মিছিল ॥ এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীর ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। চানখারপুলে ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশের নেতৃত্বে দেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সোমবার সকাল ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন গেট থেকে মিছিলটি বের হয়ে চানখারপুল মোড়ের কাছে গিয়ে শেষ হয় মিছিলটি। মিছিলের আগে সমাবেশে রিজভী বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
×