ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণমাত্রায় এলএনজি সরবরাহ এখনই সম্ভব হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৬ আগস্ট ২০১৮

  পূর্ণমাত্রায় এলএনজি সরবরাহ এখনই সম্ভব হচ্ছে না

রশিদ মামুন ॥ পাইপ লাইন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পূর্ণমাত্রায় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এলএনজি নিয়ে কাতার থেকে পরের জাহাজটি বাংলাদেশে আসছে। পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী একটির পর একটি জাহাজ আসবে। এখন থেকে প্রতিদিন সক্ষমতার পুরোটা সরবরাহ করা গেলেও কেবলমাত্র পাইপ লাইনের কারণে তা নেয়া সম্ভব হবে না। গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি (জিটিসিএল) সূত্র বলছে শুরুতে প্রতিদিন ৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করা হয়। এখন তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। ক্রমান্বয়ে এই সরবরাহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশে মোট গ্যাস সরবরাহর পরিমাণ দৈনিক সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর সঙ্গে একবারে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যোগ হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার কথা ছিল। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আমাদের সক্ষমতার পুরোটাই সরবরাহ করতে পারব। প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট করেই আমরা এলএনজি গ্রিডে দিতে পারব। কিন্তু পাইপ লাইনের কারণে তা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি আশা করেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে গ্যাস পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি লক্ষ্য করা যাবে। চলতি বছর কাতার থেকে ১৫টি জাহাজ এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় জাহাজটি আসছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। তবে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব না হলে আরও কম জাহাজ আনা হবে। বিগত ২০১২ সালে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। দীর্ঘ ছয় বছরের প্রচেষ্টার পর গত ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। তবে এখনও এলএনজি জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। জিটিসিএল বলছে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে হলে আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত পাইপ লাইন নির্মাণ করতে হবে। পাইপ লাইনের মধ্যে কর্ণফুলী নদী রয়েছে। নদী অতিক্রম করার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ দেরি হবে। পরিকল্পনা ছিল ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৩০ কিলোমিটারের পাইপ লাইনটির কাজ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। তবে এখন বলা হচ্ছে আগামী বছরের শুরু নাগাদ পাইপ লাইনটি চালু হতে পারে। আপাতত এলএনজি সরবরাহ চট্টগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। চট্টগ্রাম রিং- মেন পাইপ লাইনের দৈনিক সরবরাহ ক্ষমতা ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। সঙ্গত কারণেই আনোয়ারা ফৌজদারহাট গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ শেষ না হলে এলএনজি পূর্ণমাত্রায় সরবরাহও করা যাবে না। তবে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে ওই গ্যাস দেশের অন্য এলাকায় সরবরাহ করা হলে সঙ্কট কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও চট্টগ্রামে এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে আনোয়ারা থেকে শিকলবাহা বিদ্যুত কেন্দ্র এবং সিইউএফএল ও কাফকো সার কারখানার জন্য সরাসরি পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহের জন্য গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল মহেশখালী দ্বীপের জিরো পয়েন্ট থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করেছে। এখন এই পাইপ লাইন ব্যবহার করে ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে গ্যাস চট্টগ্রাম আসছে। মহেশখালী দ্বীপ থেকে অগভীর সমুদ্রের প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এক্সিলারেট এনার্জির এফএসআরইউ রাখা হয়েছে। ইউনিটটির ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৩৮ হাজার ইউনিট। সাগর থেকে গ্যাস স্থলভাগে আনতে সাত কিলোমিটার সাবসি পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাতারের রাসগ্যাস এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এলএনজি কাতারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ নেয়া শুরুর কথা চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছর ১৫ এলএনজির ভ্যাসেল বাংলাদেশে আসার কথা। তবে কোন কারণে ১৫ ভেসেল নেয়া সম্ভব না হলে পরবর্তী বছর তা নেয়া যাবে। এক্সিলারেট ছাড়াও আগামী বছরের শুরুতে সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনালটি আসার কথা রয়েছে। এতে সরবরাহ আরও বাড়বে। সরকার কাতার ছাড়াও ওমানের সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ চুক্তি করেছে। এর বাইরে আরও ২৬ কোম্পানির কাছ থেকে স্পট মার্কেটিং ভিত্তিতে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এলএনজি সরবরাহের শুরুতেই দেশের শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছে পেট্রোবাংলা। তবে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি দামও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বলছে এলএনজি আসায় গ্যাস খাতে ৬ হাজার কোটি টাকার সঙ্কট হবে। সরকার তিন হাজার কোটি টাকার সহায়তা দিলে তিন হাজার কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে তুলতে হবে। এজন্য ত্রিশ থেকে ৩৫ ভাগ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। তবে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহে দেরি হলে ওই বিবেচনায় গ্যাসের দাম কিছুটা কম বৃদ্ধি করলেও চলবে।
×