ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়ার দাম ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

ট্যানারি মালিকরাই মিসকিনের ভূমিকায়

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৭ আগস্ট ২০১৮

ট্যানারি মালিকরাই মিসকিনের ভূমিকায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম কমতে কমতে এ বছর একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে চামড়া বেচা-কেনা হয়েছে, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দাম। কোরবানির পশুর চামড়ার এমন নজিরবিহীন ধসে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে ট্যানারি মালিকরা। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রভাবিত করে চামড়ার সর্বনিম্নœ দাম নির্ধারণ করেও ক্ষান্ত হয়নি, একজোট হয়ে সিন্ডিকেট করে তার চেয়েও কম দামে যাতে পাইাকর ও আড়তদাররা চামড়া কেনে সে নির্দেশনা দিয়েছে তাদের। চামড়ার মূল সুবিধাভোগী হচ্ছে দেশের এতিম-মিসকিনরা। সেই মিসকিনদের হকেও ভাগ বসিয়েছে ট্যানারি মালিকরা। সারাদেশে এতটাই পানির দামে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে যে, ট্যানারি মালিকরাই এবার মিসকিনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মিসকিনদের হকটাই এবার লুটেপুটে খাবে ট্যানারি মালিকরা। সরেজমিনে ঘুরে এবং ফড়িয়া বা মৌসুমি ও পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন দশকে চামড়ার দাম এত কম দেখেননি তারা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে সারাদেশের চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে। দেশে উৎপাদিত চামড়ার শেষ গন্তব্যস্থল ট্যানারি। তারা চামড়া না নিলে চামড়া নিয়ে পাইকার আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হবে। এ কারণে তাদের নির্দেশের বাইরে তারা যায়নি। বিশেষ করে গতবছর বেশি দামে চামড়া কেনায় ওই চামড়া নিতে বেকে বসেছিল ট্যানারি মালিকরা। শেষ পর্যন্ত বৈঠকের পর বৈঠক করে সরকারের হস্তক্ষেপে চামড়া কেনে ট্যানারি মালিকরা। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবার আরও কেউ ট্যানারি মালিকদের কথার বাইরে যায়নি। জানা যায়, চামড়া ব্যবসায়ীদের রাজধানীতে ১২ থেকে ২৫ বর্গফুটের প্রতিটি চামড়া ৭শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা আর রাজধানীর বাইরের থেকে একই পরিমাপের চামড়া ৩শ’ থেকে ৯শ’ টাকার মধ্যে কেনার পরামর্শ দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি হাজী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে চামড়ার দাম এত কম দেখিনি। নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে বেচাকেনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার মতো নয় যে, গত তিন দশকে কাঁচা চামড়ায় দাম এত কম দেখিনি। তবে দাম হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো, কয় মাস পরই জাতীয় নির্বাচন। তাই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের তুষ্ট করতে পশু কোরবানি দিয়েছে। গতবছরের চেয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ পশু বেশি জবাই হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুট চামড়া লবণ দেয়ার পরে ৯শ’ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। তবে রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা গড়ে ৫শ’ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আর রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে গড়ে বেচাকেনা হয়েছে ৪শ’ টাকায়। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতবছরের এক হাজার ২শ’ টাকায় যে চামড়া কিনতে হয়েছে, এবার তার চেয়ে বড় চামড়া পাওয়া গেছে ৭শ’ টাকায়। প্রায় ২শ’টি পশুর চামড়া কিনেছেন রাজধানীর মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন। বাংলামোটরে তিনি বলেন, ‘গড়ে সাড়ে ৫শ’ টাকায় চামড়া কিনেছি। গতবারের চেয়ে বড় ও ভাল মানের চামড়া অনেক কম দামে কিনেছি।’ লক্ষীপুরের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন বলেন, গ্রামে দাম একেবারেই কম। বড় বড় চামড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এত কম দামে চামড়া কিনতে পারিনি।’ ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ধরা হয়েছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। ২০১৪ সালে দাম ধরা হয়েছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর এ বছর সেই চামড়া সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেয়া এই দাম অনুযায়ী, ট্যানারি মালিকরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কেনার কথা ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় এবং ঢাকার বাইরের থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘কোরবানির সময় চামড়া ও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সিন্ডিকেট করে দাম কমান। গত দুই তিন মাসে চামড়ার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোরবানির চামড়ার প্রকৃত দাবিদার দেশের এতিম-মিসকিনরা। কিন্তু সিন্ডিকেট করে এতিম-মিসকিনদের বঞ্চিত করা হলো।’ গতবছর প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা ও লবণজাত চামড়ার দাম ঢাকায় ৫০-৫৫ টাকা ধরা হয়। ঢাকার বাইরে সারাদেশে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৪০-৪৫ টাকা। এছাড়া মহিষের প্রতি বর্গফুট চামড়া ৪০ টাকা, খাসির ২০-২২ টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার ১৫-১৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। এবারও ঈদ-উল-আজহার আগে ট্যানারির মালিকরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে রাজি করিয়ে ঢাকায় কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আর রাজধানীর বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। একইভাবে সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং বকরির প্রতি বর্গফুট চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন কোরবানির পশুর চামড়ার দর রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫৫-৬০ টাকা, রাজধানীর বাইরে ৪৫-৫০ টাকা, সারাদেশে খাসির চামড়া ২৫-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণে সুপারিশ করেছিল। মন্ত্রণালয় সেই সুপারিশ গ্রহণ না করে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। যা নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া, প্রশ্ন উঠেছে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এভাবে চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয়ার এখতিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আছে কি না? আবার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় মাঠে চামড়া কেনাবেচায় বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে। লবণের খরচ ধরে সরকারের বেধে দেয়া দামেরও অর্ধেক দামে আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেছে। ফলে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন খুচড়া ব্যবসায়ীরাও। যে দামে চামড়া কিনেছেন, আড়তে নিয়ে তার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয়েছে। আড়তদারদের চামড়া কেনা প্রায় শেষ। শুক্রবার আর তেমন একটা কেনাবেচা হয়নি। কোরবানির পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পোস্তার বাজারে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ পশুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। কেনার পর চামড়ায় লবণ মাখিয়ে গুদামে রাখা হয়েছে। এরপর তা যাবে সাভারে ট্যানারি মালিকদের কাছে। আড়তদার শামসুদ্দিন জানান, তিনি ছয় শ’ থেকে এগার শ’ টাকা দরে আড়াই হাজার চামড়া কিনেছেন। প্রতিটি চামড়ায় লবণ মাখানো ও শ্রমিক খরচ ধরে চামড়া প্রতি মোট আড়াই শ’ টাকা খরচ হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পড়বেন। কামরুল নামের চামড়ার এক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, ‘ঈদের দিন দেড় শ’ চামড়া কিনেছিলেন। কিন্তু চামড়া বিক্রিই করতে পারছিলেন না। পরে কম দামে মোটা অঙ্কের লোকসানে বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর আর তিনি চামড়া কেনেননি।’ পোস্তার এক আড়তদার জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লা থেকে বেশি দামে চামড়া কেনাতেই বিপত্তি হয়েছে। এ বছর চামড়ার সর্বোচ্চ মূল্য প্রতি বর্গফুট ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হিসেবে কিনতে হচ্ছে। কারণ, এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ আছে। আগে হাজারীবাগে পৌঁছে দিলে হতো। এখন নিতে হবে সাভারে। সেক্ষেত্রে পরিবহন খরচও বেড়েছে। সেই দিকে খেয়াল রেখেই চামড়া কেনা হয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামের কোরবানি দাতারা এবার বেশি ঠকেছেন। গ্রামের বড় আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে আড়াই শ’ থেকে তিন শ’ টাকার মধ্যে। রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা করিম বলেন, ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া তিনি বিক্রি করেছেন মাত্র ৪শ’ টাকায়। ছাগলের চামড়া এবার মাত্র ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৫০ টাকায়। কোরবানির চামড়া সাধারণত মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা হয়। অনেক কোরবানিদাতার আবার চামড়া বিক্রি করে সে টাকা দুস্থদের মাঝে বিতরণ করে দেন। মসজিদ-মাদ্রাসা কমিটির কাছে দান করা চামড়ার দামও ওঠেনি এবার। বেশি সময় ধরে রাখলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় প্রায় সবাই এবার কম দামেই চামড়া বিক্রি করেছেন। পাবনার ভাঙ্গুড়ার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন বলেছেন, ‘৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালে কোরবানির ঈদে পশুর মালিকরা সাত শ’ টাকায় চামড়া বেচেছেন। এবার সেই মানের চামড়া কেনা সম্ভব হয়েছে পাঁচ শ’ টাকারও কম দামে।’ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)-এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও আনোয়ার ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশের চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দামও এ কারণে পড়ে গেছে।’ এখন ইচ্ছে করলেও চামড়া ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। ট্যানারি মালিকরা যে এক জোট তার প্রমাণ পাওয়ায় যায় বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহর কথাতেও। দিলজাহান ভূঁইয়ার মতো একই ধরনের মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান বাজার হলো চীন। অথচ তিন মাস ধরে চীনে রফতানি হচ্ছে না। দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চীন আমাদের চামড়া নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আগের অর্ডার তো নিচ্ছেই না, নতুন কোনও অর্ডারও দিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগের অর্ডার দেয়া প্যাকিং করা প্রায় ১০০ কন্টেইনার এখনও নিচ্ছে না চীন।’ একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম। তার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়েছে। অথচ চীন ছাড়াও বৈশ্বিক হিসেবে চামড়ার বড় বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ব্রাজিল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ান। এই তালিকায় চীনের অবস্থান অনেক পেছনে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা শুধু চীনের কথাই বললেন। কারণ চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো যে চীনের চেয়ে অনেক বেশি চামড়া ক্রয় করে তা তারা উল্লেখ করলেন না। অর্থাৎ দেশের ট্যানারি মালিকরা যখন যেটা সুবিধা মনে করেন সে লাইনে মিডিয়ায় বক্তব্য দেন। ট্যানারি মালিকারা গত ৩০ বছর ধরেই বলে আসছেন আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম ভাল না। চাহিদা কম। কিন্তু তার বিপরীতে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা যেমন দিন দিন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মূল্যও। গত অর্থবছরে চামড়া রফতানির চেয়ে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় বেশি হয়েছে। যদিও তাই হয়, তাহলে দেশ থেকে চামড়া রফতানি নিষিদ্ধ করা উচিত। তার বদলে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আরও বেশি উৎসাহ দেয়া উচিত। অর্থাৎ চামড়ার পরিবর্তে চামড়াজাত পণ্য রফতানিকে উৎসাহিত করা উচিত। এতে বরং দেশ লাভবন হবে। কারণ চীনসহ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শ্রমের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য চামড়া আমদানি করে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন লাভজনক নয়। বরং তাদের জন্য চামড়াজাত পণ্য আমদানি লাভজনক। সেই দিকটি বিবেচনা করলেও দেশ থেকে চামড়া রফতানি নিষিদ্ধ করা উচিত। এমন সুপারিশই করছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে সারাদেশ থেকে কমবেশি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়। আর নির্বাচনী বছর হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে এ বছর পশু জবাই হয়েছে তুলনামূলক অনেক বেশি। সে হিসেবে এ বছর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
×