ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিপাবলিকান পার্টির প্রতীক

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ আগস্ট ২০১৮

রিপাবলিকান পার্টির প্রতীক

মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন শনিবার ৮১ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি একজন প্রভাবশালী মার্কিন রাজনীতিক ছিলেন। গত বছর তার ব্রেইন ক্যান্সার ধরা পড়ে। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তাকে রিপাবলিকান পার্টির এক প্রতীকে পরিণত করেছিল। -এএফপি গত বছরের জুলাইয়ে তার বাম চোখের ওপরে জমে যাওয়া রক্ত অস্ত্রোপচার করার সময় মস্তিষ্কে টিউমারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত চিকিৎসা নেন। মারা যাওয়ার একদিন আগে শুক্রবার তিনি চিকিৎসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। তার পুরো নাম জন সিডনি ম্যাককেইন তৃতীয়। তিনি জর্জ ওয়াশিংটনের সময়ে সংঘটিত বিপ্লবী যুদ্ধে অংশ নেয়া একজন ক্যাপ্টেনের তৃতীয় বংশধর। তার পিতা ও দাদা উভয়ের নাম জন ম্যাককেইন ছিল। উভয়ই ছিলেন ফোরস্টার এ্যাডমিরাল। দেশের সেবায় তিনি পুরো জীবন অতিবাহিত করেন। নৌবাহিনীর ফাইটার জেটের পাইলট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তী জীবনে তিনি কংগ্রেস সদস্য হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একজন আইনপ্রণেতা ছিলেন। বাপ-দাদার মতো তিনিও এ্যাডমিরাল হতে পারতেন কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কার একটি ঘটনার জন্য সেটি হতে পারেননি। ১৯৬৭ সালের ২৬ অক্টোবর ঘটনা ঘটেছিল। ম্যাককেইন তখন ২৩তম ভিয়েতনাম মিশনে তার এ-৪ স্কাইহক নিয়ে হ্যানয়ের আকাশে ছিলেন। এমন সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মিত সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল আঘাত হানে তার প্লেনে। তিনি প্যারাশুট দিয়ে কোন রকমে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হন। তবে নিচে নেমে আরেক বিপদে পড়েন। উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দেয়। তার দুই বাহু ও ডান হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তিনি তাদের হাতে বন্দী হন এবং যুদ্ধবন্দী হিসেবে জীবনের পাঁচটি বছর কাটান। তার পিতা ইউএস প্যাসিফিক ফোর্সের কমান্ডারও এসময় তার সঙ্গে কারাবন্দী ছিলেন। প্যারিস শান্তি চুক্তি অনুসারে ১৯৭৩ সালে তারা মুক্তি পান। দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য তার পক্ষে আর পাইলটের পেশায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮২ সালে তিনি আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি সিনেট সদস্য হন। ছয় মেয়াদে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যাককেইন। ২০০৮ সালে রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে তিনি লড়েছিলেন। প্রতিপক্ষ ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বারাক ওবামা। তাকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ওবামা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন সমালোচক ছিলেন ম্যাককেইন। তিনি ট্রাম্পের অনেক কাজ ও কথাবার্তার সমালোচনা করেছেন। প্রভাবশালী এই সিনেটরের মৃত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিভিন্ন লোক শোক প্রকাশ করেছেন। ম্যাককেইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘জন ম্যাককেইনের পরিবারের জন্য গভীর সহানুভূতি ও সম্মান জানাচ্ছি। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’ অন্যদিকে ওবামা লিখেছেন, সব রাজনৈতিক মতপার্থক্যের পরও সেই আদর্শের জায়গায় তারা দুজনেই একমত ছিলেন, যে আদর্শের জন্য যুগ যুগ ধরে আমেরিকানরা লড়েছে। তিনি আরও লিখেন, ‘জনকে এক সময় যে ধরনের পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তেমন অভিজ্ঞতা থাকা মানুষ আমাদের মধ্যে খুব বেশি নেই। যে সাহসিকতার পরিচয় তাকে দিতে হয়েছিল, তা আমাদের হয়নি।’ ম্যাককেইনের মেয়ে মেগান লিখেছেন, ‘বাবাকে ছাড়া আমার আগামী দিনগুলো আগের মতো হবে না। তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা আমার দিনগুলোর সম্বল।’
×