ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

হেলথ রেভ্যুলেশন ইন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৭ আগস্ট ২০১৮

হেলথ রেভ্যুলেশন ইন বাংলাদেশ

(গতকালের পর) রোগীদের তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহারের মাধ্যমে থাইরয়েড, কিডনি, লিভার ও হাড়ের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের কঠিন ও জটিল রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বগুড়া, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রংপুর ও সাভারে গবেষণা ও সেবা সম্প্রসারণ ও টিসি-৯৯কীট উৎপাদনসহ পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নত পরমাণু চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে, কক্সবাজারে একটি Sterile Inscet Technique Unit স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সোনাদিয়া দ্বীপসহ অন্যান্য এলাকায় শুষ্ক মাছের কীট দমনে সহায়ক হবে। এছাড়া আমদানিকৃত খাদ্য ও খাদ্যজাত সামগ্রীর তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষণ, পরিবেশগত বিকিরণ গবেষণা, পরীক্ষণ মনিটরিং এবং তেজষ্ক্রিয় দূষণ মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে, যা বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ ও সংশ্লিষ্ট মান উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী আইন-২০১৩, মানসিক স্বাস্থ্য আইন, বর্তমান সরকার চতুর্থ (২০১৭-২০২২) স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, পুষ্টিবিষয়ক উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এক লাখ ১৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকার এই বিশাল বাজেটের প্রকল্পে বিশেষভাবে যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে- সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আরও দুটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। . অল্টারনেটিভ মেডিসিনে সরকারী উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রচলিত সনাতন স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিসমূহের মধ্যে রয়েছে আয়ুর্বেদিক, ইউনানি, হোমিওপ্যাথিক ও লোকজ চিকিৎসা পদ্ধতি। একটি প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে আয়ুর্বেদিক এ উপমহাদেশে তিন হাজার বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। আয়ুর্বেদ মানুষকে মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অনুরূপ হিসেবে বিবেচনা করে এবং মনে করা হয় মহাবিশ্বের সকল বৈশিষ্ট্যই রয়েছে মানবদেহে যা, মহাবিশ্বের মতোই পাঁচটি প্রধান উপাদানে গঠিত মাটি, পানি, আগুন, বায়ু ও মহাকাশের উচ্চমার্গীয় উপাদান। এ চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেহের এসব গাঠনিক উপাদানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। আয়ুর্বেদ ব্যবস্থায় রোগ নিরাময়ে চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে দেহের ভিতরে বা বাইরে ঔষধ প্রয়োগ, ছোটখাটো ধরনের অস্ত্রোপচার ও মনঃশারীরিক চিকিৎসা। এতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন উদ্ভিজ ওষুধ যা গুঁড়া, অর্ধঘন, ক্বাথ, তরল ও পতিত রূপে সেবন করা হয়। অনেক আয়ুর্বেদ ওষুধে অজৈব রাসায়নিক দ্রব্য, খনিজ ও প্রাণিজদ্রব্য ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় মূল উপাদান দ্রবীভূত ভেষজদ্রব্য; এলকোহলযুক্ত নির্যাস এবং দ্রবণও প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সম্পর্কিত সধঃবৎরধ সবফরপধ (ভেষজবিদ্যা) থেকে ৮০০০ ধরনের ওষুধের প্রস্তুত প্রণালী পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সবার কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে অল্টারনেটিভ মেডিসিন বা বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে ইতোমধ্যে হোমিওপ্যাথি, ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা আইন-২০১৮ এর খসড়া প্রণীত হয়েছে আইনটি দ্রুত চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। বহুল প্রচলিত এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার বাইরে হোমিওপ্যাথি, ইউনানী এবং আয়ুর্বেদিক এই তিন ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে অল্টারনেটিভ মেডিসিন বলা হয়। এই চিকিৎসা ব্যবস্থা কয়েক হাজার বছরের পুরনো। আমাদের দেশে ঐতিহ্যগতভাবে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রচলিত। দেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ২৫০ জনের মতো বিকল্প মেডিসিনের চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন। আরও ২৫০ জনের মতো চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। উপজেলা হাসপাতালেও এই ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হচ্ছে, সারাদেশে এর গ্র্যাজুয়েট রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দেড় হাজারেও বেশি সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের একটি সেল করেছে। তার অধীনে একজন পরিচালক এই বিকল্প মেডিসিনের বিষয়গুলো মনিটরিং করেন। দেশে বর্তমানে ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক সরকারী মেডিক্যাল কলেজ আছে দুটি হোমিওপ্যাথিক একটি। এসব কলেজে এমবিবিএস-এর সমমানের ডিগ্রী কোর্স পড়ানো হচ্ছে। ডিপ্লোমা পড়ানো হয় এরকম কলেজ আছে অসংখ্য। বাংলাদেশে ৪৫০টির মতো ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান আছে। আর হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ল্যাবরেটরি আছে একশর মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে ‘এই চিকিৎসার ইতিবাচক দিক হলো এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। যেটুকু প্রতিক্রিয়া হয়, তা কাউন্টেবল নয়। এই চিকিৎসার খরচও এ্যালোপ্যাথিকের চেয়ে অনেক কম। এখন শৈল্য চিকিৎসায়ও অল্টারনেটিভ চিকিৎসা ব্যবস্থা এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই এখন বিকল্প মেডিসিনের চাহিদা বাড়ছে। মানুষ এখন চায় ন্যাচারাল ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা। এখন পর্যন্ত ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার আলাদা কোন সরকারী হাসপাতাল হয়নি। তবে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। দেশের সর্বত্র হোমিওপ্যাথি, ইউনানী বা আয়ুর্বেদিক কলেজ রয়েছে। সরকারও গুরুত্ব দিয়ে এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী শিক্ষাবোর্ড এবং হোমিওপ্যাথি শিক্ষাবোর্ড নামের দুটি শিক্ষাবোর্ড গঠন করে তা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে আসছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার এরই মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৪০ ভাগ মানুষ হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করেন। মিরপুরে রয়েছে হোমিও পদ্ধতিতে শৈল্য চিকিৎসার জন্য দেশের একমাত্র হোমিও হাসপাতাল ও কলেজ। এছাড়া দেশের প্রত্যেক জেলায়ই হোমিও কলেজ আছে। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×