ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ ঘাঁটি দখলে রাখতে চায়, বিভক্ত বিএনপি আশাবাদী

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৭ আগস্ট ২০১৮

  আওয়ামী লীগ ঘাঁটি দখলে রাখতে চায়, বিভক্ত বিএনপি আশাবাদী

অভিজিৎ রায় ও এনকেবি নয়ন, ফরিদপুর থেকে ॥ জমে উঠেছে ফরিদপুরে নির্বাচনী রাজনীতি। জেলার চার আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদভারে মুখরিত জেলা শহর ছাড়িয়ে গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চল। দীর্ঘদিন থেকেই জেলাটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে বর্তমানে তিনটিই রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। একটি আসনে স্বতন্ত্রের মোড়কে আওয়ামী লীগ পরিবারেরই দখলে রয়েছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ চার আসনেই নিজেদের বিজয় ধরে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বসে নেই বিএনপিও। তারা চাচ্ছে কোন কোন আসন পুনরুদ্ধার করতে। তবে এই জেলায় বিএনপির ভিলেন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগেও কয়েকটি আসনে মনোনয়ন নিয়ে মতদ্বৈততা থাকলেও বিএনপিতে সৃষ্ট কোন্দল-দ্বন্দ্ব প্রকট। যা থেকে অনেকাংশে মুক্ত আওয়ামী লীগ। ফলে সব দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচনী তৎপরতায় ফরিদপুরের নির্বাচনী মাঠ বর্তমানে সরগরম। বিভিন্নভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিয়ে চলছে। বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্রিক প্রার্থীদের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে ফরিদপুরের সর্বত্রই এখন নির্বাচন নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ চলছে। ফরিদপুর-১ (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) ॥ এই তিন উপজেলার তিন পৌরসভা এবং ২৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার এখন জমজমাট। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক প্রভাবশালী নেতা মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে আসনটি নিজেদের দখলে আনতে। এ আসনে বিএনপির রাজনীতি আন্দোলনমুখী হলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনমুখী তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। ভোটাররাও ঝড় তুলছেন চায়ের টেবিলে কিংবা মাঠে ময়দানে। চলছে উঠান বৈঠক, ঘরোয়া সভাসহ নানান তৎপরতা। কোন দলে কে প্রার্থী হচ্ছেন, কাকে মনোনয়ন দিলে দলের ভাল হবেÑ এ নিয়ে মুখর কর্মী-সমর্থকরা। আসনটি ফরিদপুরের মধ্যে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী এলাকা। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে নৌকার প্রার্থীরাই বরাবর জয়লাভ করে আসছে। দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে জাতীয় সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করেন। শুধুমাত্র ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন ছাড়া বেশির ভাগ সময় এ আসনে জিতেছে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী সিরাজুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হয়ে ২০০৫ সালের ৪ জুন বিএনপিতে যোগদান করায় আসনটি শূন্য হয়। উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ না নেয়ায় বিএনপি নেতা শাহ্ মোঃ আবু জাফর এমপি নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুর রহমান নৌকা প্রতীকে ১ লাখ পাঁচ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী শাহ্ মোঃ আবু জাফরকে পরাজিত করে রেকর্ড গড়েন। সাবেক সাংসদ কাজী সিরাজুল ইসলাম স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামানের ভুল তথ্য প্রদানের কারণে মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রহমান পুনরায় নির্বাচিত হন। গত দু’দফায় সংসদ সদস্য হিসেবে আব্দুর রহমান চন্দনা-বারাশিয়া নদী খনন, কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেললাইন পুনরায় চালু, মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীতকরণ, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট অবকাঠামো উন্নয়নসহ মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ১০ বছরে প্রায় সাড়ে নয় শ’ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। আরও প্রায় সাড়ে চার শ’ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হওয়ায় একাধিক প্রার্থী মাঠে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে পৃথক প্রচার চালাচ্ছেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে নিয়েই ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি মোঃ আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি শিল্পপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঢাকা টাইমস ও এই সময় পত্রিকা সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ দিলীপ রায়, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও তিতাস গ্যাস পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক খান মইনুল ইসলাম মোস্তাক, দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক লায়ন মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক এমপি শাহ্ মোঃ আবু জাফর, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ শরিফুল ইসলাম ও সাবেক এমপি বিএনপি নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও শ্রমিক পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান মৃধা এমপি প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা, সালথা এবং সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন) ॥ ভিআইপি আসন বলে পরিচিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ২০০৮ সালের নবম সংসদে এবং তার আগে ’৯১ সালের নির্বাচনেও এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের হাল ধরে রয়েছেন। দলেও রয়েছে তার শক্তিশালী অবস্থান। কিন্তু অসুস্থতার কারণে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার জ্যেষ্ঠপুত্র ও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়মন আকবর চৌধুরী। গত ৯ বছরে নগরকান্দা-সালথা উপজেলায় সংসদ উপনেতার প্রতিনিধি হিসেবে তার হাত ধরেই যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন হয়েছে। তবে পারিবারিক বিরোধে তিনি এখন কিছুটা কোণ্ঠাসা। বর্তমানে সাজেদা চৌধুরীর প্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় কাজ করছেন তার ছোট ছেলে শাহাদাব আকবর চৌধুরী। সাজেদা চৌধুরী অসুস্থতায় যদি নির্বাচন করতে না পারেন তবে তিনি ছেলেদের কাউকে মনোনয়ন এনে দিতে চেষ্টা করবেন। বাস্তবে সাজেদা চৌধুরীর ঘরের বিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব নিয়ে এখনও গ্রুপিং রয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আরও রয়েছেনÑ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর (অব) আতম হালিম, বিমান বাহিনীর এয়ার কমডর (অব) কাজী দেলোয়ার হোসেন, জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান ও সাবেক জাতীয় পার্টির এমপি বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন দলের ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকু ও বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। শামা ওবায়েদ বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে হওয়ার সুবাদে দলের মনোনয়নের দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন। তার মনোনয়ন একপ্রকার নিশ্চিত। এ আসনে অন্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টির পক্ষে যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন, জাতীয় পার্টি (জেপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বকুল এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এ্যাডভোকেট খান, মোঃ সরোয়ার নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। জেলা জাকের পার্টিও সভাপতি ও জাকের পার্টিও ফরিদপুরের সাংগঠনিক বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান জাদু মিয়া। তিনি ইতোমধ্যেই উঠান বৈঠক, বিভিন্ন জনসভার মাধ্যমে এ আসনে তার প্রার্থিতার পক্ষে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আট রশির মুরিদদের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংকের কারণে এ আসনে তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী। ফরিদপুর-৩ (সদর) ॥ আরেক ভিআইপি আসন বলে পরিচিত সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৩ আসন। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার আসন হিসেবেও বিবেচিত এই আসন। এ আসনে গত দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমান সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আগামীতেও তিনিই এ আসনে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী। দলে তার কোন বিকল্প বা প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এ আসনে আগামী নির্বাচনে বড় দু’দল থেকে এ দু’জনই শক্তিশালী প্রার্থী। এ আসনে আগামীতে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীই নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। বিগত ২০১৪ সালের দশম নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে প্রথমবারের মতো জয়ী হন আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ওই নির্বাচনে তিনি ভোট পান ১ লাখ ২২ হাজার ৪৭। আর চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে জামায়াতের তৎকালীন মহাসচিব ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি কার্যকর হওয়া আলী আহসান মোঃ মুজাহিদ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করে ভোট পান মাত্র ৩০ হাজার ৮৮১। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কামাল ইবনে ইফসুফ ভোট পান ৭৬ হাজার ৪৭৮। ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করতে সম্প্রতি পৌর এলাকার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলো নিয়ে পদ্মা নামে নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। যার সদর দফতর হবে ফরিদপুর সদরে। এজন্য এ আসনের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা সমাবেশ করে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তোলা হচ্ছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা। প্রত্যেক সপ্তাহে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় এসে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। বিজয়ের ব্যাপারেও তিনি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত। গত ৯ বছরে ফরিদপুরে যে উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন হয়েছে তা বিগত ৪০ বছরেও হয়নি। বর্তমানে ফরিদপুরের কুমার নদ খনন ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে সাড়ে ৭শ’ বেডে উন্নীতসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হচ্ছে। অবহেলিত চরাঞ্চল ঘিরেও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- চলছে। ফরিদপুরকে সারাদেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান এমপি খন্দকার মোশাররফ হোসেন কাজ করে চলছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ ভোটারদেরও ধারণা উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামীতেও ফরিদপুরের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। অপরদিকে নিজেদের বিভেদ ঘুচিয়ে এবার আসনটি পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির একক শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে মনে করা হয় চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে। এলাকায় ভোটার ও কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। কামাল ইবনে ইউসুফ ছাড়াও এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল। তবে জামায়াতের ফরিদপুর জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব এ আসনে ভোটারদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। অন্যদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির জেলা শাখার সভাপতি রফিকুজ্জামান লায়েক এবং জাতীয় পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া খানের নাম শোনা যাচ্ছে। ফরিদপুর-৪ (ফরিদপুরের ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) ॥ এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসন। এ আসনে নির্বাচন নিয়ে সরগরম রাজনীতি চলছে বহু আগে থেকেই। এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে বড় দুই দলের ডজনখানেক নেতা তৎপর রয়েছেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে সবাইকে তাক লাগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। আওয়ামী পরিবারের সন্তান বলেই নৌকা মার্কার ঘাঁটি এই আসনের ভোটাররা আওয়ামী লীগের বিকল্প অন্য আওয়ামী লীগের নিক্সনকে ভোট দিয়ে যান। তার আগে ২০০৮ সালে এমপি হন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর স্ত্রী কাজী নিলুফার জাফরউল্লাহ। এরশাদ আমলের দুটি নির্বাচন ব্যতীত এ আসনটি বরারবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে তৎপর রয়েছেন কাজী জাফরউল্লাহ। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই শোনা যাচ্ছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট রাজনীতিকের জন্য এখন এ আসনের নির্বাচনী রাজনীতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। এরইমধ্যে সদরপুর, চরভদ্রাসন ও ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ-পদবির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে সংবাদ সম্মেলন করে কাজী জাফরউল্লাহর বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেছেন। এসব সত্ত্বেও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনিই পাবেন বলে দাবি তার সমর্থকদের। দশম জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে এমপি হন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এরইমধ্যে এলাকায় নানামুখী কর্মকা-ে তিনি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলছুট একটি অংশ এখন তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হলেও তিনি নিজেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিতি দেন। দীর্ঘদিন এমপি হিসেবে তিনি এলাকায় নিজস্ব ইমেজ তৈরি করেছেন। এই আসনে উন্নয়নের কৃতিত্ব বর্তমান এমপি ছাড়াও কাজী জাফরউল্লাহও চাইছেন। তবে স্বতন্ত্র এমপি নিক্সন চৌধুরীও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম, জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শারিয়া ইসলাম শায়লা, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইয়াসমিন আরা হক ও জিয়া পরিষদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জেডএম দেলোয়ার হোসেন তৎপরতা চালাচ্ছেন। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তবে আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী জাফরউল্লাহর সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর কোন্দলের সুযোগে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি খন্দকার মঞ্জুরুল হক। এছাড়াও কমিউনিস্ট পার্টি প্রার্থী আতাউর রহমান কালু তৎপরতা চালাচ্ছেন।
×