ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাল নিয়ে নয়ছয়

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৬ আগস্ট ২০১৮

চাল নিয়ে নয়ছয়

ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল বিতরণ কর্মসূচী গণতান্ত্রিক সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকে। অথচ প্রতিবছরই দেখা যায় কিছু লোভী জনপ্রতিনিধি গরিবের এই হক মেরে দেয়। এবারও ঈদে ভিজিএফের চাল বিতরণ কর্মসূচীতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চাল আত্মসাত করে কালোবাজারে বিক্রি, পাচারের চেষ্টা, গরিবদের না দিয়ে অন্যদের মধ্যে বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। টোকেনপ্রাপ্তরা নিজেরাই কালোবাজারীদের কাছে টোকেন বিক্রি করে দিয়েছে এমন খবরও মিলেছে। অনেক স্থানে ভিজিএফের চাল আটক করা হয়েছে। এসব নেতিবাচক সংবাদ দেশের মানুষ আর কত শুনবে? স্মরণযোগ্য, রোজার ঈদের আগেও ভিজিএফের চাল নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল বিভিন্ন অঞ্চলে। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে তার বিশদ চিত্রও উঠে এসেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিজিএফের চাল আটক, ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর অবরুদ্ধ এবং অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে সে সময়। ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে কোথাও বিক্ষুব্ধ জনতা ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখে, কোথাওবা ভিজিএফ চাল বিতরণের সময় সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও বস্তা বস্তা চাল লুট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঈদ-উল-আজহার আগে নীলফামারীতে ১১ টন ৬৩৫ কেজি পাচারকৃত চাল উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে ভিজিএফের ওই চাল উদ্ধার করা হয়। সদরের সোনারায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা চাল উদ্ধারের পর থেকে পলাতক। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গরিবদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দ ভিজিএফের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের পর অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটি ইউনিয়ন থেকে ভিজিএফের ২৫ বস্তা চাল উদ্ধার করে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। পরিতাপের বিষয়, দেশের অনেক জেলার চিত্রই অনুরূপ। স্থানীয় সরকারের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সরকারী বরাদ্দের নয়ছয় করা, অভীষ্ট জনগোষ্ঠীকে ঠিকমতো প্রাপ্য বুঝিয়ে না দেয়া, প্রাপ্য বিতরণের বিনিময়ে টাকা দাবি করা, বরাদ্দের চাল-গম খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়া- এমন অভিযোগ বিস্তর। দশকের পর দশক ধরে এ অপচর্চা চলছে। টিআর, কাবিখা, ভিজিএফ প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক কর্মসূচীর মূল বাস্তবায়ন সহযোগী স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ। মূলত ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমেই এ ধরনের কর্মসূচী ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ যথাযথ ও সুষ্ঠুভাবে কাজ করে না। সরকারী বরাদ্দের চাল-গম গিয়ে ঢোকে ব্যবসায়ীদের গুদামে। ভিজিএফের চাল নিয়ে এ ধরনের অনিয়ম রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, তাদের প্রাপ্য দেয়ার বিনিময়ে টাকা দাবি করা হয় বা পরিমাণে কম দেয়া হয়। পরিমাণে কম দেয়ার ফলে যে চাল জমা হয়, তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। গরিবের হক মারার এই সর্বনাশা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। জনপ্রতিনিধির কাজ হচ্ছে জনতাকে সেবা প্রদান, তাদের হক আত্মসাত করা নয়। তাই এমন অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ঘৃণাই প্রাপ্য। কোন করুণা নয়, শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
×