ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গণহত্যা: জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০২:৩৫, ২৭ আগস্ট ২০১৮

অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গণহত্যা: জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে মনে করছে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। আইন প্রয়োগের নামে ভয়ঙ্কর ওই অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার ওই প্রতিবেদনে রাখাইনের পাশাপাশি শান ও কাচিন অঞ্চলেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির বেসামরিক সরকার ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে’ দিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ‘আলামত ধ্বংস’ করেছে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে ‘ব্যর্থ হয়েছে’। আর এর মধ্যে দিয়ে মিয়ানমার সরকারও নৃশংসতায় ‘ভূমিকা’ রেখেছে। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল। তাদের কথায় পাওয়া যায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের ওই লড়াই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে, কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে নয়। জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলে হয়, যে পরিমাণ নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা সেখানে বলা হচ্ছে, তার তুলনায় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার পার্থক্যটা খুবই স্পষ্ট। রয়টার্স লিখেছে, কোনো নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম বা বর্ণের গোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হলে তাকে জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য। তাদের ২০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ‘যথাযোগ্য’ আদালতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার মত যথেষ্ট তথ্য ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমানের নেতৃত্বে গঠিত এই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের পাশাপাশি পাঁচজন জেনারেলের নাম উল্লেখ করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের কাজের পদ্ধতি অনুযায়ী ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে এর একটি অনুলিপি মিয়ানমার সরকারকে দিয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য তারা করেনি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল তুন তুন নাইকে ফোন করা হলেও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
×