ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৪ মামলা আপীল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৬ আগস্ট ২০১৮

  ২৪ মামলা আপীল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে ২৪ মামলার আপীল শুনানি নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। গত দুই বছরে আপীল বিভাগে নতুন করে আর মামলার শুনানি হয়নি। এর আগে আপীল বিভাগে সাতটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এই সাত মামলার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। পরবর্তীতে ওই ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকরও হয়েছে। একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হযেছে। আপীল বিভাগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট মীর কাশেম আলীর মামলার রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর নতুন মামলার শুনানি হয়নি। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর আপীল শুনানি শীঘ্রই শুরু হবে। আশা করছি সুপ্রীমকোর্টের অবকাশ শেষে মামলাগুলোর শুনানি হবে। বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে ছুটি ও অবকাশ চলছে। ঈদ-উল আজহার ছুটি, সরকার ঘোষিত অন্যান্য ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং কোর্টে অবকাশ শেষে ১ অক্টোবর থেকে যথারীতি খুলবে সর্বোচ্চ আদালত। শুরু হবে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম। আপাতত এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আপীল শুনানি আর হচ্ছে না। এর আগে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলা কয়েকবার কার্যতালিকায় এলেও শুনানি হয়নি। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, লিস্টে আছে। আগে এক নম্বর কোর্টে এই মামলার শুনানি হতো। এখন এক নম্বর কোর্টে অন্যান্য মামলার শুনানিও করতে হয়। আশা করছি শীঘ্রই মানবতাবিরোধী মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও গ্রেনেড হামলা মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে অবকাশ চলছে। আশা করছি অবকাশ শেষে সুপ্রীমকোর্ট খোলার পর আপীলগুলোর শুনানি হবে। সুপ্রীমকোর্টের কার্যদিবস হিসেব করলে একটু সময় লাগবেই। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অন্যতম সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আপীল বিভাগের ২৪ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। দুই বছর ধরে আপীল বিভাগের কোন মামলার শুনানি হচ্ছে না। এখানে ভিক্টিম, বিচারপ্রার্থী, অভিযোগকারীসহ আসামিদের বয়স হয়েছে। আসামিদের যদি ন্যাচারাল ডেথ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বিচারের যুক্তিটা থাকে না। এই আইনের স্পিরিট হলো দ্রুত বিচার করা। মাঝ পথে থাকার কোন কারণ নেই। দ্রুততার সঙ্গে বিচার শেষ করতে হবে। যারা এই মামলার সাক্ষী ভিক্টিম বিচার প্রত্যাশী তারা জীবদ্দশায় পরিণতি দেখে য়েতে চায়। যে সমস্ত মামলা সুপ্রীমকোর্টে আপীলে পেন্ডিং আছে সেসব মামলার আপীল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভিকটিম, অত্যাচারিত, নির্যাতিত বা বিচার প্রার্থীদের এক ধরনের অতৃপ্তি আছে। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ-ের বিরুদ্ধে মোট ২৪ জন উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে, জামায়াতের মাওলানা সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, জাপার সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেন, সাবেক জাপার সাংসদ আব্দুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান, বাগেরহাটের সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, খান মোঃ আকরাম হোসেন, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, হবিগঞ্জের মজিবুর রহমান (আঙ্গুর মিয়া ) মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, কিশোরগঞ্জের সামসুদ্দিন আহম্মেদ, এ্যাডভোকেট শামসুল হক, জামালপুরের এস এম ইউসুফ হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মোসলেম প্রধান, আব্দুল লতিফ, ইউসুফ আহম্মেদ, আমির আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, মোঃ জয়নাল আবেদীন ও মোঃ আব্দুল কুদ্দুস। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দ্রুত যুদ্ধাপরাধী বিচারের সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী। সেই অনুযায়ীই ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার কথা বিবেচনা করে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলা কমাতে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হবিগঞ্জের লাখাই থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ লিয়াকত আলীসহ দুজনের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। রায ঘোষণার জন্য মামলাটি সিএভি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ রায় যে কোন দিন দেয়া হবে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ৩৪ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ৩৪ মামালার রায়ের মধ্যে ৭৮ আসামিকে দন্ড দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে ৫২ জনকে, আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। আর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একজনকে ৯০ বছরের দন্ড একজনকে ২০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে সাতটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। আর একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয়া হযেছে। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩১টি মামলায় মোট ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি অভিযোগের আবেদনে ২৭ সহ মোট ৬৯৭ অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। ২০১৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ৬৯৭ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোট ৩ হাজার ৫শ ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
×