ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যত্র হত ৮

নাটোরে বাস-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৫

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৬ আগস্ট ২০১৮

নাটোরে বাস-লেগুনা মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৫

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। শনিবারও সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নাটোরে বাস ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ ১৫ জন, রাজশাহীতে চলন্ত ভ্যানের চাকা খুলে দাদা-নাতি, ফরিদপুরে মাইক্রোচাপায় এক গৃহবধূসহ দুজন, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বাস খাদে পরে দুজন এবং মাগুরায় বাসচাপায় এক যুবক নিহত হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ৮০ জন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। নাটোরের বড়াইগ্রাম সীমানা সংলগ্ন নাটোর-পাবনা মহাসড়কের লালপুরের কদিমচিলান এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এক শিশুসহ ১৫ জন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের ১৫ জনই লেগুনার যাত্রী। এদের মধ্যে দুই শিশু, পাঁচ পুরুষ ও ছয়জন নারী। শনিবার বিকেল চারটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলো পাবনার মুলাডুলি ফুলকুড়ি গ্রামের মন্টু বিশ্বাসের স্ত্রী আদুরি বিশ্বাস (৩৫), মেয়ে স্বপ্না বিশ্বাস (১০ মাস), ছেলে প্রত্যয় বিশ্বাস (১২)। এছাড়া টাঙ্গাইলের গোপালপুর এলাকার রোকন (২২), রাজশাহীর চারঘাটের মিরকামারী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শাপলা খাতুন (২০), বড়াইগ্রামের জামাইদিঘা গ্রামের নুরসেল হোসেনের স্ত্রী লগেনা বেগম (৬৫), নারায়ণপুর গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী রজুফা (৪৫), নারায়নপুর গ্রামের রুপচাদ আলীর স্ত্রী শেফালি (৫৫) এবং লেগুনা চালক ঠাকুরগাঁওয়ের আব্দুর রহিম। বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুন নূর ও স্থানীয়রা জানান, বিকেলে পাবনা থেকে রংপুরগামী চ্যালেঞ্জার পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বনপাড়া থেকে ঈশ্বরদীগামী লেগুনার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় বাসটি ছিটকে রাস্তার পার্শ্বের খাদে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। অন্যদিকে লেগুনাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই লেগুনার ১৩ যাত্রী নিহত এবং বাসের ২০ যাত্রী আহত হয়। সংবাদ পেয়ে বনপাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ ও নাটোর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়। নিহতের অধিকাংশই নাটোর ও পাবনা জেলার বাসিন্দা। স্থানীয় এক কৃষক জানান, তিনি মাঠে কাজ করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ শোনেন। পরে বাস ও লেগুনার দুর্ঘটনা দেখে দৌড়ে আসেন। সেখানে ঘটনাস্থলেই লেগুনার ভেতরে ছয়জনকে চাপা পড়ে মরে থাকতে দেখেন। পরে স্থানীয়রা এসে নিহতদের লাশ ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরও জানান, ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হয়েছে। বাকিদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মোঃ রাজ্জাকুল ইসলাম ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক এবং পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। অপরদিকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে নাটোর জেলা প্রশাসন। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসার জন্য প্রত্যেক হাসপাতালকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন সদর হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজ্জাকুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। ফরিদপুরে গৃহবধূসহ হত ২ ॥ ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী এক গৃহবধূসহ দুজন নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল সাতটার দিকে মুন্সিবাজার বাইপাস সড়ক ও বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ভাঙ্গার হামেরদী এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। সকাল সাতটার দিকে ফরিদপুর সদরের নূরু মিয়া বাইপাস সড়কের মুন্সীবাজার এলাকায় একটি মাইক্রোবাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন খাদিজা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূ। খাদিজা বেগম ফরিদপুরের কৈজুরি ইউনিয়নের পিয়ারপুর গ্রামের আসাদ মিয়ার স্ত্রী। ফরিদপুর দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, ঢাকা থেকে বাখুন্ড‍াগামী মাইক্রেবাসটি পথচারী ওই গৃহবধূকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশের একটি বিদ্যুতের খাম্বায় ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। মাইক্রো চাপায় খাদিজা বেগম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অপর দুর্ঘটনাটি ঘটে বিকেল পৌনে তিনটার দিকে ভাঙ্গার হামেরদী গ্রামে। গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ‘কমফোর্ট লাইন’ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে একটি মাহেন্দ্রের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় মাহেন্দ্রের যাত্রী সালথার আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামের সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে শামীম শেখ (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় মাহেন্দ্রের আরও ছয় যাত্রী আহত হন। তাদের দুজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজশাহীতে দাদা-নাতি নিহত ॥ রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চাকা খুলে পড়ে দাদা ও নাতি নিহত হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাটাখালীর সমসাদিপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো কাটাখালী দেওয়ানপাড়া এলাকার ভ্যানচালক নাজিম উদ্দিন (৫০) ও তার নাতি আরাফাত আলী (৫)। এ ঘটনায় আহত হন নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম ও আরেক নাতি কালাম। স্থানীয় সূত্র জানায়, স্ত্রী ও দুই নাতিকে নিয়ে ভ্যান চালিয়ে পাশের কাপাশিয়া এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন নাজিম উদ্দিন। পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, সমসাদিপুর গ্যারেজের কাছে দ্রুতগামী ভ্যানের চাকা খুলে পড়ে। এতে ভ্যানচালক দাদা ও নাতি ছিটকে পড়ে নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাটাখালী থানার ওসি মেহেদি হাসান বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। দাউদকান্দিতে দুর্ঘটনায় নিহত ২ ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির জিংলাতলী ও রায়পুরে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ৫০ যাত্রী। শনিবার ভোরে দুটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, রংপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ভোর পাঁচটার দিকে দাউদকান্দি জিংলাতলী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাসের দুযাত্রী। নিহতরা হলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ইয়াসিন মিয়া ও বগুড়ার সোনাতলার জামালউদ্দিন। এ ঘটনায় বাসের অন্তত ২০ যাত্রী আহত হন। এদিকে সকাল ছয়টার দিকে রায়পুর এলাকায় দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের আরেকটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় বাসের অন্তত ৩০ যাত্রী আহত হন। হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তৎপরতা চালিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহতদের দাউদকান্দি গৌরীপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ১০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কলাপাড়ায় নারী পর্যটক নিহত ॥ কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কে তুলাতলী এলাকায় শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পর্যটক তাসলিমা বেগম (৪৫) নিহত হয়েছেন। নিহতের বাড়ি আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নের আমরাগাছিয়া গ্রামে। তার স্বামীর নাম ইদ্রিস মুন্সী। তাসলিমা বেগম শুক্রবার দুপুরে ভাইয়ের সঙ্গে কুয়াকাটায় বেড়াতে যান। মোটরসাইকেলে ফেরার পথে ওই এলাকায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য দাঁড়ান। এ সময় অপর একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। কলাপাড়া হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মাগুরায় যুবক নিহত ॥ শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার আলমখালী এলাকায় বাসচাপায় সবুজ শেখ (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সবুজ শেখ নন্দলালপুর গ্রামের পিসকেন শেখের ছেলে। আলমখলী এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসচাপায় সবুজ শেখ নিহত হন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
×