ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিড়িয়াখানায় নতুন প্রাণী

বাঘ ভাল্লুক সাদা সিংহ দেখে আনন্দে আটখানা সুমন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ আগস্ট ২০১৮

  বাঘ ভাল্লুক সাদা সিংহ দেখে আনন্দে  আটখানা সুমন

ওয়াজেদ হীরা ॥ বাবার হাত ধরে সাত বছরের সুপ্তি বার বার জানতে চাইছে, বাবা এটি কি? বাবা আজিজুল ইসলাম উত্তর দিচ্ছে, এটি সিংহ মা মণি। সাদা রঙের আফ্রিকান সিংহটি বার বার এদিক-সেদিক ঘুরছে। আর সেই খাঁচার সামনে অংসখ্য মানুষের ভিড় লেগেছে। শুধু কি সিংহ; বাঘ, ভাল্লুক এবং ময়ূরের খাঁচায়ও ভিড় বেশ। দৃশ্যটি জাতীয় চিড়িয়াখানার। ঈদের দিন থেকেই শুরু হওয়া বিনোদনপ্রেমী লক্ষাধিক মানুষের ঢল এখনও চলমান রয়েছে চিড়িয়াখানায়। প্রতিদিনই মানুষ আসছে এখানে। আর ভিড় বাড়ছে। গতবারের চেয়েও এবার মানুষের সমাগম বেশি। আগ্রহের কারণও আছে, ঈদের আগে বেশ কয়েকটি নতুন প্রাণি আনা হয়েছে। আর সেই নতুন নতুন প্রাণী দেখতে ভিড় জমাচ্ছে বিনোদনপ্রেমী মানুুষ। এবার ৮টি নতুন প্রাণী এবং ৪৪টি পাখি বিশেষ দৃষ্টি কাড়ছে সবার। প্রাণীর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার সাদা সিংহ, কালো ভাল্লুক, উট, বিশাল আকৃতির উটপাখি এবং উটপাখির আদলে ৪০টি ইমু পাখি। আর পুরনো প্রাণীর সঙ্গে এসব নতুন প্রাণী দেখতে প্রতিদিনই লক্ষাধিক মানুষের ভিড় লেগেই আছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, সুন্দর, মনোরম পরিবেশ আর নতুনত্বের কারণেই মানুষের সমাগম বেড়েছে। রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের ঈদ বিনোদনের প্রধান কেন্দ্রস্থল মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। বিশেষ করে ছোটদের জন্য এই বিনোদন কেন্দ্রটি অন্যতম হলেও ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এখানে সকল বয়সী মানুষ আসেন ঘুরে বেড়াতে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের সময় দর্শনার্থীদের ভিড় থাকলেও টিকেটের মূল্য বাড়ানো হয় না। সকলের জন্য পূর্বের প্রবেশ মূল্যই ৩০ টাকা নির্ধারিত। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে টিকেট কাটার লম্বা লাইন। বেশিরভাগ মানুষই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। চিড়িয়াখানার ভেতরে মানুষ আর মানুষ। সারাবছর ছুটির দিন ব্যতীত খুব একটা জমজমাট না থাকলেও ঈদ সময়ে বেশ উৎসবমুখর থাকে রাজধানীবাসীর অন্যতম এই বিনোদনকেন্দ্রটি। অন্যান্য সময়ের চেয়ে দর্শনার্থীও হয় কয়েকগুণ বেশি। তাই ঈদকেন্দ্রিক আগে থেকেই চিড়িয়াখানাকে করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। স্বল্পমূল্যে খাবার আর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম সুমন। বাবা-মার সঙ্গে চিড়িয়াখানায় এসে আহ্লাদে আটখানা। বইয়ের মধ্যে পড়া বাঘ-ভাল্লুক দেখছেন চোখের সামনে। বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে কখনও ছেলেকে চিড়িয়াখানায় আনা হয়নি। এবারের ঈদ ঢাকায় করার কারণে নিয়ে এলাম। বাচ্চাদের খুশিই তো বড়। তবে টিকেট পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি। জিসান ৫ বন্ধুসহ এসেছেন সাভার থেকে। ছুটির দিনে প্রায়ই আসেন এই বিনোদনকেন্দ্রে। তিনি বলেন, কখনও সাদা সিংহ দেখিনি। নাম শুনে অপেক্ষা বাড়াতে চাইনি। দেখে খুব ভাল লাগল। এবারের পরিবেশও খুব ভাল। চিড়িয়াখানার নতুন প্রাণীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনেক দর্শনার্থীই। নতুন প্রাণীর খাঁচার সামনে মানুষের ভিড়ও বেশি। দর্শনার্থীরা মনে করেন ঘোরাফেরার পরিবেশ থাকলে আর নতুনত্ব থাকলে সারাবছরই দর্শনার্থীর ভিড় থাকবে। চিড়িয়াখানার পরিবেশ নিয়ে আঞ্জুমান আরা একজন বেসরকারী চাকরিজীবী বলেন, দেখুন, অন্য সময় এলে কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ মনে হয়। ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এর ভেতরে কেউ কেউ সুযোগবুঝে মাদক গ্রহণ করে। তবে এ সময় তা নেই। পরিবেশটা খুব উৎসব মুখর। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব সারাবছর আমরা যেন এই চিড়িয়াখানায় আসতে পারি সেই পরিবেশটা যেন আমরা পাই। এদিকে জানা গেছে, পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে দর্শনার্থীদের নতুনত্ব উপহার দিতে বেশ কিছু নতুন প্রাণী আনে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। নতুন প্রাণীর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে নতুন করে কয়েকটি প্রাণী আনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনা প্রাণীগুলো হলো চারটি আফ্রিকান সিংহ ও দুটি কালো ভাল্লুক। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে দুটি উট, ৪টি উটপাখি। আর উটপাখির মতো দেখতে বিশাল আকৃতির ৪০টি ইমু পাখি ছাড়া হয়েছে। ইমুগুলো মূলত ছোট বাচ্চা থেকে বড় করে এবারই প্রথম খাঁচায় দেয়া হলো। এছাড়া পূর্বের অন্যান্য প্রাণী তো আছেই। চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাংসাশী প্রাণী, তৃণভোজী প্রাণী, ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পাখি, এ্যাকুরিয়ামে রক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও ১৩৬ প্রজাতির ২০৭৬টি প্রাণী রয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডাঃ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার পরিবেশ অনেক ভাল। আর নতুন প্রাণী দেখতে সবার আগ্রহও অনেক বেশি। নতুন প্রাণী নিয়ে তিনি বলেন, আফ্রিকান সিংহ ও কালো ভাল্লুক সাফারি পার্ক থেকে এনেছি।
×