ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিনটি আসনই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, মাঠে নেই বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৬ আগস্ট ২০১৮

 তিনটি আসনই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, মাঠে নেই বিএনপি

আবুল বাশার শরীয়তপুর থেকে ॥ উত্তরে প্রমত্তা পদ্মা, পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে কীর্তিনাশা নদী পরিবেষ্টিত ফরায়েজী আন্দোলনের প্রখ্যাত নেতা হাজী শরীয়তুল্লাহর পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরের তিনটি সংসদীয় নির্বাচনী আসনই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কোন দলের তেমন তৎপরতা নেই শরীয়তপুরে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলতি বছরের শুরু থেকেই মাঠ গরম করতে শুরু করছেন আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ নির্বাচনী এলাকায় এসে দলীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন এবং বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে তুলে ধরছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কিছু ‘বসন্তের কোকিল’ স্বরূপ নেতা ঢাকা থেকে মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে নানা অপকর্ম ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীসহ বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নিজ সমর্থনের পাল্লা ভারি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফলে দলীয় কোন্দল সৃষ্টিসহ সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। এদিকে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি দীর্ঘদিনের। এলাকায় যাদের জনসমর্থন নেই, এ রকম নেতাদের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন না দেয়ার জন্য দলীয় প্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এদিকে নির্বাচনী আমেজে প্রকাশ্যে মাঠে নেই বিএনপি। তবে আড়ালে-আবডালে ব্যানার সেঁটে ২/১ টি দলীয় কর্মসূচী পালন করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হওয়া বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিএনপির একটি অংশ ঢাকায় বসেই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অপর অংশ এলাকায় ফটোশেসনমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। এখানে জাতীয় পার্টির তেমন কোন দৌড়ঝাঁপ নেই। শরীয়তপুর-১ (শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা) ॥ শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে শরীয়তপুর-১ আসন গঠিত হয়েছে। এ আসন থেকে বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসছেন। তবে ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসনে শরীয়তপুর জেলা সদর থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। এ আসনে কখনও ডামুড্যা আবার কখনও জাজিরা উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে জেলা সদরে তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় জেলা সদর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য একটি অংশের নেতাকর্মীদের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রয়াত সাবেক কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব ৯৮ হাজার ৪শ’ ৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোবারক আলী সিকদার পেয়েছিলেন ৮১ হাজার ৯৩০ ভোট। বিএনপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন সিকদার পেয়েছিলেন মাত্র ৭শ’ ৭৯ ভোট। ২০০৮ সালে নির্বাচনে এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি বিএম মোজাম্মেল হক ১ লাখ ১৭ হাজার ৩শ’ ৮৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোবারক আলী সিকদার পেয়েছিলেন ৫৬ হাজার ৮শ’ ৫৩ ভোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএম মোজাম্মেল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন কমপক্ষে ৪ প্রার্থী। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর পৌর মেয়র ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শিল্পপতি মোবারক আলী সিকদার। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন শরীয়তপুরের জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালু। এ আসনে ব্যক্তি ইমেজে কোন ব্যাপার নয়, এখানে মূল ব্যাপার হলো মার্কা। যিনি নৌকা মার্কা পাবেন তিনিই বিজয়ী হবেন বলেই ধারণা সাধারণ ভোটারদের। এ আসনে আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপ হলেও বহু বিভক্ত বিএনপিতে কোন্দল চরমে। মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও কোন্দল প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। তবে এমপি মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেন অপু দু’জনেই মনোনয়ন লাভে শতভাগ আশাবাদী বলে তাঁরা জানান। শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা মাঝে মধ্যে ঢাকা থেকে এসে মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে মোড়ে মোড়ে ঝুলছে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুর সদর উপজেলায় কাক্সিক্ষত উন্নয়নমূলক কাজ না করায় শহরবাসীর কিছু ক্ষোভ রয়েছে তাঁর প্রতি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কটাক্ষ করে গালি দেয়ার অভিযোগে শরীয়তপুর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে দল থেকে বহিষ্কারসহ তাঁর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এছাড়াও শরীয়তপুরের অন্যতম শীর্ষ সাবেক এক জামায়াত নেতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে ওই সাবেক জামায়াত নেতার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি কোম্পানি থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ এবং সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সী, মোবারক আলী সিকদার, সাবেক এমপি মাস্টার মজিবুর রহমানসহ দীর্ঘদিনের দলটির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপির কিছু নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করার অভিযোগে এমপি বিএম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে তাঁর সমর্থক নেতাকর্মীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। দলীয় মনোনয়নের তালিকায় থাকা এক সময়ের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর তরুণ সমাজে জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে। দলের দুর্দিনে লড়াই-সংগ্রাম করে দলের পক্ষে কাজ করলেও দীর্ঘদিনেও কোন সুবিধাজনক স্থানে বসানো হয়নি এই নেতাকে। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকাংশের দাবি শরীয়তপুরের উন্নয়নের জন্য ইকবাল হোসেন অপুকে এমপি হিসেবে দেখতে চায় তারা। শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মোবারক আলী সিকদার বলেন, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যখন হামলা, মামলা দিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছিল তখন তিনি তাদের পাশে থেকে যে কোন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। দলের দুর্দিনে অর্থ ব্যয় করে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল। স্থানীয় সুশীল সমাজে গ্রহণযোগ্য এই নেতা ইতোমধ্যেই পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর শহরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এদিকে প্রচারের দিক থেকে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও বিএনপি প্রার্থীরা এখনও মাঠে নামেনি। এখানে অন্য কোন দল তেমন সক্রিয় নয়। শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) ॥ পদ্মা নদী ভাঙ্গন কবলিত নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা নিয়ে শরীয়তপুর-২ আসন গঠিত। এটিও আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময়ের পাশাপাশি নদীভাঙ্গন এলাকায় গরিব-দুখী মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে সভা-সমাবেশ করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের টিকেটে ছয় ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী। এবার বার্ধক্যজনিত কারণে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন না বলে তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এ আসনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রতিটি এলাকায় চোখে পড়ার মতো ব্যাপক গণসংযোগ এবং নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি একেএম এনামুল হক শামীম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়নের কথা সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে সভা, সমাবেশ ও সেমিনারসহ নানামুখী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করে আসা এনামুল হক শামীমকে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। এনামুল হক শামীম রাজনীতির পাশাপাশি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে জড়িত এবং একটি বেসরকারী ব্যাংকেও তাঁর অংশীদারিত্ব রয়েছে। এনামুল হক শামীমের হাত ধরে শুধু নড়িয়া-সখিপুরেই নয়, গোটা শরীয়তপুর জেলার শত শত দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাকা শহরের নামীদামী অনেক শিক্ষ প্রতিষ্ঠানসহ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প খরচে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দফতরে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সহায়তা করেছেন অনেককে। এনামুল হক শামীম দলীয় নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিজ এলাকার নদীভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তিনি নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়নের কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। স্থানীয় দলের তৃণমূল নেতাদের অধিকাংশের দাবি, এনামুল হক শামীমকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই এবং নড়িয়া-সখিপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাঁর কোন বিকল্প নেই। দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে এনামুল হক শামীম বলেন, তিনি এর আগেও এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনেও চাইবেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন। তিনি মনে করেন, নিজের মনোনয়নের চেয়ে তাঁর কাছে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের বিষয় দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো দলীয়প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা। সে জন্য তিনি নিজ এলাকাসহ রাতদিন তৃণমূল থেকে কেন্দ্র আর কেন্দ্র থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগে দৃশ্যমান রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) শওকত আলীর ছেলে ডাঃ খালেদ শওকত আলী ও আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন। ডাঃ খালেদ শওকত আলী বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বাঙালী হিসেবে সমগ্র বাঙালী জাতি নিয়ে ভাবি। আমরা মানুষকে ভালবাসি, মানুষকে ভালবেসে, মানুষের জন্য কাজ করে মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে চাই। বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত মুক্তি সংগ্রাম সমাপ্ত করা সম্ভব। আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সুলতান মাহমুদ সীমন বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি শরীয়তপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাই। মনোনয়ন ক্ষেত্রে সার্বিক দিক বিবেচনায় আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করি। এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন ৩ প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপি’র সভাপতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সফিকুর রহমান কিরন, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট জামাল শরিফ হিরু এবং সাবেক এমপি প্রখ্যাত দন্ত চিকিৎসক ডাঃ কে এ জলিল। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় তেমন আসে না। তেমন একটা কর্মসূচী পালন করে না। তবে দুটি গ্রুপের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরন বলেন, বিএনপি’র মনোনয়ন পাবার ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী। দলের ভেতরে পদ-পদবি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। এটা কোন কোন্দল নয়। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরু বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছি। এ যাবত বিএনপি যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তারা কেউ পাস করেনি। দলের অবস্থান ভাল করার জন্য এবার আমি শতভাগ আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তাছাড়া দলের সিদ্ধান্ত আমি মেনে চলব। ডাঃ কে এ জলিল বলেন, আমি রাজনীতির শুরু থেকে নড়িয়া উপজেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ করেছি। আমি ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। আমি আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট) ॥ ডামুড্যা, গোসাইরহাট উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ থানা নিয়ে জেলার গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তপুর-৩ আসন গঠিত। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক। গত মেয়াদেও তাঁর পিতা প্রয়াত কালজয়ী নেতা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর বাকি সময়ের জন্য এমপি ছিলেন তিনি। আগামীতেও দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে নাহিম রাজ্জাকের বিকল্প নেই বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। নাহিম রাজ্জাক এমপি’র অনুসারীদের দাবি, প্রায় দু’মেয়াদে এমপি থাকাকালে এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে নাহিম রাজ্জাক তাঁর নির্বাচনী সব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদে-আপদেও তিনি পাশে থাকেন সব সময়। শরীয়তপুর-৩ নির্বাচনী এলাকা ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যানগণ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকগণ ও পৌর মেয়রসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা নাহিম রাজ্জাকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকার বিজয়ের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন জোরেশোরে। এ আসনে বার বার এমপি নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক, আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিম-লীর সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত কালজয়ী নেতা আব্দুর রাজ্জাক। আধুনিক শরীয়তপুরের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে পরিচিত আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র নাহিম রাজ্জাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নাহিম রাজ্জাক তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ডিজিটাল সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে শরীয়তপুরের-৩ আসনে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজে ভবন নির্মাণ, প্রত্যন্ত চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীসহ আমজনতার কাছে আস্থাভাজন প্রিয় নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। নাহিম রাজ্জাক তাঁর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে চরাঞ্চলে যেন শহরের ছোঁয়া লাগিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরের এ আসনটিতে বিগত জোট সরকারের আমলে তেমন কোন উন্নয়নমূলক কাজ না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকেই নাহিম রাজ্জাকের নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় খুশী এ অঞ্চলের মানুষ। নাহিম রাজ্জাকের কঠোর প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলের ৯০ ভাগ মানুষ আজ বিদ্যুত সংযোগের আওতায় এসেছে। শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশে^র কাছে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে সারা বাংলায় যে উন্নয়ন হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় নেত্রীর নির্দেশে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। নাহিম রাজ্জাক ছাড়াও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বার বার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক অনল কুমার দে। তিনি বিগত ৪৫ বছর ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে সেনা সমর্থিত ১/১১ এর সময়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে কারারুদ্ধ করা হলে এ সময় রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এক বক্তৃতায় তিনি নির্ভয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে ছাড়া আমরা সংলাপ বা নির্বাচনে যাব না। এ সময় তিনি দলীয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য আন্দোলন কর্মসূচী দেয়ার দাবিও জানান। পরবর্তীতে এ ঘটনার জের ধরে সেনা সমর্থিত সরকারের বাহিনী কর্তৃক তিনি দৈহিক নির্যাতনের শিকারও হন। তিনিও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারিও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার এবং সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত এম এ রেজার সহধর্মিণী সৈয়দা শাহজাদী ফরিদা রেজা নূরও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এই আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাঈদ আহমেদ আসলাম এবং সাবেক সংসদ সদস্য হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেবের সহধর্মিণী এ্যাডভোকেট তাহমিনা আওরঙ্গ বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
×