ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সঙ্কট কেটে যাবে

কাঁচা চামড়া রফতানি হলে শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ আগস্ট ২০১৮

  কাঁচা চামড়া রফতানি হলে  শিল্প ধ্বংস হয়ে  যাবে ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার তিন কারণে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দরপতন হয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কোন ভুল ছিল না বলে মনে করেন তিনি। চামড়া নিয়ে এই জটিলতা শীঘ্রই কেটে যাবে বলে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি জানান, ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথমদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখলাম চামড়া নিয়ে একটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমি যখন দামটা কমালাম তখন সাংবাদিকদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখেছি, দাম কেন কমালাম। ঈদ সামনে রেখে গত ৯ আগস্ট কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার; যা গতবারের চেয়ে কম হওয়ার বিষয়টি সংবাদের শিরোনামে আসে। বাণিজ্যমন্ত্রী সেদিন ঘোষণা দেন, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনবেন। সারা দেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করবেন তারা। তবে ঈদের দিন পাড়া-মহল্লা থেকে কেনা চামড়া আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়ে মৌসুমি বিক্রেতাদের। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে আড়তে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমতে থাকায় অনেক মৌসুমি বিক্রেতা হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনেছেন বলেও দাবি করেন। আড়তদারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার দাম ঠিক করে দিয়েছে ট্যানারি মালিকদের জন্য। মৌসুমি বিক্রেতারা সেই দাম মাথায় রেখে বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন। আর ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অর্থ সঙ্কট, আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন এবং বিদেশী ক্রেতা সঙ্কটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চামড়ার বাজারে। তিন কারণে এবার চামড়া কম বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দাম কমানোর পরও বিক্রি হচ্ছে না। এর কারণ হলো এক নম্বর- গতবারের চামড়া রয়ে গেছে, দুই- যারা ট্যানারি মালিক তারা বলছে ব্যাংকের ঋণ সঠিক সময়ে পায়নি, তিন-সাভারে যে কারখানাগুলো হওয়ার কথা সেগুলো গড়ে ওঠেনি। এসব কারণেই এবার চামড়া কেনা-বেচায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা শনিবার আশ্বাস দিয়েছেন এটা থাকবে না, ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যে দামটা কমিয়েছিলাম আমাদের সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেয়ার চিন্তাভাবনা সরকারের আছে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানি করা হলে দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, চামড়া বাংলাদেশের পাঁচটি রফতানি খাতের মধ্যে অন্যতম। গত বছর চামড়াকে ‘প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করা হয়েছিল। সম্ভাবনাময় এই খাত যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার সতর্ক। চামড়া শিল্পের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে সেগুলো সমাধানে সরকারের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ব্যাংক ঋণের বিষয় ব্যবসায়ীদের কোন সহায়তা দেয়া হবে কিনা প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আমাদের তো কোন হাত নেই। এটি গ্রাহক ও ব্যাংকের বিষয়। শনিবার ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেছেন, যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা থাকবে না, দুই-একদিনের মধ্যে অবসান হবে। রবিবার থেকে অফিস খোলা, ব্যাংক খোলা, আমার মনে হয় সঙ্কটের সমাধান হবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথমদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর চারমাস। আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।
×