ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়ায় ‘পিস মিশন ২০১৮’-এর অন্যতম লক্ষ্য সন্ত্রাস দমন

এক মহড়ায় ভারত ও পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৬ আগস্ট ২০১৮

এক মহড়ায় ভারত ও পাকিস্তান

ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যরা প্রথমবারের মতো একটি বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। দুটি দেশ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ও কাশ্মীর সীমান্তের দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় নিয়মিত ঘটনা হলেও প্রথমবারের মতো তারা এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া। রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলের চেবারকুলে ‘পিস মিশন ২০১৮’ মহড়া শুরু হয়েছে। ২৪ আগস্ট শুরু হওয়া এ মহড়া চলবে ২৯ তারিখ পর্যন্ত। এতে ভারত, পাকিস্তান ও চীন ছাড়াও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) অন্তর্ভুক্ত ৮টি দেশ অংশ নেবে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর উদ্দেশে ২০০১ সালে সাংহাইয়ে এসসিও জোট গঠিত হয়েছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আমন আনন্দ বলেছেন, এই মহড়া শহর এলাকায় এসসিওভুক্ত দেশের সন্ত্রাস দমন অভিযানের সক্ষমতা বাড়াবে। বহুজাতিক ও যৌথ পরিবেশে তাদের সক্ষমতার আরও বৃদ্ধি ঘটবে। পেশাদারি যোগাযোগ, পারস্পরিক বোঝাপড়া, যৌথ কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রতিষ্ঠা এবং মক ড্রিলের মাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করার মতো বিষয়গুলো মহড়ায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এবারের মহড়া ১ হাজার ৭শ’ রুশ সৈন্য ও ৭শ’ চীনা সৈন্য অংশ নেবে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাজপুত রেজিমেন্টের ২শ’ সৈন্য অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। চীন, কাজখস্তান, কিরগিস্তান, রাশিয়া ও তাজিকিস্তান ছিল এসসিওর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। পরে এতে ভারত, পাকিস্তান ও উজবেকিস্তান যোগ দিয়েছে। জোটের মোট সদস্য সংখ্যা এখন আট। এছাড়া চারটি দেশকে ‘পর্যবেক্ষক’ ও ছয়টি দেশকে ‘ডায়লগ পার্টনারের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত আছে এমন কোন বহুজাতিক মহড়ায় ভারত এর আগে কখনও অংশ নেয়নি। তবে জাতিসংঘ মিশন ও অপারেশনের আওতায় দেশ দুটির সেনাবাহিনীর একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভারত গত বছর জুনে এসসিওর পূর্ণ সদস্য হয়েছে। এটি জোটের দ্বিবার্ষিক মহড়া। রুশ সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন মহড়াটি পরিচালনা করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ফায়ারিং, হেলিবোর্ন অপারেশন, কম্ব্যাট কন্ডিশনিং, ট্যাক্টিক্যাল অপারেশন এবং হাউস ইন্টারভেনশন ড্রিলে অংশ নেবে বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মহড়ায় ভারত ও পাকিস্তানের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় এসসিওর সন্ত্রাস দমন মিশন সম্প্রসারিত হয়েছে বলে মনে করেন চায়না ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের কাউন্টার টেররিজম এক্সপার্ট লি উই। তিনি মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস দমনের বিষয়টি অনেক জটিল। কারণ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ এখানে সক্রিয় রয়েছে। চায়নিজ এ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের প্রফেসর সান ঝুংঝি মনে করেন,‘পিস মিশন ২০১৮’ এসসিওভুক্ত দেশের মধ্যে পারস্পরিক সামরিক ও রাজনৈতিক আস্থা বাড়াবে, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। দুটি দেশের জন্য একসঙ্গে বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে এই মহড়া। কারণ দুটি দেশ প্রায়ই নিয়মিত সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। এই মহড়া তাদের যে শুধু একসঙ্গে আসার সুযোগ করে দিয়েছে তা-ই নয়, এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সুযোগও বেড়েছে। তিনি মনে করেন আফগানিস্তানকে এসসিওর পূর্ণ সদস্য করা উচিত। বর্তমানে আফগানিস্তান এসসিওর পর্যবেক্ষক সদস্য। লি’র মতে আফগানিস্তানকে পূর্ণ সদস্য করা হলে দেশটির সন্ত্রাস দমন সক্ষমতা বাড়বে। চীন, পাকিস্তান, রাশিয়া ও ভারত - ইউরেশিয়া অঞ্চলের চার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তি। পিস মিশন ২০১৮ দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার এক দুর্লভ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।
×