ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

’১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন প্রশ্নে অমর্ত্য সেন

বিজেপিবিরোধী অসাম্প্রদায়িক শক্তি একজোট হোন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ আগস্ট ২০১৮

 বিজেপিবিরোধী অসাম্প্রদায়িক শক্তি একজোট হোন

ভারতের ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর একজোট হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার শিশির মঞ্চে প্রতীচী ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘ভারত কোন্ পথে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেছেন। খবর নিউজ ১৮ অনলাইনের। অমর্ত্য সেন বলেন, সব অসাম্প্রদায়িক, বিজেপিবিরোধী শক্তিকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে একজোট হতে হবে। বামদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। গণতন্ত্র এখন বিপদে রয়েছে। আমাদের উচিত স্বৈরশাসনের বিরোধিতা করা। আমাদের উচিত স্বৈরাচারী প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করা। আমাদের এমন সমস্যাগুলোর সমালোচনা করা উচিত যেখানে আমরা অসাম্প্রদায়িক ডানপন্থীদের বিরোধিতা করতে সক্ষম হই। তবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা একজোট হব। যা একটি বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কে বাম, কে বামবিরোধী তা না দেখে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে সামনে রেখে হাত মেলানো উচিত। এই চিন্তা নিয়েই আগামীর নির্বাচনে বিরোধীদের এগিয়ে যাওয়া উচিত।’ কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে অমর্ত্য সেন বলেন, মাত্র ৩১ শতাংশ ভোটের জোরেই ৫৫ শতাংশ আসন পেয়ে ২০১৪ সালে একটি দল ক্ষমতায় এসেছে। তাই তাদের গুরুত্ব সংখ্যায় নয়। তবে তারা রাজনীতির পথে যা আয়ত্ত করা সম্ভব, তা করতে পেরেছে। এই কথাগুলো মাথায় রেখে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের এগোনো উচিত।’ অমর্ত্য সেন পশ্চিমবঙ্গের কথাও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, কে বামপন্থী বা কে ডানপন্থী, তা না ভেবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে হাত মেলানো উচিত। অমর্ত্য সেন আজকের পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের মধ্যে নিজেদের প্রকাশ করার তেজটা কমে যাওয়ার দিক তুলে ধরে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। অসমে এনআরসি প্রকাশের পর বামদের আগেই বামবিরোধী তৃণমূল কীভাবে প্রতিবাদ করে এলো, সেই প্রশ্ন তুলে বলেছেন, তিনি একজন বামপন্থী। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থীরা একমাত্র বিকল্প। বামপন্থীদের আবার সোচ্চার হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। বামপন্থীদের ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক দলগুলোর মধ্যে বিভাজনের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ অনেকটা ঠাট্টা করে বলেছেন, ছোটবেলায় শুনতাম, ঈশ্বর আছে কি নেই। এখন অনেকেই বুঝতে পারেন না, সিপিএম আছে কি নেই! ভারতে নারী নির্যাতন ও নারী পাচার নিয়ে অমর্ত্য সেন বলেছেন, এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। দেশের একাধিক সমস্যার মধ্যে এটি একটি অন্যতম সমস্যা। এর বিরুদ্ধেও আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। অমর্ত্য সেন ভারতে সহিষ্ণুতার অভাব নিয়ে ‘বিপন্ন ভারত’ নামের একটি প্রবন্ধ সঙ্কলনের মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে তিনি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বামপন্থার লড়াই নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশ্নের জবাবে নানা কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আবহমান ভারতে সংখ্যালঘু মানেই কিন্তু দুর্বল নয়। বুদ্ধের পেছনেও সংখ্যা ছিল না। তথাকথিত সংখ্যালঘু মানে দেশের অনেকে আপনার বিরুদ্ধে, এটা ভাবাও ঠিক নয়। তাই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করলেই তাদের সংখ্যাগুরু হিসেবে মেনে নিলে সেটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো হবে। তাই এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা বর্জন করা উচিত।
×