ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মতিলাল দেব রায়

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কিভাবে-

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৭ আগস্ট ২০১৮

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কিভাবে-

॥ ২য় পর্ব ॥ ড্রাইভিংয়ের জন্য আবেদন করতে হলে তার বয়স অবশ্যই নিম্নতম ১৮ বছর হতে হবে এবং তাকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। একজন ড্রাইভার প্রশিক্ষণ কোর্স পাস করলে ইন্সপেকশনের পর তার মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ডাক্তারের সার্টিফিকেট লাগবে। এই মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পরীক্ষা করে কেবল সাইক্রিয়াট্রিস্ট ডাক্তারই দিতে পারবেন। প্রতিটা জেলা পর্যায়ে সরকারী-বেসরকারী (অনুমোদিত) ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, প্রত্যেক ড্রাইভার প্রার্থীকে ওই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। উন্নত দেশের কোথাও দ্রুতগামী যানবাহনের সঙ্গে একই রাস্তায় ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহন চলতে দেখা যায় না। ঢাকাসহ সব বড় বড় জেলা শহরে যেসব রাস্তায় দ্রুতগামী যানবাহন চলাচল করে সেই সকল রাস্তায় রিক্সা চলাচল একবারে বন্ধ করে দিতে হবে। ঢাকাসহ জেলা শহরে গরু-ছাগল, বেওয়ারিশ কুকুর, ঘোড়া, গরুর গাড়ি, মনুষ্যচালিত ঠেলা এবং ভ্যানগাড়ি আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে। সকল বাসকর্তৃক যত্রতত্র যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানামা করানো নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ থেকে বাস ডিপু সরিয়ে দিতে হবে, এখানে শুধু বাস যাত্রী তুলতে আসবে। রেল গেটে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, সেই ক্ষেত্রে বাস/ট্রাক-এর ড্রাইভাররা অধিকাংশ দায়ী থাকে। তারা গেট বন্ধ না হলে গাড়ি আসছে কিনা তা তাদের সহকারী কর্তৃক যাচাই না করে সরাসরি রেললাইন ক্রস করতে চায়। সেই সময় দুর্ঘটনা ঘটে। রেল গেটে পুলিশ অথবা রেলওয়ে কর্মীকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখতে হবে। কোন বাস ছাদের ওপর যাত্রী বহন করতে দেখলে ওই বাসের ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করে দিতে হবে। বাসে নির্ধারিত অতিরিক্ত একজন যাত্রী নিলে ওই বাস রাস্তায় ১ বছরের জন্য চলাচল বন্ধ থাকবে এবং ৩ মাসের জন্য ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত থাকবে। বাসের ড্রাইভারদের জন্য একই রঙের ড্রেস নির্ধারণ করে দিতে হবে- যা মালিকপক্ষ তৈরি করে দেবে। সরকারী পক্ষ ড্রেসের রং ডিজাইন তৈরি করে দেবে। কোন রাস্তায় ধান বা যে কোন শষ্য শুকাতে দেয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। ঢাকা বা অন্যান্য শহরে জনসভা করার সময় সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে জন সাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না। জনসভা করতে হলে অফিস শুরুর সময় অর্থাৎ ৮টা ৩০ মি. ১০টা ৩০ মি. এবং অফিস ছুটির সময় ৪টা থেকে ৬টা এই সময়ে কোন জনসভা করা যাবে না। এই সময় রাস্তাঘাটে যানবাহনের অধিক্য ও মানুষ চলাচল বেশি থাকায় এই সময়ের মধ্যে সভা-সমিতি করা যাবে না। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার আশপাশে যখনই কোন সভা করা হয়, তখন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। যানজটে সয়লাব হয়ে যায়। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সরকারী/বেসরকারী পর্যায়ে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোকে আরও অধিকসংখ্যক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যে এলাকায় অধিকসংখ্যক গাড়ি যাতায়াত করে বা রাস্তার পাশে, মার্কেটের পাশে গাড়ি পার্ক করা থাকে সেই সকল এলাকা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। ইচ্ছামতো যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্ক করা যাবে না। কোন কোন জায়গায় রাস্তার পাশে গাড়ি বিনামূল্যে পার্ক করা যাবে তা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিতে হবে। রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াতে রাস্তার দুইধারেই গাড়ি পার্ক করা যাবে বিনামূল্যে। তার সাইনবোর্ড লিখে দিতে হবে। ফুটপাথের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল/সাইকেল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। দেশের শতকরা ১০০% মানুষকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এই বিরাট কাজটি ব্র্যাককে দায়িত্ব দিলে তাদের সারাদেশে বিস্তৃত কর্মীবাহিনী ট্রাফিক আইনের সকল তথ্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে। (ডায়রিয়া হলে তিন আঙুলের এক চিমটি লবণ, একমুঠো চিনি এবং হাফ লিটার পানি মিশিয়ে তৈরি করে খাওয়ালে ডাইরিয়া/পাতলা পায়খানা ভাল হয়ে যায়- এই তথ্যটি ১৯৭৪-৭৫ সালে ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী দল বেঁধে, জায়গায় জায়গায় ক্যাম্প তৈরি করে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে এই পরিবারের মহিলা/গৃহিণীকে উপরোক্ত স্যালাইন তৈরি করে দেখিয়ে দিয়ে এসেছে। সারাদেশের মহিলারা লবণ+গুড় মিকশ্চার সম্পর্কে অবগত। এতে ১০০% সফল কর্মসূচী ব্র্যাকই করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছে- কি করে ছোট একটি তথ্য কোন বিনিয়োগ ছাড়াই জাতীয় বৃহত্তম কল্যাণে কাজে লাগতে পারে। বাংলাদেশ আজ আর আগের মতো ডায়রিয়ায় মানুষ আক্রান্ত হয় না)। ঠিক এই রকম একটি জাতীয় কর্মসূচী ট্রাফিক আইনের ভাষায় কিছু তথ্য গ্রামে-গঞ্জে প্রতি বাড়িতে তারা পৌঁছে দিতে পারবে। একবার পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। পানি পথে দুর্ঘটনার আরও একটি কারণ আছে তা হলো, ফেরিঘাটে লঞ্চে যাত্রী উঠানামা ও বাস গাড়ি উঠানামার অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা সম্পর্কে। কোন একটা ফেরিঘাট দেখলে মনে হয় না যে এটা সম্পূর্ণ একটা ফেরিঘাট এবং যাত্রী ও বাস/গাড়ি পারাপারের জন্য ১০০% নিরাপদ। ঢাকা-বরিশালগামী লঞ্চ কোনদিন ভ্রমণ করলে দেখতে পারবেন বাঁধানো ঘাট ছাড়া জায়গায় জায়গায় লঞ্চগুলো নামার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের সহকারী লঞ্চের সঙ্গে বাধা একটি পুরনো পাটের রশি/দড়ি কিনারার দিকে ছুড়ে মারে আর নদীর পাড়ে বসে থাকা কেউ না কেউ ওই রশিটাকে কোন একটি শক্ত খুঁটিতে বেঁধে দেয়, লঞ্চ যেন জায়গা থেকে সরে না যায়। তারপরের দৃশ্য আরও ভয়ঙ্কর। লঞ্চ রশি দিয়ে বাঁধার পর একটা ৫-৭ হাত লম্বা এবং ১৫-২০ ইঞ্চি পাশ একটি কাঠের টুকরা একপাশ লঞ্চে রেখে অন্যপাশ নদীর কিনারে ফেলে দিয়ে একটি অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করে, ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে যাত্রীরা মালামাল নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওপারে উঠে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেউ এর প্রতিবাদ করেন না, এটাই যেন এখানের নিয়ম, বর্ষাকালে ভয়ঙ্কর অবস্থা-একবার অন্য এলাকার লোক নদী এবং মানুষ উঠা-নামার এই পরিস্থিতি দেখলে জীবনে কোনদিন লঞ্চে চড়বেন না। প্রতিবছর পুলিশ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয়। এখন এটাকে আরও ব্যাপকভাবে পালন করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আরও ব্যাপকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক সপ্তাহ শুধু পুলিশের জন্য নয়, দেশের মানুষকে এই আইন সম্পর্কে আরও সচেতন করে তুলতে হবে। লেখক : আমেরিকা প্রবাসী
×