ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩১ আগস্টের মধ্যে এক লাখ অবৈধ কর্মীকে মালয়েশিয়া ছাড়তে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৬ আগস্ট ২০১৮

  ৩১ আগস্টের মধ্যে এক লাখ অবৈধ কর্মীকে মালয়েশিয়া ছাড়তে হবে

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়া থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বিভিন্ন দেশের এক লাখেরও বেশি অবৈধ কর্মীকে নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে। স্বেচ্ছায় তারা না ফিরলে জেল জরিমানা করা হবে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণায় অবৈধ কর্মীদের আত্মসমর্পণ করে নিজ খরচে স্ব স্ব দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়েছে। দেশে ফেরার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ হাজার কর্মী ‘আউট’ সংগ্রহ করেছেন। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে কোন কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে না হয়। এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও দফা দফায় চিঠি পাঠানো হচ্ছে। গত এক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে গঠিত ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির’ কোন বৈঠক হচ্ছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতি মাসেই বৈঠকের তারিখ চেয়ে চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বৈঠকের বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখানো হয়নি। মন্ত্রণালয়ের চিঠিরও কোন জবাবও তারা দেয়নি। দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরও মন্ত্রণালয়ের কোন চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি। মালয়েশিয়া থেকে সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকারের চালু করা ‘মেগা থ্রি’ স্কিমের আওতাতেও যে কেউ ইমিগ্রেশনে ৪ শ’ রিঙ্গিত জমা দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন। বহু কর্মীর এই পরিমাণ টাকা দেয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে অবৈধ কর্মীরা নানাভাবে দেশটিতে লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করছেন। তারা পুলিশের ভয়ে রাতে জঙ্গলে থাকছেন। গত ৩০ জুন বৈধ হওয়ার ‘রি-হায়ারিং’ কর্মসূচীর শেষ দিন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১০ হাজারের বেশি অবৈধ কর্মীকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। আটক অভিযান চলমান রয়েছে। আটক কৃতদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বাংলাদেশের দুই থেকে আড়াই লাখ কর্মীকে দেশে ফিরতে আসতে হতে পারে। ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুকে সেরি মোস্তাফার আলী দেশটির সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসী আটকের সংখ্যা ইন্দোনেশিয়ার বেশি। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। ইমিগ্রেশন বিভাগ দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ১ জুলাই থেকে ‘মেগা-থ্রি’ নামে অভিযান চলছে। মেগা থ্রি অভিযানে বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজারের বেশি কর্মী আটক হয়েছে। অভিবাসন খাতে সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে আটক অভিযান কতদিন চলবে তা তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। রি-হায়ারিং গ্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে মেগা-থ্রি নামে এই অভিযান শুরু করা হয়। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পথে কয়েক লাখ নানা দেশের কয়েক লাখ নাগরিক প্রবেশ করেছে। অবৈধভাবে আর যেন কেউ দেশটিতে ঢুকতে না পারে তার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে ব্যাপকহারে বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। ওই দুই বছরে দেশটিতে পাঠানো হয় ৪ লাখ ৪ হাজার ৯৬৩ জন কর্মী। এর পর থেকেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ধস নামতে শুরু করে। ২০০৯ সাল থেকে অন্যতম শ্রমবাজারটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারী পর্যায়ে (জি টু জি প্লাস) আবারও বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে দেশটি। মালয়েশিয়া সরকার পাঁচটি খাতে সরকারী- বেসরকারী পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হয়। দু দেশের মধ্যে এ বিষয়ক চুক্তি হয় ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু চুক্তির পরদিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। কয়েক মাস পর বিদেশী কর্মী না নেয়ার ঘোষণা প্রত্যাহার হলে জি টু জি প্লাস চুক্তির আওতায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আবারও সামনে আসে। সে সময় প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার, ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশনসহ মোট পাঁচটি খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। জানা গেছে, অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিদেশী কর্মীদের বৈধ করতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং প্রকল্প শুরু করে দেশটির সরকার। কর্মীরা যাতে এই সুযোগ নিয়ে বৈধ হতে পারেন, সেজন্য কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানোর পর এ বছরের ৩০ জুন করা হয়েছিল। রি-হায়ারিং পদ্ধতিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম ধাপ হলো নিজ দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি ধাপ শেষে পাওয়া যায় বৈধতা। এই বৈধতা পেতে একজন কর্মীকে বহু কাঠ খড় পোড়াতে হয়। দালাল ও হাইকমিশনে বড় অঙ্কের টাকা দিয়েই বৈধতা পাওয়া যায়। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশী কর্মীদের অভিযোগ, রি-হায়ারিং প্রকল্পের সুযোগ নিতে দূতাবাসে নতুন পাসপোর্টের আবেদন করার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও তা হাতে পাননি অনেক বাংলাদেশী কর্মী। আবার পাসপোর্ট থাকলেও দালালচক্রের প্রতারণায়ও রি-হায়ারিংয়ের সুযোগ নিতে পারেননি অনেকই। এ অবস্থায় বর্তমানে দেশটির পুলিশ বাহিনীর হাতে কয়েক হাজার কর্মী প্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার অভিযান চলমান রয়েছে। হাজার হাজার কর্মী গ্রেফতার এড়াতে রাতের বেলায় জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন।
×